সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

টিউশনিতে নাস্তা

আসিফুর রহমান

টিউশনিতে নাস্তা

ট্রে-এর ওই এক পিস কেকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওই এক পিস কেকই আমার মান-সম্মানের শেষ ভরসা

নতুন একটা টিউশনি পেয়েছিলাম গত বছর। পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। যথারীতি মাসের এক তারিখ পড়াতে গেলাম। টেবিলে পড়াতে বসে খেয়াল করলাম পর্দার ওপাশে তিন-চার বছরের এক ছেলে উঁকিঝুঁকি মারছে। ছাত্রের ছোট ভাই। দেখে ভালো লাগল। ছাত্রকে লেখা দিয়েছি। সে লিখছে একমনে। ৩০ মিনিট পরে ছাত্রের মা নাস্তা নিয়ে এলো। এক কাপ চা, এক প্লেট বিস্কুট, আর দুই পিস কেক। নাস্তা দেখে সৌজন্যতার খাতিরে বললাম, ‘কী দরকার ছিল, আন্টি! আমি তো নাস্তা করেই এসেছি।’ এসব বলতে বলতে এক পিস বিস্কুট, এক পিস কেক আর চা খেয়ে ফেললাম। নিজে এক পিস বিস্কুট নিয়ে ছাত্রের ভাইকে সাধলাম। হঠাৎ কি মনে হলো, ছোট ভাইটি ভিতরের ঘরে দৌড়ে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফিরল। হাতে বড় এক গ্লাস পানি নিয়ে। বললাম, ‘পানি দিয়ে কী করবে?’ দেখি, টেবিলের ওপর পানি নিয়ে পাশের চেয়ারে বসে রইল। তারপর লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে আর একটা বিস্কুট হাতে নিয়ে বলল, ‘স্যার, খাই?’ কী আর করব, বললাম, ‘খাও।’ বিস্কুটটা হাতে নিয়ে পানিতে টুপ করে ডুবিয়ে গিলে ফেলল! সব চোখের পলকে ঘটে গেল। পরের বার আবার একটা বিস্কুট নিয়ে একই কাজ করল। এবার আর আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করল না। আবার একটা বিস্কুট হাতে নিয়ে বলে, ‘স্যার, খাই?’ আমিও নিরুপায় হয়ে বলি, ‘খাও।’ এভাবে একটা, একটা বিস্কুট খেতে খেতে পুরো প্লেট সাবাড় করে দিল। এদিকে আমি লজ্জায় লাল হয়ে গেছি। টিউশনির প্রথম দিন, বাড়ির লোকজন যদি ভাবে পুরো এক প্লেট বিস্কুট সাবাড় করে দিয়েছি, কেমন হবে? বাকিটা সময় ছাত্রকে পড়ানোয় মনোযোগ দিতে পারছি না। শুধু ভাবছি, কী ভাববে,  যখন দেখবে পুরো এক প্লেট বিস্কুট স্যার খেয়ে ফেলেছে? এক প্লেট! আর কিছু ভাবতে পারলাম না। এত বিপদের মাঝেও ট্রের দিকে তাকিয়ে আবার একটু আশা ফিরে পেলাম। নাহ্। এখনো এক পিস কেক অবশিষ্ট আছে। কিছু তো একটা ফেরত যাচ্ছে। এগুলো ভাবতে ভাবতে ট্রেটা একটু দূরে সরিয়ে রাখলাম আবার যেন এটাও না খেয়ে ফেলতে পারে। আবার ছাত্রকে পড়ানো শুরু করলাম। মন দিয়ে পড়াচ্ছি। কেন যেন টেবিল ছেড়ে উঠতে মন চাইছে না। পড়ানোর বাকি সময় পিচ্চিটার দেখা পেলাম না। যাক, কিছুটা স্বস্তি। ট্রে-এর ওই এক পিস কেকের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ওই এক পিস কেকই আমার মান- সম্মানের শেষ ভরসা। পড়ানো শেষ করে ছাত্রকে ছুটি দিলাম। টেবিল ছেড়ে উঠে গেটের দিকে চলে এসেছি। ঠিক সেই মুহুর্তেই আবার এলো ছাত্রের ছোটভাইটি। ওকে দেখেই বুকটা ধুক করে উঠল। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে নিজের জুতা পরতে লাগলাম। ততক্ষণে স্টুডেন্টের ভাই দৌড়ে টেবিলের সামনে গিয়ে কেকটা ছোঁ মেরে নিয়ে আমার কাছে এলো। আমার সামনে কেকটা উঁচু করে বলল, ‘স্যার, কেক খাই?’ তারপর কিছু মনে নেই। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম।

- হুজুরপাড়া, কামরাঙ্গীরচর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর