সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

প্রেমিকার হাতে রান্না

রাফিউজ্জামান সিফাত

প্রেমিকার হাতে রান্না

মেসের নিচে লাবণী অপেক্ষা করছে। লাবণীর হাতে ধরে রাখা ছয় বাটির লম্বা সাইজের টিফিন ক্যারিয়ার। সে মোবাইল কানে ঠেকিয়ে মোখলেসকে বারবার মোবাইলে চেষ্টা করে যাচ্ছে, ওপাশে কেউ ফোন ধরছে না। লাবণী অস্থির হয়ে আবার কল দিচ্ছে আর উপরে মোখলেসের রুমের দিকে তাকাচ্ছে। পুরো ঘটনাটি মোখলেস নিজের রুমের জানালার ফাঁক দিয়ে দেখছে। তার হাতে থাকা মোবাইল সেটে লাবণীর কল বাজতে বাজতে বন্ধ হয়ে গেল, সে কল রিসিভ করল না। কল রিসিভ করলেই তাকে নিচে গিয়ে টিফিন বাটি উপরে নিয়ে আসতে হবে। মেস লাইফে বুয়ার রান্নার পরিবর্তে প্রেমিকার বাসা থেকে প্রেমিকার নিজ হাতে বানানো রান্না খেতে পারা ব্যাচেলার লাইফের পরম সৌভাগ্য। কিন্তু মোখলেস সেই সৌভাগ্যের ভয়ে কাবু। মোখলেসের কাছে লাবণীর হাতের রান্না সাক্ষাৎ আতঙ্কের নাম। লাবণী যতবার মোখলেসকে রেঁধে খাইয়েছে মোখলেস ততবার অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হয়েছে। লাবণী মাঝে মধ্যেই নতুন রান্নার চেষ্টা করে যার অধিকাংশই মুখে তোলা যায় না। নিজ বাসার কাউকে খাওয়াতে না পেরে সব খাবার সে নিয়ে আসে মোখলেসের জন্য। মোখলেসকে সেই রান্না খেয়ে রিভিউ করতে হয়। প্রথম প্রথম মোখলেস খুবই উৎসাহী ছিল। টিফিন বাটি নিয়ে মেসের সবাইকে দেখিয়ে বেড়িয়েছে। কিন্তু দুইবার খেয়েই মোখলেস বুঝেছে তার দ্বারা এই রান্না হজম সম্ভব না। তবুও প্রেমিকার মান রক্ষায় সে আরও কয়েকবার লাবণীর রান্না খেয়েছে এবং পেট খারাপ বাঁধিয়ে বিছানা নিয়েছে। বেশ কয়েকবার সে মেসের অন্যদের রান্না খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে, শুরুতে বন্ধুরা আগ্রহ নিয়ে রান্না মুখে তুললেও পরবর্তীতে মোখলেসের হাতে টিফিন বাটি দেখলেই ওরা ভয়ে মুখের সামনে দরজা আটকে দেয়। মোখলেস কয়েকবার না খেয়েই লাবণীকে রান্নার রিভিউ দেওয়ার চেষ্টা করেছে। প্রথমবার নির্বিঘ্নে পার পেয়ে গেলেও পরবর্তীতে ঠিকই সে লাবণীর হাতে ধরা খেয়েছে। সেবার কেঁদেকুটে এবং দামি উপহার প্রদান করে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিল। কিন্তু আজ কি হবে? কল বাজতে বাজতে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। মোখলেস লাফ দিয়ে উঠে জানালার ফাঁক দিয়ে দেখল রাস্তায় কেউ নেই। লাবণী চলে গেছে। মোখলেস স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। প্রাথমিক বিপদ কেটেছে। মোবাইল কেন রিসিভ করেনি সেই বিষয়ে পরে লাবণীর হাত-পা ধরে মাফ চেয়ে নেওয়া যাবে তবুও আজকের রান্না খাওয়া থেকে অন্তত মুক্তি পাওয়া গেল! গত সপ্তাহের রান্না খেয়ে সেই যে বুক পেট জ্বলছিল, সেই জ্বলুনি এখনো সারেনি। আজকে আবার লাবণীর রান্না খেলে মোখলেসকে নিশ্চিত হাসপাতালে ভর্তি হতে হতো। ব্যাচেলারদের পেট লোহা হজম করতে পারলেও লাবণীর রান্না হজম করতে পারে না। মোখলেস যখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে ঠিক তখন মেসের দরজায় ধমাধম কড়াঘাত। বিরক্তি নিয়ে দরজা খুলেই মোখলেসের জবান অফ হয়ে গেল। সামনে লাবণী দাঁড়িয়ে। কোমরে হাত রেখে সে মোখলেসের দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘টয়লেটে ছিলে, তাই না?’ লাবণী আরও দ্বিগুণ মিষ্টি হাসি হেসে হাতের টিফিন বাটি উঁচিয়ে বলল, ‘গত সপ্তাহে শুঁটকি মাছের বিরিয়ানি খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিলে, আজ তাই আবার বানিয়ে নিয়ে এলাম, সঙ্গে আছে এক্সপেরিমেন্টাল আরও তিন নতুন আইটেম। মেসে কি খাও না খাও! না খেয়ে খেয়ে তোমার মুখটা একদম শুকিয়ে এতটুকু দেখাচ্ছে! যাও, দ্রুত প্লেট নিয়ে এসো। আজ আমি নিজ হাতে তোমাকে প্লেটে বেড়ে খাওয়াবো।’ মোখলেস মনে মনে ভাবছে, ফুড পয়জনিং হলে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর