সোমবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ছাতার অ্যাক্সিডেন্ট

আফরীন

ছাতার অ্যাক্সিডেন্ট

ইদানীং রোদ-বৃষ্টির কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। সকাল থেকে আকাশ মেঘলা হয়েছিল। কয়েক ফোঁটা বৃষ্টিও হলো। বের হতে যাচ্ছি, হঠাৎ দেখি রোদ উঠে গেল। চোখের পলকে একেবারে কড়কড়ে রোদ। গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কম করে হলেও আধা ঘণ্টা। এই রোদে পাঁচ মিনিট দাঁড়ালেই চামড়া পুড়ে যায় যায়। ছাতা ছাড়া বের হওয়া বোকামি। দেলুকে ডেকে বললাম ছাতা দিতে। ‘এই তো আপা দিতাছি’, বলে ১০ মিনিট ধরে তার খবর নেই। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার ডাক দিলাম। ‘আইতাছি’, বলে আরও দুই মিনিট। এরপর এসে বলল, ‘আপা, ছাতা পাইতাছি না’। মেজাজ দারুণ খারাপ হয়ে গেল। এদিকে আর এক মিনিটও দাঁড়ানোর সময় নেই। খুঁজে রাখতে বলে বেরিয়ে গেলাম। দুদিন আবার না রোদ না বৃষ্টি। ছাতার দরকার পড়ল না। তাই আর মনেও পড়ল না। দুদিন পর সকাল-সকাল ঝুম বৃষ্টি। রোদ মাথায় নিয়ে তবু বের হওয়া যায়। কিন্তু বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরা গেলেও ভিজে ভিজে অফিসে ঢোকার মতো যন্ত্রণা আর হয় না। ভেজা কাপড় গায়ে শুকিয়ে ঠান্ডা যদি একবার লাগতে পারে তাহলে আর কথাই নেই। মনে পড়ল ছাতা তো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজও হাতে সময় নেই। এদিকে অফিসে যেতেই হবে। অগত্যা দারোয়ান চাচার কাছ থেকে একটা ছাতা ম্যানেজ করে বেরিয়ে পড়লাম। তবে আজকে বাসায় ফিরে ছাতার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। দেলুকে ভালো করে বলে গেলাম ছাতা খুঁজে রাখতে। আজ আর ভুললাম না। বাসায় ফিরে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আরাম করে সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে দেলুকে ডাকলাম। দেলু চা নিয়ে এলো। আমি শান্ত গলায় বললাম, ‘চা খাব না।’ ‘আপা বিষ্টি পড়তাছে। বিষ্টির সময় চা খাওন ভালো।’ বুঝলাম সে খাতির জমানোর চেষ্টা করছে। আমি তার খাতিরকে পাত্তা না দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ছাতাটা কোথায় রে?’ ‘খুঁইজা দেখতাছি’, বলেই সে সটকে পড়ার চেষ্টা করল। সরে যাওয়ার আগেই আমি ওকে ধরে ফেললাম। বললাম, ‘ছাতা কি সুই, সেফটিপিন, যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। গত সপ্তাহেও সেলফের উপরে দেখেছি। সব সময় ওখানেই থাকে। হঠাৎ করে পা গজিয়ে হেঁটে চলে গেছে? সত্যি করে বল, কী হয়েছে?’ দেলু মোচড়া-মুচড়ি করে কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলল, ‘আমি তো কইতে পারি না। খুঁইজা দেহি।’ ‘সারা দিন ঘরে তুই ছাড়া আর কে থাকে? বলতে পারার জন্য কি আরেকজনকে লাগবে? আর খুঁজে দেখতে হবে না। কী করেছিস সেটা বল। না বলা পর্যন্ত আমি এখানে দাঁড়িয়ে থাকব।’ দেলু চুপচাপ। অবশেষে বললাম, ‘ঠিক আছে। তোর কিছু বলতে হবে না। তবে ছাতার খবর না পাওয়া পর্যন্ত টেলিভিশন বন্ধ থাকবে।’ এবার কাজ হলো। ‘আইচ্ছা আপা বলতাছি। তাইলে কন রাগ হইবেন না।’ আগেই পথ পরিষ্কার করে রাখছে। বললাম, ‘রাগ করার মতো হলে অবশ্যই রাগ করব।’ দেলু কাঁচুমাচু করছে। বললাম, ‘টিভি বন্ধ থাকবে। বাকিটা তোর সিদ্ধান্ত।’ এবার দেলু মাথা চুলকে বলল, ‘আপা ছাতাডা একসিডেন করছে।’ ‘কী!’ ‘হ, আপা ছাতায় একসিডেন করছে।’ আমি কঠিন গলায় বললাম, ‘ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বলবি না। সোজাসাপ্টা বল কি হয়েছে।’ ‘আপা, আমি আর ছাতাডা মিল্লা ছাদে গেছিলাম। বাতাসে ছাতাডা উইড়া গিয়া পড়ল দুই বিল্ডিংয়ের চিপায়। তহনি বুঝছিলাম ঘটনা সুবিধার না। পরে গিয়া উঠায়া আনলাম। দেহি তিনটা ঠ্যাং ভাইঙা গেছে। মিস্ত্রির কাছে নিলে মনে হয় জোড়া লাগব। রডের খোঁচা লাইগা কাপড়ডাও ছিঁড়ছে একটু। দুইডা সেলাই দিলে ঠিক হইয়া যাইব। আমার কিন্তু কোনো দোষ নাই আপা।’ আমি কি বলব ভেবে পেলাম না। রাগে দুঃখে চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন আলমারিতে রেখে গেলাম না। থাইল্যান্ড থেকে ছাতাটা গিফট পেয়েছিলাম। অত সুন্দর ছাতা সহজে চোখে পড়ে না। এ ছেলেকে আর কিছু বলে লাভ নেই। যাই, তিন দিনের জন্য টিভি বন্ধ রাখি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর