সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চলতে ফিরতে কত কথা

তানভীর আহমেদ

চলতে ফিরতে কত কথা

গাড়ি ড্রাইভিংয়ের সময় দুনিয়ার ফোন আসে। দুনিয়ার যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ, কারবার তখন সিরিয়াল ধরে আসে। গাড়ির যাত্রী হিসেবে এসবে আমাকেও জড়াতে হয়। সেদিন রিকশায় উঠে কিছু দূর যাওয়ার পরই রিকশাচালকের মোবাইলে ফোন এলো। কথাবার্তায় যা বুঝলাম, মুরগি হারিয়ে গেছে। তার স্ত্রী ও পুত্রসন্তান দুপুর থেকে মুরগি খুঁজে যাচ্ছে। স্ত্রী সন্দেহ করছে এই মুরগি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কারণ মোখলেছের মেজ ছেলে অনেক দিন ধরেই নাকি এই মুরগির পেছনে লেগেছে। আজ দুপুরে তাকে মুরগির আশপাশেই ঘুরঘুর করতে দেখা গেছে। হয় মুরগি ধরে সে বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। নয়তো আজ তাদের বাসায় দুপুরের তরকারিতে মুরগির মাংস রয়েছে, মানে মুরগি এতক্ষণে শ্যাষ! ভয়াবহ অভিযোগ। রিকশাচালক তার স্ত্রীকে অনেক বুঝিয়ে শান্ত করলেন। ফোন রাখার পর যা হয়, যাত্রী হিসেবে এসব ঝামেলায় জড়াতে হয়। আমিও জড়িয়ে গেলাম। আমার কী মনে হয়? বললাম, আমার মনে হয়, মুরগি আশপাশেই আছে। চলে আসবে। কিন্তু রিকশাচালক মানতে নারাজ। এই মুরগি অন্যদের মতো না। বাড়ির উঠান ছেড়ে দূরে যায় না। তরকারি দিয়ে মাখা ভাত ছাড়া অন্যকিছু দিলে খায় না। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই ঘরে ফিরে আসে। শুনেই বোঝা যাচ্ছে, মুরগির স্বভাব চরিত্র অতি ভালো। এ পর্যায়ে আবার ফোন বেজে উঠল। মুরগির স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে আরও জানা গেল। পাশের বাড়িতেই নাকি নতুন একটা মোরগ কিনে আনা হয়েছে। ফাজিল টাইপের মোরগ। রিকশাচালকের স্ত্রীর ভাষ্যমতে, এই ফাজিল মোরগের পাল্লায় পড়ে দূরে কোথাও গিয়েছিল তাদের মুরগি! রিকশা থেকে নেমে যাওয়ায় বাকিটা শুনতে পারিনি। তবে মুরগি যে নতুন প্রেমে পড়েছে তা পরিষ্কার! আস্ত গল্প শুনতে পেলাম অটোগাড়ি ড্রাইভারের কাছ থেকে। তার গাড়িতে ওঠার পর কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। মোবাইলের ওপাশে রয়েছে তার স্ত্রী। তোশকের নিচ থেকে দুইশ টাকা চুরি গেছে। দুজনের সংসারে আর কেউ নেই। কাল রাতে তোশকের নিচে দুইশ টাকা রেখেছিলেন তিনি। আজ সকালে তার স্বামী গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার পর থেকেই টাকাগুলো পাওয়া যাচ্ছে না। স্ত্রী শতভাগ নিশ্চিত টাকাগুলো তার স্বামীই চুরি করেছেন। এ ছাড়া এ ধরনের চুরির অতীত ইতিহাস রয়েছে তার। গত মাসেও তিনি বিস্কুটের কৌটার ভিতর থেকে তিনশ টাকা চুরি করে ধরা খেয়েছিলেন। আমার অটোগাড়ির চালক অতীতে চুরি করার কথা স্বীকার করলেও এই দুইশ টাকা চুরির দায় স্বীকার করছেন না। তাই তর্ক বেড়ে যাচ্ছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর তিনি ফোন কাটলেন। আমার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, ‘পকেট খালি দেইখা দুইশ টাকা নিয়া বাইর হইছি। বেডি এইটাও হিসাব রাখছে। সমেস্যা নাই। বাড়িত গিয়া দিয়া দিমু। হে হে হে...।’ দুইশ টাকা চুরি করে ধরা খাওয়া অটোগাড়ি ড্রাইভারের সঙ্গে বেশি খাতির জমালাম না। কিন্তু যা হয়। এবারও ঝামেলায় জড়িয়ে গেলাম। চালক বললেন, ‘এই টাকাও তো আমারই, কী কন? আমিই তো হেরে কামাই কইরা দিই। আমার টাকা আমি লমু না? কী কন?’ বললাম, টাকা যারই হোক, বলে আনলেই পারতেন। আমার কথার উত্তর দেওয়ার আগেই পাশে আরেক যাত্রীর ফোন বেজে উঠল। তার স্ত্রী বিশ্বাস করতে চাইছে না, রাস্তায় অনেক জ্যাম। তাই দেরি হচ্ছে। তিনি ফোনটা বাড়িয়ে দিলেন। ‘ভাই, রাস্তায় জ্যাম না অনেক? বলেন তো?’ ভদ্রলোক একটা চোখ টিপি দিলেন। রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। তবু ফোনের কাছে মুখ নিয়ে বললাম, ‘ভাবি, রাস্তায় অনেক জ্যাম। দুই ঘণ্টা ধরে এক জায়গাতেই বসে আছি।’ ভদ্রলোক ফোন কেড়ে নিয়ে, কড়া ঝাড়ি দিয়ে বললেন, ‘কী বিশ্বাস হইছে এইবার! যত্তসব। রাখো, ফোন রাখো!’ ফোন কেটে দিয়ে আমাকে বললেন, ‘থ্যাঙ্কস।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর