সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

স্কুল খোলার আনন্দে

ইকবাল খন্দকার

স্কুল খোলার আনন্দে

‘‘ছাত্রছাত্রীরা ঝালমুড়ি খাইতে গিয়া হলুদের দাগ লাগায়া মাক্স নষ্ট কইরা ফালাইবো। এই কারণে যেই তালে ঝালমুড়ি বেচা হয়, হেই তালে বেচা হইব মাক্স। লাভে লাভ।’’

দেড় বছর পর খুলেছে স্কুল। ব্যাপারটা আনন্দেরই শুধু নয়, মহাআনন্দের। তবে এ আনন্দের মাঝেই একটা চিন্তার বিষয় মাথায় ঘুরছে। স্কুলের সামনে মায়েদের আড্ডা দেওয়া যাবে তো? করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে স্কুলের সামনের আড্ডা প্রতিরোধ করা হলে? অথচ এ দেড় বছরে কত কথা জমেছিল মায়েদের পেটে। সেসব কথা প্রকাশের সুযোগ না দেওয়া মানে মায়েদের স্কুলযাত্রার বারো আনাই মিছে! অন্তত আমার এক প্রতিবেশী ভাবী এমনটাই মনে করেন। গতকাল তিনি বললেন, স্কুলের সামনে আগের মতো আড্ডা দেওয়া যাবে না, এটা কোনো কথা হলো? প্রতিবাদ জানাতে হবে। আমি বললাম, কীভাবে প্রতিবাদ জানাতে চান? বিবৃতি দিয়ে? নাকি মিটিং-মিছিল করে? ভাবী বললেন, মিটিং মিছিল না। প্রতিবাদ জানাব মুখে কালো কাপড় বেঁধে। আমি বললাম, মুখে আলাদা করে কালো কাপড় বাঁধার কোনো দরকার নেই। সবাই ম্যাচিং করে কালো রঙের মাস্ক পরলেই চলবে। আচ্ছা, আপনারা মোট কয়জন? সবাই এক দোকান থেকে পাইকারি রেটে কালো মাস্ক কিনলে কিন্তু ভালো ডিসকাউন্ট পাবেন। বিষয়টা মাথায় রাইখেন।

আমার এক ছোটভাই বলল, ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। আগে স্কুল খুলল। অথচ আগে খোলা দরকার ছিল ভার্সিটি। কতদিন গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা হয় না? আমি বললাম, তোর গার্লফ্রেন্ড ভার্সিটিতে পড়ে? কই, কোনোদিন তো বলিসনি? আমি যতদূর জানতাম, কলেজে পড়ে। ছোটভাই বলল, আরে গার্লফ্রেন্ড ভার্সিটিতে পড়ে, এটা আপনাকে কে বলল? ভার্সিটিতে পড়ে গার্লফ্রেন্ডের বড় ভাই। ভার্সিটি খুললে তার ভাইটা বাসা ছেড়ে আবাসিক হলে ওঠবে। আর আমি বাসার আশপাশ দিয়ে ঘুরঘুর করব। গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করে চলে আসব। সুবিধা না? আমার এক বড়ভাই বললেন, স্কুল খোলার কারণে আবার অ্যাক্সিডেন্টের ঝুঁকি বেড়ে গেল। আমি বললাম, আপনি কি সংক্রমণ বাড়ার কথা বলছেন? বড়ভাই বললেন, আরে বাপুরে সংক্রমণ বাড়ার কথা, অ্যাক্সিডেন্টের কথা বলব কেন? অ্যাক্সিডেন্ট মানে অ্যাক্সিডেন্ট। ধপাস করে পিচ রাস্তার ওপর পড়ে যাওয়া। স্কুল খোলার কারণে এ ঝুঁকিটা সত্যিই বেড়ে গেল। আমি বললাম, কীভাবে? বড়ভাই বললেন, কীভাবে আবার? স্কুল খোলা না থাকলে সকালে আরাম করে ঘুমাতে পারি। আর স্কুল খুললেই আরামের ঘুম বাদ দিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে রওনা হতে হয় স্কুলে। তারপর রিকশায় বসে ঘুম। আর একজন ঘুমন্ত মানুষ রিকশার ঝাঁকুনি খেয়ে পড়ে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আর পড়ে গেলে তো পিচ রাস্তার উপরেই পড়বে, নাকি?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, স্কুল খুলেছে ভালো কথা, তবে এ খবরটা এত ফলাও করে প্রকাশ না করলেও পারত। অন্তত অভিভাবকদের আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে হলেও স্কুল খোলার খবরটা একটু রাখঢাক করে প্রকাশ করা উচিত ছিল। আমি প্রতিবেশীর কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে তাকে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। তিনি বুঝিয়ে বলতে রাজি হলেন না। শুধু এইটুকু বলে চলে গেলেন, রিকশাওয়ালারা ১০ টাকার ভাড়া ৩০ টাকা চাচ্ছে। স্কুল খোলার খবরটা একটু রাখঢাক করে প্রকাশ করলে রিকশাওয়ালারা জানত? আর তারা এ চান্সটা নিতে পারত?

আমার বাসার পাশের যে দোকানটা থেকে আমি জিনিসপত্র কিনি, গতকাল দেখি দোকানটা বন্ধ। রাতে আবার খোলা পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, দোকান বন্ধ ছিল কেন? দোকানদার বলল, এখন থেকে এই সময়ে বন্ধই থাকব। ইশকুলের সামনে ঝালমুড়ির দোকান দিছি তো! সাথে ‘মাক্স’ও বেচি। ছাত্রছাত্রীরা ঝালমুড়ি খাইতে গিয়া হলুদের দাগ লাগায়া মাক্স নষ্ট কইরা ফালাইবো। এই কারণে যেই তালে ঝালমুড়ি বেচা হয়, হেই তালে বেচা হইব মাক্স। লাভে লাভ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর