সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

এখন তো সময় পড়াশোনার

ইকবাল খন্দকার

এখন তো সময় পড়াশোনার

‘‘মাস্কে লিপস্টিক লেপ্টে যায়। একটু পরপর লিপস্টিক তো ‘রি-নিউ’ করতে হয়ই, মাস্কও বদলাতে হয়। তার মানে খরচ দুই খাতে।’’

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, স্কুল খুলে দিচ্ছে ঠিক আছে। তবে এভাবে হুট করে খুলে দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। কয়েক দিন প্র্যাকটিস করার সুযোগ দেওয়ার দরকার ছিল। আমি বললাম, প্র্যাকটিস বলতে? প্রতিবেশী বললেন- বছর দেড়েক বন্ধ থাকার কারণে ছেলেমেয়েরা স্কুলের রাস্তা ভুলে গেছে তো! তাই একটু প্র্যাকটিস করে নিলে ভালো হতো আরকি। মানে তারা সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার স্কুলে যাবে, একবার ফিরবে। আবার যাবে, আবার ফিরবে। এ প্র্যাকটিসটা করার সুযোগ না দিলে সমস্যা যেটা হতে পারে, দেখা যাবে স্কুল মালিবাগ। ছেলেমেয়েরা রাস্তা ভুল করে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবে শাহবাগ। অভ্যাস না থাকলে যা হয়। আবার এত দিন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে সকাল ১০-১১টায় ঘুম থেকে ওঠার যে অভ্যাস হয়ে গেছে, সেটা দূর করে ভোরে ওঠার অভ্যাস তৈরি করার জন্যও প্র্যাকটিস দরকার। নইলে দেখা যাবে স্কুলে পৌঁছতে পৌঁছতে তিন পিরিয়ড শেষ। আবার এমনও হতে পারে, এক ক্লাসরুমের বদলে ছেলেমেয়েরা ঢুকে পড়তে পারে আরেক ক্লাসরুমে। ক্লাসরুম ভেবে অফিসরুমে যে ঢুকে পড়বে না, তারই বা গ্যারান্টি কী? প্র্যাকটিসের অভাবে জগতে কত উল্টাপাল্টা ঘটনাই তো ঘটতে পারে। পারে কিনা বলেন? আমি কোনো উত্তর দিলাম না। কারণ, আমি তখন চিন্তা করছিলাম রিকশাওয়ালাদের কথা। চিন্তাটা এমন, প্র্যাকটিসের ব্যবস্থা করলে তো রিকশাওয়ালাদের জন্যও করা দরকার। কারণ, স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার কারণে তারা যেসব এলাকায় কম যেত, এখন থেকে যেন সেসব এলাকায় বেশি বেশি যায়, সেই প্র্যাকটিস করানো উচিত। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, ‘মামা স্কুলের সময় চলে যাচ্ছে, প্লিজ, একটু নামিয়ে দিয়ে আসেন’-এই অনুরোধের পরও যেসব রিকশাওয়ালা ফিরে তাকায় না, তাদের ফিরে তাকানোর প্র্যাকটিসটা জরুরি। যদি তারা এহেন অজুহাত দেয়, ফিরে তাকাতে গেলে ঘাড়ের রগে টান লাগে, ব্যথা অনুভূত হয়, তাহলে প্রয়োজন বোধে তাদের ঘাড়ের ব্যায়ামের ব্যবস্থা করতে হবে।

আমার এক ছোটভাই বলল, অনেক দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে। সত্যি দায়িত্ব বেড়ে গেল। আমি বললাম, তোর আবার কীসের দায়িত্ব? তুই তো স্কুলেও যাস না, কলেজেও না। ছোটভাই বলল, কীভাবে বলি। বলতে লজ্জা লজ্জা লাগছে। তবু বলি। আসলে আমি যাকে পছন্দ করি, সে কলেজে পড়ে। আর আমি গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি কলেজ গেটে। এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন আমার দায়িত্বটা কেমন। আমি বললাম, বুঝতে তো পারছি। আর এটাও বুঝতে পারছি, তোর জন্য অনেক খারাপ সময় অপেক্ষা করছে। কারণ, এখন সবাই মাস্ক পরা থাকবে। অতএব কোনটা তোর পছন্দের মানুষ আর কোনটা অপছন্দের মানুষ, সেটা তফাত করা দুষ্কর হয়ে  যাবে। আমার কথা শুনে ছোটভাই দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। বলল, কবে যে মাস্ক পরার ঝামেলা দূর হবে। আহারে ওর বাঁশির মতো নাকটা মনে হয় মাস্কের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।

আমার এক বড়ভাই বললেন, স্কুল তো খুলছে না, খুলছে তোর ভাবির মুখ। কী যে বিপদ অপেক্ষা করছে আমার জন্য! আমি বললাম, ঠিক বুঝলাম না। একটু যদি বুঝিয়ে বলতেন। বড়ভাই বললেন, বুঝিয়ে বলার কিছু নেই। বাচ্চাকে স্কুলে আনা-নেওয়ার নাম করে স্কুলগেটে ভাবিদের সঙ্গে আড্ডায় বসে একদিনে সে যে পরিমাণ কথা বলে, আমি সারা বছরেও এত কথা বলি না। এতদিন স্কুল বন্ধ ছিল, তার মুখও বন্ধ ছিল। এখন স্কুল খুলতে যাচ্ছে, তার মুখও খুলতে যাচ্ছে। আমি বললাম, এখন তো মাস্ক পরা থাকবে, এখন হয়তো কথা কমই বলবে। বড়ভাই বললেন, এই তো দিলি আসল কথা মনে করিয়ে। মাস্ক পরার কারণে সে কথা কম বলে না। বরং টাকার অপচয় করে। আমি বললাম, টাকার অপচয় মানে? বড়ভাই বললেন, হরদম কথা বলার কারণে মাস্কে লিপস্টিক লেপ্টে যায়। ব্যস, একটু পরপর লিপস্টিক তো ‘রি-নিউ’ করতে হয়ই, মাস্কও বদলাতে হয়। তার মানে খরচ দুই খাতে। কী একটা অবস্থা! না না, কী দুইটা অবস্থা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর