সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

সবাই গেছে ঘুরতে

ইকবাল খন্দকার

সবাই গেছে ঘুরতে

‘‘পরিবারের লোকজন ঘুরে বেড়ানোর পাশাপাশি আমার জন্য বউও দেখছে’’

আমার এক বন্ধু কিছুদিন আগে অদ্ভুত এক নিয়ম বানাল। নিয়মটা হচ্ছে, তাকে মোবাইলে ফোন দেওয়া যাবে না। টিঅ্যান্ডটিতে দিতে হবে। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, এই নিয়ম বানানোর কারণ কী? বন্ধু জবাব দিয়েছিল, কারণ খুবই সিম্পল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারা দিন বাসায় থাকি। আর বাসায় থাকা মানেই ল্যান্ডফোনের কাছাকাছি থাকা। তাহলে কী দরকার মোবাইলের টাকা নষ্ট করা? অবশ্য আরেকটা কারণ আছে। সারা দিন বাসায় থাকলে মোবাইলে গেম খেলায় ব্যস্ত থাকি। তো খেলার মাঝখানে ফোন দিলে ডিস্টার্ব হয় না? এই জন্য টিঅ্যান্ডটিতে ফোন দিলে সুবিধা। এক হাতে মোবাইলে গেম খেললাম, আরেক হাতে রিসিভার কানে লাগিয়ে কথা বললাম। গেম খেলায় কোনো বিঘ্ন ঘটল না। আমি বন্ধুর কথার পরিপ্রেক্ষিতে তখন কিছু বলিনি। কিন্তু লকডাউন শেষ হয়ে যাওয়ার পরও যখন তাকে মোবাইলে পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন বললাম, কীরে, এখনো কি মোবাইল কেবল গেম খেলার কাজে ব্যবহার করিস নাকি? ফোন দিলে ধরিস না কেন? বন্ধু বলল, আসলে হয়েছে কী, এখন সারা দিন আমি বাইরে থাকি। আমি বললাম, আরে বেটা, বাইরে থাকলে কি ফোন ধরা যায় না? বন্ধু বলল, আমি আসলে আনন্দ-ভ্রমণে এসেছি। বলতে গেলে সারা দিনই সুইমিংপুলে গোসল করছি। এবার তুই-ই বল, সুইমিংপুলে কি মোবাইল নিয়ে নামা যায়? আমি তো আর প্লাস্টিকের মোবাইল চালাই না, তাই না? বন্ধুর কথায় আমি কিছুটা আহত হয়ে বললাম, করোনা এখনো সেভাবে কমলই না, আর তুই আনন্দ-ভ্রমণ শুরু করে দিলি? ঘরে থাক, ঘরে থাক। ঘরে থাকার বিকল্প নেই। বন্ধু বলল, ঘরে থাকার উপায় নেই রে পাগলা। কারণ, কেউ বাসায় নেই। সবাই এখানে ওখানে ঘুরতে গেছে। বুঝতেই পারছিস, বাসায় রান্না হয় না। আমি বাসায় থাকতে গিয়ে না খেয়ে মরব নাকি? বন্ধুর কথা সত্য প্রমাণিত হলো আমার এক প্রতিবেশীর কথার মধ্য দিয়ে। কারণ, তিনিও বললেন তার বাসায়ও কেউ নেই। লকডাউন ছাড়তেই সবাই বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে চলে গেছে। আমি বললাম, এটা কোনো কথা? স্বাস্থ্যবিধির কথা ভাববে না? প্রতিবেশী বললেন, স্বাস্থ্যবিধির কথা ভেবেই তো সবাই একসঙ্গে দল বেঁধে গেছে। আমি আকাশ থেকে পড়লাম, বলেন কী! প্রতিবেশী হেসে বললেন, জি ভাই সাহেব, ঠিকই বলেছি। দু-একজন গেলে গাড়িতে উঠতে হতো অজানা-অচেনা যাত্রীদের সঙ্গে। এতে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকি থাকত। কিন্তু সবাই মিলে যাওয়ার কারণে গাড়িতে আর অজানা-অচেনা যাত্রী ওঠার সুযোগ ছিল না। পুরো গাড়িতে কেবল আমার পরিবারের লোকই ছিল। বুঝতেই পারছেন, সুবিধাটা কোন জায়গায়। পরিবারে সদস্য সংখ্যা বেশি হওয়ায় ভালোই হয়েছে, নাকি বলেন ভাই সাহেব? আমার এক ছোটভাই বলল, আমি ছাড়া সবাই বেড়াতে চলে গেছে। তবে যা বুঝতে পারছি, আমারও মনে হয় বেড়ানোর ব্যবস্থা হয়ে যাবে শিগগিরই। আমি বললাম, বুঝলাম না তোর কথা। ছোটভাই বলল, আমার বড়ভাইরা সবাই বিবাহিত জানেন তো! তো তারা সবাই বেড়াতে গেছে শ্বশুরবাড়িতে। নিতান্তই আমার শ্বশুরবাড়ি নেই বলে আমি কোথাও যেতে পারিনি। আমি বললাম, বুঝলাম তোর কথা। কিন্তু এই যে বললি তোরও বেড়ানোর ব্যবস্থা হয়ে যাচ্ছে, তার মানে কী... ছোটভাই বলল, একদম ঠিক ধরেছেন। তারা বেড়ানোর পাশাপাশি আমার জন্য বউও দেখছে। লকডাউনের কারণে ম্যালাদিন তারা বিয়ে খায় না তো! আমার এক বড়ভাই কবিতা আবৃত্তির মতো করে বললেন, বুঝলি, জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। আমি বললাম, তা তো অবশ্যই। কিন্তু হঠাৎ এই বাণী দিলেন? বড়ভাই বললেন, লকডাউন ছাড়ার পর থেকেই জীবে প্রেম করে যাচ্ছি তো! তাই কথাটা ঠোঁটের আগায় চলে এলো। আমি বললাম, জীবে প্রেম করার সঙ্গে লকডাউনের কী সম্পর্ক? বড়ভাই বললেন, খুবই নিগূঢ় সম্পর্ক। তাহলে ভেঙেই বলি। লকডাউন ছাড়ার পরপরই তোর ভাবি চলে গেছে বেড়াতে। কিন্তু আমাকে নেয়নি। কেন নেয়নি জানিস? কারণ, তার আদরের বিড়ালটা বাসায় একা। ব্যস, তোর ভাবি যখন এখানে ওখানে ঘুরে বেড়ায়, আমি তখন বিড়ালকে ভাত মেখে দিই আর আবৃত্তি করি, জীবে প্রেম করে যেইজন...।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর