সোমবার, ৯ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

দেলু মিয়ার কান্ড-কারখানা

আফরীন

দেলু মিয়ার কান্ড-কারখানা

বাসায় ঢোকার সময় অন্তুর সঙ্গে দেখা। বিধ্বস্ত অবস্থায় বোঁচকা-বুচকি নিয়ে সিঁড়িতে বসে আছে। সাংঘাতিক রেগে আছে। মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। দেলু মিয়া কি তাহলে বাসায় নেই? বাসা ফাঁকা রেখে কোথাও যায়নি তো? ‘অন্তু কি হয়েছে? তুমি এখানে কেন?’ ‘তোমার হেল্পিং হ্যান্ড আমাকে তিন ঘণ্টা ধরে এখানে বসিয়ে রেখেছে। কোনোভাবেই ঢুকতে দিচ্ছে না। ফোনে চার্জ নেই, ফোনটা বন্ধ হয়ে আছে।’ আমি ব্যাগগুলো তুলে নিলাম। ‘তুমি দারোয়ান চাচাকে ডাকতে।’ ও হাত-পা ঝেড়ে উঠতে উঠতে বলল, ‘সে চেষ্টা করিনি বলছ? ওই ছেলেটা বলল, আমি নাকি দারোয়ানের সঙ্গে মিলে ডাকাতি করতে এসেছি। কি অদ্ভুত কথাবার্তা!’ আমি হেসে ফেললাম। ‘ও তোমাকে চেনে না। যাওয়ার আগে আমিই ওকে বলে গিয়েছিলাম অপরিচিত কেউ এলে দরজা খুলতে না।’ ‘তোমার আদেশ শিরোধার্য, হুহ্।’ আমাকে দেখে দেলু মিয়া দরজা খুলল। অন্তু আর সে, দুজন দুজনের দিকে ভ্রƒ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। দেলুকে খাবার রেডি করতে বলে আমি অন্তুকে টেনে ভিতরে নিয়ে এলাম। দেলু কিচেনে না গিয়ে পিছন পিছন আসছে। ‘আপা, ও আপা, আপনে এই ব্যাটারে চিনেন?’ ‘না চিনলে ঘরে ঢুকতে দিচ্ছি কেন? ভালো করে শুনে রাখ। আমাকে যেমন আপা ডাকিস, তেমনি উনি তোর ভাইয়া, বুঝলি?’ ‘দেলু মাথা চুলকে বলল, বুঝছি, দুলাভাই।’ ‘হু, দুলাভাই। দুলাভাই বলতে হবে না শুধু ভাইয়া বলবি। যা এখন, খাবার রেডি কর।’ দেলু ঘাড় কাত করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে চলে গেল। অন্তু পড়ল আমাকে নিয়ে। ‘এই চিড়িয়া তুমি কোত্থেকে জোগাড় করেছ, বলত।’ ‘মা পাঠিয়েছে।’ ‘যৌতুক?’ ‘নাহ। মোটরসাইকেল, টেলিভিশন, খাট-পালঙ্ক সব তো নিজেই কিনেছ। দেওয়ার মতো আর কিছু খুঁজে না পেয়ে একে পাঠিয়ে দিল মনে হয়।’ ‘এর কাজটা কি এখানে?’ ‘ওই তোমাকে তিন ঘণ্টা সিঁড়িতে বসিয়ে রাখা।’ ‘আমি নেহায়েত ভালো মানুষ বলে। তুমি হলে কি করতে, ভাব। প্রথমে আমাকে ধুয়ে ফেলতে। তারপর আমার চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে।’ এর মধ্যে দেলু এসে দরজায় দাঁড়াল। ‘আপা, লিমু কি লম্বা লম্বা নাকি চাক্কা চাক্কা?’ ‘তোর কাটতে হবে না। আমি আসছি।’ অন্তু ভ্রƒ কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করল ও কি প্রশ্ন করেছে আর আমি কি উত্তর দিলাম। আমি ওর কাঁধে হাত রেখে নামতে নামতে বললাম, ‘ও লেবুকে লিমু বলে। শরবতে খাবার জন্য মাঝে মাঝে লেবু গোল করে কাটি। আমি কিচেনে গেলাম তুমি চট করে ফ্রেশ হয়ে টেবিলে চলে এসো।’

টেবিল গোছগাছ করছি। কিছুক্ষণ পরেই শুনি হৈ চৈ। অন্তু চিৎকার করছে। আবার কি হলো? দৌড়ে গেলাম। গিয়ে দেখি, অন্তু রেগে আগুন। আর দেলু মিয়া হাতের মুঠোর মধ্যে কি যেন গোনার চেষ্টা করছে। ‘ওর কান্ড দেখেছ? বললাম হালকা করে চুলগুলো টেনে দিতে। ও শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে এক খাবলা চুল তুলে নিয়েছে। আবার গুনতে বলেছি বলে গুনছে, দেখো দেখো।’ দেলু মিয়াও প্রতিবাদ করে উঠল, ‘আপা আমি আস্তেই দিছিলাম ভাইজান কইলো আরেকটু জোরে, তারপর আরেকটু জোরে, তারপর আরেকটু...। হেরপর এক চিক্কুরের লগে ফাল দিয়া উঠল।’ আমি ঠিক কি বলব, আর কাকে বলব ভেবে পেলাম না।

সর্বশেষ খবর