সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

দামের বাড়াবাড়ি

‘ভাই, কষ্ট পুনঃপ্রচার, জিনিসটা কী?’ তিনি ঝাড়ি মেরে বললেন, ‘তুই বুঝবি না। সংসার হোক তখন বুঝবি।’

ইকবাল খন্দকার

আমার এক বড়ভাই বললেন, তুই তো জানিসই, আমার ভুঁড়ি বেড়ে যাচ্ছিল। ভুঁড়ি কীভাবে কমানো যায় বা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, এই পরামর্শের জন্য গিয়েছিলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তারের একটাই পরামর্শ, প্রচুর ঘাম ঝরাতে হবে। আমি ডাক্তারকে কথা দিলাম, পারব। এটা কোনো ব্যাপারই না। তো আমি ডাক্তারকে কথাটা কেন দিতে পেরেছিলাম জানিস? কারণ, তখন প্রচুর গরম ছিল। ব্যায়াম কিংবা হাঁটাচলা তো অনেক পরের ব্যাপার, শুয়ে থাকলেও প্রচুর ঘাম ঝরত। কিন্তু যেই তাপমাত্রা কমে গেল, শীত শীত ভাব চলে এলো, তখন পড়ে গেলাম বিপদে। কারণ, ঘাম আর ঝরে না। এটা নিয়ে চিন্তা করতে করতে যখন ঘুম চলে আসছিল আর প্রচুর ঘুমাচ্ছিলাম, তখনই যেন কপাল খুলে গেল। জ¦ালানির দাম বৃদ্ধি ইস্যুতে শুরু হয়ে গেল পরিবহন ধর্মঘট। গাড়ি চলে না। ব্যস, আমাকে হেঁটে হেঁটে যেতে হলো অফিসে। কিন্তু দশ মিনিট হাঁটার পরই সমস্যা যেটা হলো, ঘামে প্রথমে ভিজল স্যান্ডো গেঞ্জি। তারপর শার্ট তো ভিজলই, উপরে কোট পরেছিলাম, সেটাও ভিজল। তারপর অফিসে গিয়ে মিথ্যা বলতে হলো। আমি জানতে চাইলাম, কী মিথ্যা বললেন? বড়ভাই বললেন, আমার এলাকায় হালকা বৃষ্টি হয়েছিল তো, তাই কোট ভিজে গেছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার কথা শুনে বস কী বললেন? বড়ভাই বললেন, বস বলল ভালো এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য। মানে যেসব এলাকায় বৃষ্টিবাদলা কম হয় আর কি। পুরো শহর কেন, পুরো দেশে বৃষ্টির খবর নেই। শুধু আমার এলাকায় বৃষ্টি হলো তো, তাই। আমি বললাম, আপনার এই লম্বা ঘটনা থেকে আমরা কী শিখলাম? বড়ভাই বললেন, সব ঘটনা থেকেই শিখতে হবে কেন? বিরাট শিক্ষা অনুরাগী হয়ে গেছিস, তাই না? এত শিখতে চাইলে ইংলিশ সেকেন্ড পেপার বই কিনে ভালোভাবে গ্রামার শিখ। টেন্স, পার্টস অব স্পিচ বেশি করে শিখিস। যা-ই হোক, বড়ভাইয়ের এই লম্বা কথামালা থেকে বিশেষ কিছু জানতে বা শিখতে না পারলেও পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার একটা টপিক পাওয়া গেল। বড় ভাইয়ের কথায় বাসাভাড়া নেওয়ার প্রসঙ্গটা এসেছে না? এটাই হলো টপিক।

আমার এক ছোটভাই বলল, বুদ্ধি করে খুব ভালো একটা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়েছিলাম ভাই। এই যে জ¦ালানির দাম বাড়ল, গাড়ির চলাচল বন্ধ হলো, তবু কোনো সমস্যা হয়নি। আমি বললাম, এটা কোন এলাকা বল তো? ছোটভাই বলল, পুরান ঢাকা। ওই এলাকায় ঘোড়ার গাড়ি চলে তো! আর আপনি তো জানেনই, ঘোড়ারা জ¦ালানির আওতামুক্ত।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বাড়ছে। এখন আর বাজারে যেতে ইচ্ছে করে না। কী করা যায় বলেন তো! পাশ থেকে আরেক প্রতিবেশী বলে উঠলেন, বাজারে যেতে ইচ্ছে করে না, তাই না? তাহলে গত সপ্তাহে যে বউ-বাচ্চা নিয়ে গেলেন? প্রথম প্রতিবেশী বললেন, বউ বাচ্চা নিয়ে তো ঘুরতে গিয়েছিলাম। কক্সবাজারে। এবার দ্বিতীয় প্রতিবেশী বললেন, কক্সবাজার কি বাজার না? আমার এক ভাবি বললেন, আজকাল মেকআপ বেশি বেশি কিনতে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে খুব বড় বিপদে পড়ে যেতে হবে। কবে যে জিনিসপত্রের দাম কমবে! আমি বললাম, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে মেকআপের কী সম্পর্ক? মেকআপের দাম তো বাড়েনি। ভাবি বললেন, আপনি হয়তো বিষয়টা বুঝতে পারেননি। বাজারে গিয়ে যখন শুনি দশ টাকার জিনিস ত্রিশ টাকা, তখন কানের পাশ দিয়ে চিকন ঘাম ছুটে যায় তো! ব্যস, এই ঘামে মেকআপ নষ্ট হয়ে যায়। আমি বললাম, কিন্তু এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় কী? ভাবি বললেন, না, মানে কাঁচাবাজারের পাশে বিউটি পার্লার না হোক, অন্তত একটা বড় আয়না স্থাপন করলে উপকার হতো। যাতে পিঁয়াজ-মরিচের বাড়তি দাম শুনে ঘামে মেকআপ নষ্ট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিয়ে মেকআপটা মেরামত করে আসা যায়।

দামের বাড়াবাড়ি নিয়ে আমার এক বড় ভাই  উচ্চ পর্যায়ের যন্ত্রণায় আছেন। তার নাকি কষ্ট পুনঃপ্রচার হচ্ছে। তাকে দেখে জানতে চাইলাম, ‘ভাই, কষ্ট পুনঃপ্রচার, জিনিসটা কী?’ তিনি ঝাড়ি মেরে বললেন, ‘তুই বুঝবি না। সংসার হোক তখন বুঝবি।’ কবে পাত্রী দেখব, কবে বিয়ে হবে, কবে সংসার হবে সেই আশায় বসে থাকা ছাড়া তো কিছু করার নেই। তাই চুপ মেরে গেলাম।

কিন্তু বড় ভাইয়ের অবস্থা খারাপ। জ্ঞান দিতে না পারলে তার এ অবস্থা হয়। আমাকে ভুল ঝাড়ি দিয়ে ফেলেছেন টের পেয়ে নিজে থেকেই বললেন, ‘শোন, বুঝবি না যদিও, তবু বলি। তোর ভাবি ইদানীং বাজার সদাই নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি করছে। বাজার না নিয়ে গেলে রাতে আলাদা ঘরে ঘুমাতে বলে। এক সপ্তাহ ধরে ড্রয়িংরুমে ঘুমাচ্ছি। সেটাও সমস্যা না। সমস্যা হলো ড্রয়িংরুমে ঘুম আসে না। তখন টিভিতে বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলাগুলো পুনঃপ্রচার দেখি। আর এভাবে প্রিয় দলকে আবারও হারতে দেখে কষ্ট লাগছে মানে কষ্ট পুনঃপ্রচার হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর