সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

জিনিয়াস পাত্রী

তানভীর আহমেদ

জিনিয়াস পাত্রী

লেজ কাটা শিয়ালের গল্পটা অনেকে নিশ্চয়ই জানেন। নিজের লেজ কাটার পর অন্যদেরও সে লেজ কাটার পরামর্শ দিয়েছিল। আজকাল এমন বন্ধুর অভাব নেই। নিজেরই এমন বন্ধুর সংখ্যা সতের। মোটিভেশনাল স্পিকারদের এই যুগের বহু আগে লেজ কাটা শিয়াল মোটিভেশনাল কথাবার্তা বলে সফল হয়েছিল। আমিও সে পথে হাঁটছি। নিজে বিয়ে করে ধরা খাওয়ার পর অবিবাহিত ছোটভাই, বন্ধুদের কীভাবে বিয়ে দেওয়া যায়, সেই ফন্দিফিকির করে বেড়াই। তার ধারাবাহিকতায় এক ছোটভাইকে ফাঁসিয়েছি। ফাঁসিয়েছি মানে বিয়েতে রাজি করিয়েছি। পাত্রী দেখার তারিখ ঠিক হয়েছে। পাত্রীকে দেখতে মোট পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির সবচেয়ে অগুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে আমি নিয়োগ পেয়েছি। সে যাই হোক, নির্ধারিত দিনে পৌঁছে গেছি পাত্রীর বাড়ি। আমি আগ বাড়িয়ে দরজায় কলিংবেল চাপলাম। দরজা খুলল বাড়ির কাজের মেয়ে। আমাকে দেখেই বলল, ‘মাফ করেন। কাজ কইরা খাইতে পারেন না?’ মুখের ওপর দরজাটা বন্ধ করে দিল। একটু দূরে দাঁড়ানো সহযাত্রীদের বুঝালাম, বড় ধরনের মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আমাকে মনে হয় ভিক্ষুক ভেবেছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমাকে পেছনের দিকে পাঠিয়ে আবার কলিংবেল চাপা হলো।  এবার সবাইকে ঘরের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হলো। আপ্যায়ন হলো। নানা ধরনের কথা চালাচালি হলো। আমি এসব ফাও আলাপে জড়াচ্ছি না। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ কখনো ফাও আলাপ করে না। অপেক্ষা করছি বিয়ের পাত্রীর জন্য। তার সঙ্গে দেখা করা ও কথা বলে যাচাই করে নেওয়ার জন্যই তো এখানে আসা। ফাও আলাপ করতে তো আসিনি। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে যখন বুঝতে পারলাম কেউ আমার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছে না এবং কেউ আমার উপস্থিতি টের পাচ্ছে না তখন বললাম, ‘পাত্রী কই? তাকে তো দেখছি না?’ এ কথা বলার পর কারওরই কিছু বলার ছিল না। কারণ পাত্রী এখানেই উপস্থিত। সে আমার সামনে বসেই কথা বলছিল। আমি একটু বোকা বোকা হাসি দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করলাম, এটা আসলে কথার কথা বলেছি। এই পর্যায়ে আমাকে বাদ দিয়ে শুরু হলো, প্রশ্ন-উত্তর পর্ব। বিয়ের পাত্রীর সাধারণ জ্ঞান মারাত্মক ভালো। বোঝাই যাচ্ছে, গত দুই-তিন মাস ধরে দিনরাত পড়াশোনা করেছে। কোনো প্রশ্ন করেই তাকে আটকানো যাচ্ছে না। তাকে আটকানোর জন্য এগিয়ে গেলাম। দেখি তো আপনার উপস্থিত বুদ্ধি কেমন? বলেন তো, ‘আমি যাকে মামা বলি, বাবাও বলে তাই, ছেলেও তাকে মামা বলে, মা-ও বলে তাই।’ কাকে সবাই মামা বলে? পাত্রী বলল, ‘চাঁদ মামা।’ ঠিক উত্তর। এবার আরেকটু কঠিন ধাঁধা। ‘নয়া জামাই গোসল করে, টুপি থাকে মাথার পরে, এক শ কলস পানি দাও, তবু শুকনা তার গাও’, বলেন তো কী? পাত্রী ঝটপট উত্তর দিল, ‘কচু গাছ!’ উত্তর ঠিক। শেষ প্রশ্ন, ‘কোন জিনিস ফ্রিজে রাখলেও গরম থাকে।’ পাত্রী একবাক্যে বলে দিল, ‘এটা তো সবাই জানে। গরম মশলা।’ আমি বললাম, ‘এই মেয়ে তো জিনিয়াস! আমার পছন্দ হয়েছে। আমি রাজি।’ ছোটভাই আমার হাতে হালকা চাপ দিয়ে বলল, ‘ভাই, কী কন? আপনি তো ম্যারিড। আপনি রাজি মানে?’ নিজেকে একটু সামলে বললাম, ‘মানে, তোমার সঙ্গে বিয়েতে রাজি।’ পাত্রী পছন্দ হয়েছে সবার। সবাই খুশি। এমন সময় মেয়েটি বলল, ‘বলেন তো, কোন জিনিস রোদে শুকায় না কিন্তু ছায়ায় শুকায়?’ পাত্রীর প্রশ্ন শুনে শরীরে ঘাম ছেড়ে দিল। বললাম, ‘আজকে তাহলে আসি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর