সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জুলেখার লাইভ বুদ্ধি

রাফিউজ্জামান সিফাত

জুলেখার লাইভ বুদ্ধি

জুলেখা ছাড়া তার সব বান্ধবী ফেসবুকে লাইভ করে। তারও ফেসবুকে লাইভ করতে ইচ্ছা। ফেসবুক লাইভের জন্য কিছু পূর্ব প্রস্তুতির প্রয়োজন। যেমন ভালো ক্যামেরাওয়ালা মোবাইল, রিং লাইট, প্রসাধনী, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লাইভের টপিকস। বাসায় কান্নাকাটি করে, দুই বেলা ভাত না খেয়ে বাবার কাছ থেকে সে একটি মোবাইল ও একটি রিং লাইট আদায় করেছে। জুলেখার চার বান্ধবীর ভিতর দুজন অনলাইনে ব্যবসা করে। ব্যবসার খাতিরে তাদের লাইভে আসতে হয়। আরেকজন ফুড রিভিউ দেয়। বাসার ডাল রান্না থেকে শুরু করে, ফুটপাথের বাদাম বিক্রি। এমনকি বান্ধবীরা মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার আগের দিন থেকে ফেসবুকে লাইভ বাটন অন করে রাখে। আরেকজন বান্ধবী ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য লাইভ করে। বাসা থেকে গলির মাথার টেইলার্সে সালোয়ার-কামিজের মাপ দিতে গেলেও ফেসবুকে একটা লাইভ করে নাম দেয়, ‘ট্রাভেল গাইড’। তারা প্রত্যেকে এক একটা টপিকস কিংবা বিষয় বেছে ফেসবুক লাইভ করে কিন্তু জুলেখা লাইভ করার মতো বিষয় খুঁজে পায় না। ব্যতিক্রমী একটা বিষয় তার চাই যা অন্যরা করেনি। বান্ধবীরা পরামর্শ দিল, ‘তুই যেটা পছন্দ করিস, সেটাই লাইভ কর।’ জুলেখার ঘুমানো পছন্দ। সে ভাবল তাহলে ঘুমের ভিডিও সে ফেসবুকে লাইভ করবে। রাতে শোয়ার আয়োজন থেকে শুরু করে সকালে ঘুম ভাঙার পুরো সময় সে ফেসবুক লাইভে থাকবে। কিন্তু সমস্যা হলো, জুলেখার সঙ্গে জুলেখার দাদিও ঘুমান। তাই ঘুম লাইভের চিন্তা সে বাদ দিল। বান্ধবীরা শুনে বলল, তাহলে তোর সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় নিয়ে লাইভ কর। জুলেখা ভেবে দেখল তার সবচেয়ে অপছন্দ অঙ্ক করা। অঙ্ক বই দেখলেই তার মাথা ঘুরায়। পরীক্ষার হলে দুই-তিনবার অঙ্ক প্রশ্ন হাতে সে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল। মুখে পানি ছিটানোর পর জ্ঞান ফিরেছে। লাইভে অঙ্ক করতে বসে মাথা ঘুরে পড়ে গেলে একটা কেলেঙ্কারি কান্ড হবে। তাই এই আইডিয়াও তাকে বাদ দিতে হলো। বিষয়ের অভাবে জুলেখা লাইভ করতে পারছে না। নতুন কেনা মোবাইলে সে বান্ধবীদের লাইভ দেখে। লাইক কমেন্ট ভিউ গুনে, আর সারা দিন মনমরা হয়ে বসে থাকে। জুলেখার মন খারাপ দেখে দাদি জুলেখার বাবাকে আড়ালে ডেকে বললেন, ‘নাতনির বয়স হয়েছে, অহনো বিয়ে হয় না তাই নাতনির মন খারাপ, বিয়ে দিলেই মন ভালা হইয়া যাইব।’ জুলেখার বাবার কাছে কয়েকজন পাত্রের খবর ছিল। এদের ভিতর থেকে একজনকে বাছাই করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে তিনি জুলেখার বিয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করে ফেললেন। বিয়েতে জুলেখাও রাজি। ফেসবুকে বহুদিন নতুন ছবি আপলোড করা হচ্ছে না। বিয়ের সুযোগে নতুন ছবি তোলা যাবে। তাছাড়া ছোটবেলা থেকে জুলেখার বউ সাজার শখ, সেই শখটাও পূরণ হবে। এসব ভাবতে ভাবতে আচমকা জুলেখার মনে হলো, বিয়ের পুরো কার্যক্রম ফেসবুকে লাইভ করলে কেমন হয়! আগে কেউ এমনটা করেছে বলে সে শোনেনি। ফেসবুক লাইভে নিজের বিয়ের পুরো অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। বউ সেজে জুলেখা বসে আছে আর লাখ লাখ মানুষ ফেসবুকে লাইভে বিয়ের অনুষ্ঠান উপভোগ করছে! ভাবতেই জুলেখার দারুণ খুশি খুশি লাগল। বিয়েতে ফেসবুক লাইভের বুদ্ধিতে আপন মনেই সে হেসে উঠল। দূরে একা একা জুলেখাকে হাসতে দেখে দাদি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, ‘আমি আগেই টের পাইছিলাম, নাতনির বিয়ের বয়স হইছে!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর