সোমবার, ১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ফেসবুক বিড়ম্বনা

আফরীন

ফেসবুক বিড়ম্বনা

ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্ট যখন আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত লোকজন দিয়ে ভরে যায় তখন যে কী বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তা আর বলার নয়। আজকাল ফেক আইডিকে পাত্তা দেয় না লোকে। তাই মুখ লুকিয়ে ফেসবুক চালানোর উপায় নেই। কদিন খুব ভালো ভালো ছবি দিচ্ছি। বান্ধবী খোঁচা মেরে বলল, খুব ফুটানি দেখানো হচ্ছে না? পরিচিতজনের নানা কমেন্ট। তাই ভাবলাম একটু দুঃখ বিলাস করি। দুঃখ বিলাস করার আর মানুষ কই। জামাইকে নিয়ে একটু দুঃখ-বিরহ টাইপ-স্ট্যাটাস দিলাম। আমার শাশুড়ি মা এসে কমেন্ট করলেন, ‘কি গো মা ঝগড়াঝাঁটি করছোনি? ঝগড়াঝাঁটি করা ভালো নয়। তোমরা এই যুগের মাইয়া পোলা। মিলমিশ কইরা থাকবা। এসব যেন আর না দেখি।’ শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়রা এসে জ্ঞান দেওয়ার আগেই এক ফাঁকে পোস্টটা ডিলেট করে দিলাম। দুঃখ বিলাস ওইখানেই শেষ। আরেক দিনের ঘটনা। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বের হলাম কাশফুল দেখতে। কাশবনে কাশফুলের চেয়ে মানুষ বেশি। দাঁড়ানোর জায়গা নেই। আশপাশে খাবারের দোকান। যেখানেই দাঁড়িয়ে ছবি তোলার চেষ্টা করি সেখানেই হুড়মুড়িয়ে কেউ না কেউ ঢুকে যাচ্ছে। ঘণ্টাখানেক চেষ্টা করেও একটা সিঙ্গেল ছবি দূরে থাক দুটো সেলফিও তুলতে পারলাম না। এতদূর এসে কাশফুলের সঙ্গে যদি একটা ছবি তুলতে না পারি তবে তো এই শরৎকালটাই যাবে বৃথা। ফেসবুকেই বা দেব কী? অনেক ঘুরে, হেঁটে হেঁটে একটা জায়গা অবশেষে খুঁজে পেলাম। জায়গাটাকে ঠিক কাশবন বলা যায় না। তবে হালকা পাতলা কিছু কাশফুল আছে। সবচেয়ে বড় কথা লোকজন তেমন নেই। একটা গাড়ি পার্ক করা আছে কেবল। ভাবলাম মন্দ কী। গাড়ির সঙ্গেই না হয় তুলে ফেলি দু-একটা ছবি। এই আগুনলাগা বাজারে খেয়ে পরে টাকা বাঁচিয়ে কবে কিনব গাড়ি তার কি আর ঠিক আছে? আমি আর আমার জামাই দুই-চারটি কাশফুল পেছনে রেখে গাড়ির গায়ে হেলান দিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে কিছু সেলফি তুলে নিলাম। তারপর গাড়ির মালিক ফেরার আগেই চলে এলাম। যাক, শান্তি। ছবি তুলতে পেরেছি এ খুশিতে বাসায় এসে ফেসবুকে পোস্ট দিলাম ফিলিং হ্যাপি। সঙ্গে বহু পরিশ্রমের পর তোলা দুই-তিনখানা ছবি। রাতে পোস্ট করে ঘুমিয়ে গেছি। সকালে কাজের ব্যস্ততায় আর ফেসবুকে ঢোকার সময় হয়নি। দুপুরে খাওয়া-দাওয়া করে আরাম করে মোবাইলটা হাতে নিলাম লাইক কমেন্ট চেক করতে। ফেসবুকে ঢুকে আমার মাথায় হাত। ধুমসে লাইক কমেন্ট পড়েছে এবং গাড়ি কিনেছি ভেবে সবাই অভিনন্দন জানাচ্ছে। তাতেও অসুবিধা ছিল না। কিন্তু যখন দেখলাম বন্ধু-বান্ধব সব বাসার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ট্রিট নেবে বলে তখন তো আমার মাথায় হাত। তাও না হয় সামলানো যাবে। হাজার হোক বন্ধু-বান্ধব। কিন্তু যখন দেখলাম গ্রাম থেকে আত্মীয়-স্বজন সব রওনা দিয়েছেন গাড়ি দেখবে বলে, গাড়িতে চেপে ঘুরবে বলে তখন আমার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। স্বামীকে ফোন করে বললাম, তুমি আজ আর বাসায় এসো না। আমি বরং অফিসের দিকে আসছি। চল, দুজন মিলে সপ্তাহখানেকের জন্য কোথাও পালিয়ে যাই। আর এক মুহূর্ত দেরি না করে পোস্টটা ডিলেট করে ঘরে তালা মেরে বেরিয়ে পড়লাম অজানার উদ্দেশে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর