শিরোনাম
সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

জন্মদিন বিড়ম্বনা

আফরীন

জন্মদিন বিড়ম্বনা

কিছুদিন আগে অন্তুর জন্মদিন গেল। ওর কিছু বন্ধুবান্ধবী এসে হইচই করে দারুণভাবে দিনটা কাটাল। অন্তু ভুলেই গিয়েছিল। ওর বন্ধুরা সন্ধ্যায় এসে লুকিয়ে ছিল বাসায়। আমরা ওকে রাত ১২টায় উইশ করে চমকে দিয়েছিলাম। সেই থেকে জন্মদিন ব্যাপারটা আমাদের দেলু মিয়ার পছন্দ হলো। কিন্তু তার নিজের জন্মদিন জানা নেই। ইদানীং উদাস ভঙ্গিতে ঘুরে বেড়ায়। ঘুরেফিরে নানাভাবে জন্মদিন নিয়ে জানতে চায়। সেদিন পড়তে বসালাম। সে বলল পড়বে না। আমি ভ্রƒ কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম। আজ আবার কী ছুতো? ও বলল, ‘ইছকুলে ভর্তি হইতে জন্মতারিখ লাগে। আমার তো জন্মতারিখ নাই। তাইলে ইছকুলে ক্যামনে ভর্তি হমু? ইছকুলে ভর্তি না হইতে পারলে আর পইড়া কি হইবো?’ ভালো অজুহাত। আমি বললাম, ‘এটা নিয়ে তোর চিন্তা করার দরকার নেই। আমরা তোর একটা জন্মতারিখ ঠিক করে তোকে ভর্তি হওয়ার ব্যবস্থা করে দিব।’ সে দারুণ খুশি হয়ে গেল। এর পরে শুরু হলো ঘ্যান ঘ্যান। আপা তারিখটা ঠিক করে দেন। ওর জ্বালায় অস্থির হয়ে শেষে ওর পছন্দমতো একটা তারিখকে জন্মদিন হিসেবে ঘোষণা করা হলো। ঠিক হলো এই তারিখ দিয়েই তার সব কাজকর্ম সারা হবে। কয়েক দিন ভালোভাবেই দেলুর ঘরের কাজ, পড়াশোনা চলল। একটু হাঁফ ছাড়লাম। কয়েক দিন পর দেলু এসে জানাল পরশু তার জন্মদিন। আমি মনে করে দেখলাম তাই তো। আমাদের ঠিক করা তারিখ অনুযায়ী পরশু দেলুর জন্মদিন। তা এখন কী করতে হবে? আমি জানতে চাইলাম। অল্প কইরা আমার জন্মদিনডা পালন কইরা দেন। বুঝলাম, তার জন্মদিন পালন করার শখ হয়েছে। বললাম, ‘অল্প করে জন্মদিন পালন হয় কি করে?’ ‘মানে হইলো গিয়া ভাইজানের মতন অত্ত বড় কেক লাগব না। ছোট্ট একটা কেক আর মুরগির গোস্ত হইলেই হইব। আমি আমার দুই তিনজন বন্ধুরে আইতে কমু। অরা খাডের তলে লুকাইয়া থাকব আর রাইত বারোডার সময় বাইর হইয়া আমারে হেপি বাড্ডে কইব।’ বললাম, ‘ঠিক আছে তোর বন্ধুদের আজ বিকেলে নিয়ে আসিস। আমি দেখব কি করা যায়।’ বিকেল বেলা দেলু মিয়া কিছু ছেলেমেয়ে নিয়ে হাজির। বুঝলাম এরা আশপাশের বস্তিতেই থাকে। বাজার করতে গিয়ে হয়তো দেলু মিয়ার সঙ্গে খাতির হয়েছে। এই ছেলেমেয়েদের ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রেখে সারপ্রাইজ প্ল্যান অসম্ভব। কিন্তু দেলুকে কি করে বোঝাই। কোনোমতে ছেলেমেয়েগুলোকে কিছু খাবার দাবার দিয়ে বিদায় করলাম। ওকে বোঝালাম, জন্মদিন যেহেতু তাই পরশু আমরা তাকে ঘুরতে নিয়ে যাব। দেলু ব্যাপারটা মেনে নিল। কাজকর্ম, পড়াশোনা সব ঠিকমতো করল। গতকাল অনেক কাজ ছিল। খুব ক্লান্ত হয়ে শুয়েছি। অনেক রাতে হঠাৎ শুনি দেলু ডাকাডাকি করছে। ঘুম ঘুম চোখে উঠে দেখতে গেলাম। ভয়টয় পাচ্ছে কি না। সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই বলল, ‘আপা ঘুমায়া গেছিলাম, বারোটা কোন সময় পার হইয়া গেছে দিশা করতে পারি নাই। দুই ঘন্টা দেরি হইয়া গেল। তাড়াতাড়ি ভাইজানরে ডাক দেন। সকাল হইয়া যাওনের আগে আমারে হেপি বাড্ডে বইলা কয়খান ছবি তুইলা দেন।’ আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না। দেলু একটা মোম জ্বালিয়ে এনেছে। বলল, ‘আপা, কেক কাইলকা কাটুম। এহন খালি মোমবাত্তি নিভাইলেই হইব।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর