সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

কমেন্ট প্রাপ্তির আনন্দ

রাফিউজ্জামান সিফাত

কমেন্ট প্রাপ্তির আনন্দ

মোখলেস ভাই স্থির চোখে ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। নিজের চোখকে তার বিশ্বাস হচ্ছে না। যা দেখছে ঠিকই দেখছে। তার স্বরচিত তিন লাইনের প্রেমের কবিতায় এই প্রথম একজন নারী কমেন্ট করেছে। কমেন্টে লিখেছে, OP। সাদা জমিনে কালো হরফে লিখা OP জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। মেয়েটি নিশ্চয়ই O তে ‘অসাধারণ’ আর P তে ‘প্রিয়’ বুঝিয়েছে। অর্থাৎ সে কবি প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে ‘অসাধারণ প্রিয়’কে সংক্ষেপে লিখেছে OP। তাই দেখে মোখলেসের ঠোঁটের কোণে হাসি আর ধরে না। সে কয়েকবার ল্যাপটপের স্ক্রিন ছুঁলো। খুশিতে মোখলেসের লাফাতে ইচ্ছা করছে। লাফানোর আগে তার মনে হলো দু®প্রাপ্য কমেন্টের একটা ছবি তুলে রাখা উচিত। সে দ্রুত মোবাইল বের করে ল্যাপটপের পাশে আধশোয়া হয়ে একটা সেলফি তুলে নিল। কী সুন্দর কম্পোজিশন! সে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিল এ ছবিটা সে বারশো টাকার কাঠের ফ্রেমে বাঁধাই করে ঘরে টাঙিয়ে রাখবে। হঠাৎ তার মনে হলো, কমেন্টটা তার হিংসুটে বন্ধুদের দেখানো উচিত। সে দ্রুত তার সব বন্ধুকে ফেসবুক গ্রুপ মেসেজ পাঠাল, ‘আমার সর্বশেষ ফেসবুক পোস্টটির কমেন্ট সেকশন ভালোমতো দেখ, তোমাদের জন্য একটা দারুণ সারপ্রাইজ আছে।’ এরপরই মোখলেসের মনে হলো, যে মেয়ে তাকে কমেন্টটি দিয়েছে তার প্রোফাইল দেখা দরকার। মেয়েটির নাম শেফালী বেগম। বিভিন্ন সময় সে বিভিন্ন মেয়েকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছিল। তাদের ভিতর কেউ কেউ রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলেও আজ পর্যন্ত কেউ কোনো দিন মোখলেসের কোনো পোস্টে কমেন্ট দূরে থাক, লাইক সাইনও দেয়নি। এই মেয়ে অবধারিত নিশ্চিত তার কবিতার অন্ধ ভক্ত। মোখলেস যদি এখন তাকে মেসেজে ‘শুনছেন? আমি আপনার প্রিয় (কবি) বলছি’ লিখে মেয়েটিকে একটা নক করে ও নিশ্চয়ই আনন্দে পাগল হয়ে যাবে। মেয়েটির যে কি অবস্থা হবে ভাবতেই তার ভীষণ হাসি পেল। ভিতরে ভিতরে সে সুখের জোয়ারে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই সুখের অনুভূতি নিয়ে আরও একটা কবিতা লিখে ফেলতে ইচ্ছে করছে। অনেক দিন ধরেই তার মনের অলিগলিতে একটা কবিতার বই প্রকাশের সুপ্ত ইচ্ছে আছে। আজকের কবিতায় একজন নারীর একটা আস্ত কমেন্ট পেয়ে সে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল আগামী বইমেলাতেই আসছে তার তিন লাইনের কবিতা সমগ্র। কবিতার বই ছাপাতে কতগুলো কবিতা  লেখা লাগে সে জানে না। তার কাছে এমনিতে বিশ-ত্রিশ লাইনের হাজার পাঁচেক খানেক কবিতা লেখা আছে কিন্তু আগের কোনো কবিতায় কোনো নারী লাইক কমেন্ট দেয়নি। আজকের তিন লাইনের কবিতা সর্বপ্রথম কমেন্ট পড়েছে। তাই সে এখন থেকে তিন লাইনেই সব কবিতা লিখবে। এমন সময় টুং শব্দে মেসেজ এলো। কে মেসেজ দিল? তার জেলাস বন্ধুরা? পোস্টে মেয়েদের উপচেপড়া কমেন্ট দেখে ওরা নিশ্চয়ই হতভম্ব হয়ে গেছে। নাকি সেই মেয়েটিই? পাগলিটা নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে প্রিয় কবিকে নক করে বসেছে নাকি? সে মুখ টিপে হাসতে হাসতে মেসেজ খুলে দেখে সেই মেয়েটিই মেসেজ দিয়েছে। সে লিখেছে, ‘ভাই, আমার ছোট পোলার হাতে মোবাইল ছিল। কখন কি উল্টাপাল্টা টিপাটিপি করে আপনার পোস্টে কি লিখছে আমি জানি না। দেখা মাত্র আমি কমেন্ট ডিলিট করে দিছি। আর আপনি আমার লিস্টে কেমনে এইটাও বুঝতাছি না। সরি ভাই।’ মেসেজ দিয়েই মেয়েটি মোখলেসকে আনফ্রেন্ড করে দিল। ঘটনা সমাপ্ত।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর