সোমবার, ২ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

আবার এসেছি ফিরে

ইকবাল খন্দকার

আমার এক বড় ভাইয়ের ফোনে সকাল শুরু হলো। জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন। বড় ভাই কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, কেমন যে আছি বলা মুশকিল। একবার মনে হচ্ছে শ্বাসকষ্টে ভুগছি, আবার মনে হচ্ছে, না, কোনো সমস্যা নেই। ঠিকই আছি। আমি উদ্বেগ প্রকাশ করলাম, বলেন কী ভাই! এ ধরনের সমস্যা হলে তো এখনই ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমার উদ্বেগ দেখে তিনি এবার হাসলেন। আর বললেন, আরে না, এত টেনশন করার মতো কিছু হয়নি। আমার সমস্যাটা প্রথমে ধরতে না পারলেও একটু পরে ঠিকই ধরে ফেলেছিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে টিভি বন্ধ করে দিয়েছি। ব্যস, শ্বাসকষ্ট স্থায়ীভাবে ভালো হয়ে গেছে। আমি অবাক হয়ে বললাম, টিভি বন্ধ করার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট ভালো হয়ে যাওয়ার সম্পর্ক কী? বড় ভাই বললেন, কী সম্পর্ক, সেটা এখন বলে বোঝানো যাবে না। যদি দেখতি ট্রাকে কীভাবে গাদাগাদি করে মানুষ ঢাকায় ফিরছে তাহলে তোরও দম বন্ধ হয়ে আসত, শ্বাসকষ্ট হতো। আমি এবার পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললাম, এখন থেকে এ ধরনের দৃশ্য দেখানোর সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলেই আপনার বাসার ডিসলাইন কেটে দেওয়া হবে। ঠিক আছে? বড় ভাই কোনো উত্তর দিলেন না। আর আমি এটা চিন্তা করতে করতে ফোন রাখলাম, টিভি বন্ধ থাকলে না হয় মানুষের গাদাগাদির দৃশ্য দেখা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে, কিন্তু বাসার বাইরে বের হলেই যখন দেখা যাবে গ্রাম থেকে ফিরে আসা মানুষের ভিড়ে রাস্তা টইটম্বুর, সেই দৃশ্য দেখা থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? আমি এ চিন্তা করতে করতে যখন ফেসবুক খুলে বসলাম, তখন এক ছোট ভাই মেসেঞ্জারে আলাপ জুড়ে দিল। কথায় কথায় সে বলল, কলকারখানা খুলে দেওয়ায় যে পরিমাণ মানুষ ঢাকায় এসেছে, আর বাইরে মানুষের যে পরিমাণ ভিড় তা দেখে তার মনে এক ধরনের সন্দেহের জন্ম নিয়েছে। বললাম, কী সন্দেহ করছিস? বলল, যত মানুষ ঢাকার বাইরে গিয়েছিল তার চেয়ে বেশি মানুষ ঢাকায় প্রবেশ করেছে। আমি বললাম, এ মানুষ কারা? ছোট ভাই খানিক লজ্জা পেয়ে বলল, ভাই, আপনাকে বলা হয়নি। গত সপ্তাহে বিয়ে করছি। বউকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফিরলাম। তখনই মাথায় এলো আমার মতো অনেকেই হয়তো বিয়ে-টিয়ে করে...।

আমি ছোট ভাইয়ের সঙ্গে আলাপ বন্ধ করে দিয়ে অন্য কাজে মন দেওয়ার চেষ্টা করলাম। এবার আমার এক বন্ধুর ফোন। গলা শুনেই বুঝলাম সে খুব পেরেশানিতে আছে। বন্ধু বলল, পুরো শরীর ব্যথা। কথা সেটা না। হুট করেই ঢাকায় এলাম। হাত খালি। কিছু টাকা বিকাশ কর। আমি বললাম, টাকার কথা পরে। পুরো শরীর ব্যথা করছে মানে? আরে তাড়াতাড়ি করোনা টেস্ট করা। বন্ধু বলল, টেনশন করিস না। শরীর ব্যথা মানেই যে করোনা এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমরা যারা অর্ধেক রাস্তা হেঁটে এসেছি, আর বাকি অর্ধেক রাস্তা বাদুড়ের মতো বাসের ডান্ডায় ঝুলে এসেছি তাদের শরীর কয়দিন হালকা থেকে ভারী ব্যথা করতেই পারে। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, কল-কারখানা খুলে দেওয়ায় শ্রমিকরা ঢাকায় ফিরে এসেছে, এতে সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। এমন আশঙ্কায় অনেকেই কর্তৃপক্ষকে দোষারোপ করছেন কেন, কলকারখানা খুলে দেওয়া হলো। তবে আমি কিন্তু কাউকে দোষারোপ করছি না। বরং কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি কলকারখানা খুলে দেওয়ার জন্য। কারণ, কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের জন্যই আমি বউকে অনেক দিন পর ফোন দেওয়ার সাহস পেয়েছি। আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললাম, বুঝলাম না ঠিক ব্যাপারটা। কলকারখানা খুলে দেওয়ার সঙ্গে বউকে ফোন দেওয়ার সাহস পাওয়ার সম্পর্ক কী? প্রতিবেশী বললেন, সম্পর্ক তো নেই, ছুতা আরকি। আমার বউ রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিল। আর বলেছিল, ভুলেও যেন তাকে ‘কল’ না করি। ব্যস, আমি ‘কল’ করা বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যেই বলল ‘কলকারখানা’ খোলা, সঙ্গে সঙ্গে বউকে ‘কল’ করে ফেললাম। বললাম, কর্তৃপক্ষই যেখানে ‘কলকারখানা’ খুলে দিয়েছে, সেখানে আমার মোবাইলে ‘কল’ করা বন্ধ থাকবে কেন? তবে ভাইসাহেব, একটা ভয় কিন্তু পাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ কিন্তু কলও খুলেছে, কারখানাও খুলেছে। এ চান্সে আমি না হয় ‘কল’ করলাম, এখন বউ বাসায় ফিরে কোন ‘কারখানা’ মানে কান্ডকারখানা করে, সেটাই দেখার বিষয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর