সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মোখলেসের চাপাবাজি

রাফিউজ্জামান সিফাত

মোখলেসের চাপাবাজি

মোখলেসের বিয়ের সংবাদ আমরা বিশ্বাস করিনি। তাকে বিশ্বাস না করার যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ  সে চাপাবাজ। মোখলেসের চাপাবাজি প্রথম ধরা পড়ে স্কুলে। স্কুলে থাকাকালীন সে প্রায়ই বলত, তার দুলাভাই দুবাই থাকে। দুবাই থেকে তার জন্য তিনটা উট নিয়ে আসবে। সেই উটের গল্প করে মোখলেস প্রায় গোটা স্কুল জীবন শেষ করে দিল। কিন্তু  মোখলেসের বন্ধুরা উটের দেখা পায়নি, দুলাভাইকেও দেখেনি। পরে জানা গেল, মোখলেসরা চার ভাই। বোন নেই। কলেজ জীবনের শুরুতে সে বলা শুরু করল, তার এক ব্রিটিশ স্বর্ণকেশী অতি রূপবতী তরুণীর সঙ্গে তুমুল প্রেম। অনলাইনে নাকি পরিচয়। চ্যাট করতে করতে প্রেম হয়ে গেছে। যদিও মোখলেসের ইংরেজির অবস্থা ভয়াবহ। সে কীভাবে ব্রিটিশ তরুণীর সঙ্গে চ্যাটে চ্যাটে প্রেম ঘটিয়ে ফেলল, তা ছিল এক বিস্ময়। যদিও তার হাবভাব দেখে মনে হতো প্রেমের টানে সেই তরুণী যে কোনো মুহূর্তে দেশে চলে আসতে পারে। প্রতিদিন কলেজে সে শার্টের পকেটে বেলি ফুলের মালা আর প্যান্টের পকেটে ‘ওয়েলকাম টু বিউটিফুল বাংলাদেশ’ (ওয়েলকাম এবং বিউটিফুল দুইটা বানানই ছিল ভুল) লিখা ভিউকার্ড নিয়ে ঘুরত। আজ পর্যন্ত সেই স্বর্ণকেশীর দেখা মেলেনি। এমনকি সেই মেয়ের ছবি কেউ দেখেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে মোখলেস ঘোষণা দিল, সে নায়ক হতে যাচ্ছে। ঘটনা হিসেবে জানাল, মামাতো ভাইয়ের বিয়েতে বাংলা সিনেমার এক ডিরেক্টর তাকে দেখে আগামী তিনটি বিগ বাজেটের সিনেমাতে নায়ক ক্যারেক্টারে কাস্ট করেছে। কয়েকদিনের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের বরফে শুটিং শুরু হচ্ছে। তাকে পুরো দুই মাস সেখানেই থাকতে হবে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন মোখলেস গায়ে হেভি মোটা উলের কোট, গলায় মাফলার আর চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে কাটিয়ে দিল। বিশ্ববিদ্যালয় শেষ হলো। তবুও সে নায়ক হতে পারল না। সেই মোখলেস যখন এসে জানাল, সে আগামীকাল পালিয়ে বিয়ে করছে, স্বভাবতই কেউ তাকে বিশ্বাস করিনি। মোখলেস নাছোড়বান্দা। তার বাসায় বিয়েতে কেউ রাজি নয়, তাই পালিয়ে কাজী অফিসে বিয়ে। সেখানে সাক্ষী লাগবে, বন্ধুদের সাহায্য ছাড়া এসব কাজ সম্ভব নয়। আমাদের যেতেই হবে। আমরা ওকে আর বিশ্বাস করলাম না। তাকে নিয়ে রসিকতা করলাম। সে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ‘দোস্ত, তোরা ছাড়া আমার বিয়ে হবে না। তোরা কাল সকাল ঠিক দশটায় চলে আয় ভাই।’ শুনে বন্ধুরা আবার হাসল। কেউ যেতে রাজি হলাম না। পরদিন সকালে কী ভেবে আমরা কয়েকজন বন্ধু মজার ছলে কাজী অফিসের সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দশটা ছুঁই ছুঁই, কারও দেখা নেই। বুঝলাম, চাপাবাজ মোখলেসের এইটা ছিল আরেকটা চাপা। আমরা ফিরে আসব তখন দেখি সে দূর থেকে হাত ইশারায় আমাদের ডাকছে। ওর সঙ্গে শাড়ি পরা ঘোমটা মাথায় একজন মেয়ে গুটিগুটি পায়ে হাঁটছে। আমরা বেশ অবাক হলাম, ঘটনা বোঝার জন্য থামলাম। মোখলেস আসল। তারপর আমাদের দিকে চেয়ে বলল, ‘তোদের ভাবি’ বলে মোখলেস মেয়েটির মাথার ঘোমটা উপরে তুলল। মেয়েটিকে দেখে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ। আমাদের সামনে এক রূপবতী তরুণী স্বর্ণকেশী চুলে বেলি ফুলের মালা গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে, হাতে ধরে রেখেছে ভিউকার্ড যেখানে লিখা ‘ওয়েলকাম টু বিউটিফুল বাংলাদেশ’ যার ওয়েলকাম এবং বিউটিফুল দুইটা বানানই ভুল। আমাদের দিকে চেয়ে মোখলেস বলল, ‘পালিয়ে বিয়ে করতে হবে না, দুলাভাই দেশে এসে বাসার সবাইকে বিয়েতে রাজি করিয়েছে। বিদেশি বউ নিয়ে কারও আর আপত্তি নেই। আগামী শুক্রবার তোদের আমার বিয়েতে দাওয়াত। উটের মাংস দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন হবে। মাঠে উট বেঁধে রেখে এসেছি, চল দেখবি।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর