সোমবার, ২৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

মাছ কাটার সেরা গল্প

আফরীন সুমু

মাছ কাটার সেরা গল্প

স্বামী বাজার থেকে ফোন করে বলল, ‘একটা বিশাল রুই মাছ লাফাচ্ছে, কী করি বল তো?’ বললাম, ‘রুই মাছ লাফাচ্ছে লাফাক। তাতে তোমার কী?’ ‘না মানে, ভাবছি মাছটা বাসায় নিয়ে আসি। কী বল?’ আমি অমত করলাম না। বললাম, ‘ঠিক আছে। মাছটা যদি লাফিয়ে লাফিয়ে তোমার পেছন পেছন আসতে চায় তবে নিয়ে এসো।’ স্বামী বেচারা খুশি হয়ে ফোন রেখে দিল। আমি মসলা রেডি করতে রান্না ঘরে চলে গেলাম। এলে চট করে গরম গরম কয়েক পিস মাছ ভেজে দেব। মাছ নিয়ে বাসায় এলো সে। মাছ দেখে আমার তো মাথায় হাত! বিশাল এক জ্যান্ত রুই নিয়ে হাজির। এত বড় মাছ কাটবে কে? মাছটাও যেন একটু পর পর কানকো ফুলিয়ে আর লেজ দিয়ে বাড়ি মেরে জানান দিচ্ছে, খেতে চেয়েছ না মাছ, এখন বোঝ ঠ্যালা! জিজ্ঞেস করলাম, ‘কেটে আনলে না কেন?’ বলল, ‘রাত বেশি হয়ে গেছে। মাছ কাটার লোকজন চলে গেছে।’ আমি তির্যক দৃষ্টিতে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি জানো আমি এত বড় মাছ কাটতে পারব না, তাহলে এই রাত ১০টার সময় কী মনে করে মাছটা কিনলে?’ সে আমতা আমতা করে বলল, ‘মাছটা একদম তাজা আর সস্তায় দিয়ে দিল তাই...।’ এবার বোঝা গেল ঘটনা। সে বরাবরই সস্তার প্রতি দুর্বল। সস্তায় তাজা মাছ দেখে লোভ সামলাতে পারেনি। কিন্তু তাই বলে তাজা মাছ দেখে আবেগে গলে গিয়ে এই রাতে মাছ কাটতে বসব, তা হবে না। তাহলে এ ঘটনা আবার ঘটবে, আবার ঘটবে, ঘটতেই থাকবে। কোনো দিন দেখা যাবে সস্তায় পেয়ে একটা তিমি মাছ নিয়ে চলে এসেছে। এটা হতে দেওয়া যাবে না। সুতরাং আমি ভাত বসিয়ে, মুখে ফেসপ্যাক মেখে, দু সøাইস শসা চোখে দিয়ে সটান শুয়ে পড়লাম। স্বামী বেচারা বেশ বুদ্ধিমান। এই মাছ তাকেই কাটতে হবে বুঝতে পেরে কথা না বাড়িয়ে বঁটি নিয়ে বসে গেল। কিন্তু আমার অতটুকু বঁটিতে কী আর অত বড় মাছ ধরে? আমি মাঝে মাঝে চোখ থেকে শসা তুলে দেখি। আঁশ তুলতেই ওর দফারফা। ছুরি দিয়ে, বঁটি দিয়ে, হাত দিয়ে, খামচে, চিমটে বহু কসরত করে আঁশগুলো পরিষ্কার করল। এরপর হাত ধুয়ে এসে হাসি হাসি মুখ করে বলল, ‘নাও, তোমার মাছ কেটে দিলাম।’ আমি চোখ থেকে শসা সরিয়ে বললাম, ‘কেবল তো আঁশ পরিষ্কার হলো। এবার পেট পরিষ্কার করতে হবে, মাথা আলাদা করতে হবে, পিস করতে হবে, সারা ঘরে আঁশ ছিটিয়েছ সেগুলো জড়ো করতে হবে, ময়লা তুলে জায়গামতো রেখে ঘর পরিষ্কার করতে হবে। তারপর মাছ প্যাকেট করে ফ্রিজে রাখতে হবে।’ কথাগুলো একটানে বলে পুনরায় শসা দুটো চোখের ওপর দিয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে শুয়ে পড়লাম। ও পেঁচার মতো মুখ করে আবার মাছ নিয়ে বসল। তার মুখ দেখে খারাপ লাগছে। কিন্তু আবেগকে প্রশ্রয় দেওয়া ঠিক হবে না। যতক্ষণ মাছ কাটল মনে হচ্ছিল কুস্তি করছে। অনেক ধস্তাধস্তির পর কোনো রকমে মাছ কাটা শেষ হলো। মাছের পিস দেখে মনে হচ্ছিল একেক পিস একেক দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। এ নিয়ে আর কিছু বললাম না। এত কষ্ট করে মাছ কাটতে দেখে মায়াই লাগল। তাই মাছগুলো নিজেই প্যাকেট করে রাখলাম। এসে দেখি ও হাত নাকের সামনে নিয়ে শুঁকছে আর চোখ মুখ কুঁচকে ফেলছে। কিছুক্ষণ পর জিজ্ঞেস করল, ‘হাতে এরকম উৎকট গন্ধ হচ্ছে কেন গো? আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘মাছ কাটলে ওরকম একটু হয়।’ সে বলল, ‘অনেকবার ধুয়েছি, যাচ্ছে না তো।’ ‘অপেক্ষা কর দু-এক ঘণ্টা পরে চলে যাবে।’ আমি আড়ালে হাসি। যাক এ ঘটনা আর ঘটবে না তাহলে। দুই সপ্তাহ পর সে আবার বাজার থেকে ফোন করল, ‘হ্যালো শুনছ? তুমি লিস্টে মাছের কথা লিখেছ। আজ বাজারে মাছ কাটার লোক নেই। মাছ আরেক দিন নেব, কেমন?” আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর