সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

মোবাইল গেমে ব্যস্ত

ইকবাল খন্দকার

মোবাইল গেমে ব্যস্ত

কেউ দরখাস্ত না লিখলেই হয়, ‘বাসায় বসে গেম খেলার সুবিধার্থে আমাকে গোটা তিন দিনের ছুটি দানে বাধিত করিতে আপনার সদয় মর্জি হয়।’

আমার এক বড়ভাই বললেন, তুই তো জানিস, কৌত‚হল জিনিসটা আমার একটু বেশিই। সবকিছু নিয়েই আমার মনে খালি প্রশ্ন জাগে, খালি প্রশ্ন জাগে। এই যেমন ধর, মোবাইল গেমের বিষয়টা। এই বিষয়টা নিয়ে কিন্তু আমার মনে বিস্তর প্রশ্ন জেগেছে। আর প্রশ্ন জেগেছে বলেই আমি ঠিক করেছি গোটা পাঁচেক আংটি কিনব। আমি অবাক হলাম, আংটি কিনবেন? তাও গোটা পাঁচেক! ব্যাপার কী বলেন তো? বড়ভাই বললেন, না, মানে নরমাল খেলা খেললে মানে মাঠে নেমে সশরীরে কোনো খেলা খেললে আমাদের বডি স্লিম হয়, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু অ্যাবনরমাল খেলা খেললে, মানে মোবাইলে গেম খেললেও স্লিম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কি না, এই বিষয়টা জানার জন্য আমার মনে বড়ই কৌত‚হল জেগেছে। তাই আংটি কিনব। আমি এবার আর কিছু বললাম না। শুধু তাকিয়ে থাকলাম বোকার মতো। বড়ভাই কথা চালিয়ে নিলেন, গেম খেললে তো আসলে পুরো বডি কাজে লাগাতে হয় না। জাস্ট আঙুল দিয়ে খেলতে হয়। যদি দেখি আংটি ঢিলা ঢিলা লাগছে, তাহলে বুঝব গেম খেললে অন্তত আঙুল স্লিম হয়।

আমার এক ছোটভাই বলল, ক্রিকেট খেলার জন্য বাজারে যেসব হেলমেট পাওয়া যায়, আমার সে ধরনের একটা হেলমেট দরকার। তবে ক্রিকেটের হেলমেট পরে কিন্তু শোয়া যায় না। আমার এমন হেলমেট দরকার, যেটা পরে শোয়া যায়। আমি ছোটভাইয়ের কথা বোঝার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কিছুতেই বুঝে উঠতে না পেরে বললাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বিশেষ করে হেলমেট পরে শোয়ার বিষয়টা। ছোটভাই বুঝিয়ে বলল আসলে হয়েছে কি ভাই, আমি সারাদিনই মোবাইলে গেম খেলি। আর গেমটা খেলি কীভাবে জানেন? বিছানায় শুয়ে শুয়ে। তার মানে আমি শুয়ে থাকি, আর মোবাইলটা হাত দিয়ে উঁচু করে দেখতে দেখি। তো মাঝেমধ্যে যেহেতু ঘুম চলে আসে, মোবাইলটা হাত থেকে ফসকে পড়ে যায়। আর ফসকে কোথায় পড়ে জানেন? আমার মুখের ওপর। এত ভারী মোবাইল যদি মুখের ওপর পড়ে, তাহলে কী অবস্থা হতে পারে বুঝতেই পারছেন। এই জন্য আমি ঠিক করেছি এখন থেকে যখন শুয়ে শুয়ে গেম খেলব, তখন হেটমেট পরে থাকব। তাহলে হবে কি, মোবাইলটা হাত থেকে পড়লেও কোনো প্রবলেম হবে না।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বাচ্চারা সারাদিন মোবাইলে গেম খেলে। কী যে করি, বুঝতে পারছি না। আমি বললাম, কিছুই আসলে করার নেই। স্কুল খুললেই দেখবেন অভ্যাসটা দূর হয়ে গেছে। প্রতিবেশী বললেন, আপনি আমার বাচ্চাদের চেনেন না। স্কুল খুললে তাদের গেম খেলা বন্ধ হবে দূরের কথা, আমার ধারণা তারা দরখাস্ত লিখে বসবে। আমি অবাক হয়ে বললাম, দরখাস্ত লিখে বসবে মানে? প্রতিবেশী বললেন, না মানে স্কুল খোলা থাকলে যেহেতু গেম খেলায় ব্যাঘাত ঘটতে পারে, এই জন্য তারা এই মর্মে আবেদনপত্র লিখে বসতে পারে, ‘...অতএব হুজুর সমীপে আকুল আবেদন এই যে, বাসায় বসে গেম খেলার সুবিধার্থে আমাকে গোটা তিন দিনের ছুটি দানে বাধিত করিতে আপনার সদয় মর্জি হয়।’

আমার এক চাচা বললেন, কী রে মানুষে নাকি মোবাইলে ক্যামনে গেম খেলে? গেমডা ক্যামনে খেলে, আমারে একটু শিখাবি? আমি বললাম, আপনি গেম শিখে কী করবেন? চাচা বললেন, আরে শিক্ষার কোনো শেষ নাই। আমি গেম শিখ্যা কী করমু জানস? তোর চাচি যেই সময় বেশি হাউকাউ করে, তখন বইসা বইসা গেম খেলমু। শুনছি গেম খেললে নাকি দুনিয়াদারির কোনো খিয়াল থাকে না। এই জন্য আশা করতাছি, তোর চাচির হাউকাউও কানে ঢুকবো না। আমি বললাম, গেম খেললে দুনিয়াদারির খিয়াল থাকে না, এইটা ঠিক আছে। এই জন্য আমিও আশা করছি, চাচি যখন আপনার দিকে ঘরোয়া অস্ত্র যেমন খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসবে, তখনো আপনার খেয়াল থাকবে না। চাচি আরামসে আপনার ওপর হামলা করতে পারবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর