সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

ভূতের নয় তবু ভুতুড়ে গল্প

তানভীর আহমেদ

ভূতের নয় তবু ভুতুড়ে গল্প

নতুন বিয়ে করেছি। কিন্তু বউকে ঘরে তুলে আনা হয়নি। সে রয়ে গেছে বাপের বাড়ি। ঢাকঢোল পিটিয়ে তাকে ঘরে তুলে আনার নীলনকশার কারণে এই করুণ দশা। নতুন স্ত্রী, তাকে না দেখে থাকা দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। একটা গান আছে, ‘আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, তোমার মুখের কথা না শুনিলে, পরান আমার রয় না পরানে...’। আমার ধারণা, বিয়ে করেও বউকে ঘরে তুলে আনতে না পারায় এমন গান লেখা সম্ভব হয়েছে। আমারও পরান যায় যায় অবস্থা। সে খবর শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে গেছে। নতুন জামাইয়ের প্রাণ বাঁচাতেই তারা সিদ্ধান্ত নিল, আমাকে নিমন্ত্রণ করা জরুরি। নিমন্ত্রণ পেলাম মোবাইলের মাধ্যমে। ঘড়িতে সময় রাত ১০টা ১১ মিনিট। ননদ রসিকতা করে বলল, বিয়ের পর থেকে তোমার চান-মুখটা তো আর দেখতে পেলাম না। কালকে বাসায় বেড়াতে আস। গল্প-গুজব করি। সকাল সকাল চলে আস, কেমন?’ কিন্তু দাওয়াত করলেই যে দৌড়ে যাব, এমন বেহায়া তো আমি না। ১০ সেকেন্ডের মতো নিমরাজি ছিলাম। বললাম, ‘আচ্ছা, দেখি। আচ্ছা, আসব। মানে, শিউর আসব। আচ্ছা, গ্যারান্টি দিলাম।’ রাত ১১টায় রওনা দিলাম। বাসা থেকে শ্বশুরবাড়ির দূরত্ব প্রায় দুই ঘণ্টার। রাত পৌনে ১টায় পৌঁছে গেলাম। পুরো বাড়ির মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন। সকালে আসার কথা ছিল। একটু আগেই পৌঁছে গেছি। মানে, মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্টা আগে। যদিও মধ্যরাত, আশা করি কেউ মাইন্ড করবে না। কলিংবেল চাপছি। কেউ দরজা খুলছে না। এলাকায় মাসখানেক আগেও ডাকাতি হয়েছে। সবাই খুব সতর্ক। মধ্যরাতে দরজা খোলার কোনো মানে হয় না। তাই কেউ দরজা খুলল না। তারপর শুরু করলাম ডাকাডাকি। এদিকে প্রতিবেশীদের অনেকেরই ঘুম ভেঙে গেছে। কিন্তু এ বাড়ির মানুষ কী খেয়ে ঘুমিয়েছে কে জানে? এত ডাকাডাকির পরও কারও খবর নেই। প্রতিবেশীর একজন বুদ্ধি দিল, বাড়ির পেছনের দিকে ছাদ থেকে পানির পাইপ নেমে গেছে। ওটা ধরে বেয়ে অনায়াসে ঘরে ঢুকে যাওয়া যায়। বুদ্ধি খারাপ দেয়নি। এভাবে মধ্যরাতে বাড়িসুদ্ধ মানুষের ঘুম ভাঙানো নিশ্চয়ই ভদ্রলোকের কাজ হবে না। এর চেয়ে চুপিচুপি ঘরে ঢুকে সবার ঘুম ভাঙানো ভালো। চলে গেলাম বাড়ির পেছনে। আসলেই অনেক পানির পাইপ রয়েছে। দুতলায় ওঠার পর নিশ্চিত হলাম, সুপারি গাছে চড়ার অভিজ্ঞতা যাদের রয়েছে তাদের কাছে ব্যাপারটা একেবারে পানির মতো সহজ। কিন্তু আমার সুপারি গাছের ওঠার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তাই পানির পাইপ দিয়ে ওঠা বেশ কঠিন হয়ে গেল। আমাকে উঠতে হবে তিন তলায়। দুতলায় উঠে আটকে গেলাম। ‘মাইনকার চিপা’ শব্দটা আগে শুনলেও এই প্রথম শব্দটার মুখোমুখি হলাম। না উপরে উঠতে পারছি, না নিচে নেমে আসতে পারছি। পা কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। হাত দুটোও ঘামে ভিজে গেছে। এখন ঝুলে থাকাও যাচ্ছে না। ভয়ে শুরু করলাম কান্নাকাটি। তবে এতে বেশ ভালো কাজ হলো। গভীর রাতে ভূতের কান্না ভেবে শ্বশুরবাড়ির সবার ঘুম ভাঙল। কলিংবেল চেপে, ডাকাডাকি করেও যা পারিনি, চোখের জলে তা পারলাম। শ্বশুর সাহেব দ্রুত এসে আমাকে উদ্ধার করলেন। ধরে টরে ঘরে নিয়ে গেলেন। ফ্যানের নিচে বসালেন। মাথায় পানি দিলেন। শরবত খাওয়ালেন। মনে মনে ভাবলাম, এই যে শুরু হয়ে গেছে আপ্যায়ন! এখানে তো খেতে আসিনি। কী দরকার ছিল এসবের? একটু বিরক্ত হলাম। বিরক্তিটুকু সবাই বুঝলেও আমার নতুন স্ত্রী তা বুঝেনি। সে এগিয়ে এসে বলল, ‘আসছিলেন যখন আরেকটু আগেই আসতেন। এত রাতে যদি আপনার কোনো বিপদ হতো?’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর