সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

গাছ ও আগাছা

আফরীন

গাছ ও আগাছা

ঘরে বারান্দায় কিছু গাছপালা থাকা দরকার। সামান্য হলেও অক্সিজেনের জোগান হবে আবার সৌন্দর্যবর্ধনের কাজটিও সারবে। দেখেশুনে কম যতেœ ভালো থাকে এরকম কিছু গাছ আনলাম। ঘরের ভিতরে রাখার জন্য স্পাইডার প্ল্যান্ট, অনেকটা ঘাসের মতো দেখতে, তবে সুন্দর। এরিকা পাম, নারকেল গাছের মতো চিরল পাতা। কিছু এ্যারোহেড, কচু পাতার মতো দেখতে। বারান্দার জন্য পর্তুলিকা, লেমন গ্রাস, আরও কিছু বারোমাসি ফুল। এক হাতে সব গোছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। দেলু মিয়া থাকলে ভালো হতো। ও গেছে মায়ের বাসায়। কোনোরকম গাছগুলো একটা সাইড করে রেখে মাকে ফোন করলাম। বিকালে যেন দেলুকে পাঠিয়ে দেয়।

দুপুরের পরে বন্ধুর ফোন। একটা কাজে আমার হেল্প দরকার। তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম। এদিকে মা ফোন করে জানাল দেলুকে পাঠাচ্ছে। এক্সট্রা চাবি আছে, সুতরাং চিন্তা নেই। বলে দিলাম ও যেন সুন্দর করে বারান্দাটা মুছে রাখে। এসে গাছগুলো বসাব। সন্ধ্যায় কাজ সেরে বাসায় ফিরলাম। প্রচুর হাঁটতে হয়েছে, জ্যামে বসে থাকতে হয়েছে, তারওপরে পড়েছে গরম। খুব ক্লান্ত লাগছিল। সোফায় গা এলিয়ে দিলাম। দেলু মিয়া আইস কিউব দিয়ে এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে এসেছে। ঠাণ্ডা শরবতে চুমুক দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে মনটা ভালো হয়ে গেল। ছেলেটা দারুণ কাজের। অনেক কাজ নিজে থেকেই করে ফেলে। সব আপত্তি শুধু পড়াশোনায়। জিজ্ঞেস করলাম, ‘বারান্দা মুছেছিস?’ মাথা নেড়ে বলল, ‘হ আপা। সব পরিষ্কার কইরা থুইছি। আপনে খালি যাইয়া গাছ লাগাইবেন।’ আজ আর গাছ ধরতে ইচ্ছা করছে না। সকালে দেখব। কাজকর্ম সেরে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়লাম।

সকালে আমার আগে দেলুর ঘুম ভাঙে। আমি ওঠে হাতমুখ ধুয়ে হালকা নাস্তা করে নিলাম। গাছগুলো ঠিকঠাক করে রাখতে হবে। ইনডোরগুলো মুছেটুছে ঘরে আনতে হবে আর আউটডোরগুলো আলো রোদ বুঝে জায়গা মতো প্লেস করতে হবে। কিন্তু বারান্দায় গিয়ে আমি বজ্রাহত! ইনডোর প্ল্যান্টের বেশির ভাগ টব ফাঁকা। পর্তুলিকা, লেমনগ্রাসও নেই। কেউ গাছগুলো তুলে নিয়ে মাটি সমান করে রেখেছে। আর কে হতে পারে। ডাকলাম দেলু মিয়াকে। সে আমাকে দেখেই বলল, ‘আপা আগাছা সব পরিষ্কার কইরা রাখছি। ঘাস কচু দিয়া ভরা আছিল সব। এহন আপনে লাগান কোন গাছ লাগাইবেন। কিন্তু এদ্দুর পডের মইদ্যে আমগাছ, জামগাছ ভালো হইব না। তয় পড ভাইঙ্গা পরে মাডিতে লাগান যাইব। অসুবিধা নাই। কিন্তু আপা নাইকল গাছের চারাডা ভালো দেয় নাই মনে হয়।’ আর সামলাতে পারলাম না। বললাম, ‘তোকে না বলেছি আমাকে না জিগ্যেস করে আগ বাড়িয়ে কোনো কাজ করবি না। কে বলেছে তোকে আগাছা পরিষ্কার করতে? তুই যেগুলো ঘাস কচু বলে ফেলে দিয়েছিস সেগুলো দিয়ে মানুষ ঘর সাজায়। পয়সা খরচ করে সেগুলো কিনে আনতে হয়েছে।’ ও চোখ বড় বড় করে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বলল, ‘তাইলে আপা নাইকল গাছটা?’ বুঝলাম ও এরিকা পামের কথা বলছে। অনেক কষ্টে মেজাজ সামলে বুঝিয়ে বললাম। ওটা নারিকেল গাছ নয়। ঘর সাজানোর একটা বাহারি গাছ। বললাম, ঘাস ভেবে আরও যেটা ফেলেছে সেটা ছিল লেমন গ্রাস। রান্নার কাজে লাগে। আর শুধু গোলাপ ফুলই ফুল নয়। ফুলের আরও অনেক গাছ আছে। পর্তুলিকা জংলা গাছ হলেও ওটাতে সুন্দর ফুল হয়। সব বুঝতে পেরেছে এমন একটা ভাব নিয়ে মাথা নেড়ে দেলু মিয়া বলল, ‘তাইলে আপা হুদাই আপনে এতডি টেকা খরচ করলেন। আমারে কইলেই আমি রাস্তার থন কতটি ঘাসপাতা টোকায়া আনতে পারতাম। কাইলকাও আইবার সময় দেখছি। রাস্তায় কতডি ঘাস জংলা হইয়া রইছে। হলুদ ফুলও ফুটছে। খালি কামে কতডি টেকা খরচ হইল।’ আমি আর কথা বাড়ালাম না। যা বুঝার বুঝে গেছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর