সোমবার, ৮ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রেস্টুরেন্ট বিল

রাফিউজ্জামান সিফাত

রেস্টুরেন্ট বিল

‘দোস্ত, আমাকে বলতে পারবি জীবনের মানে কী! আমি জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাচ্ছি না।’ খলিলের মুখে এমন কথা শুনে আমরা বুঝে গেলাম, আবারও ওর ব্রেকাপ হয়েছে। ব্রেকাপের পর প্রথম এক সপ্তাহ খলিল জীবনের অর্থ খুঁজে পায় না। এবারের ব্রেকাপের কারণ জিজ্ঞেস করাতে সে কাঁধ ঝাঁকাল, ‘আগের সাতজন যে কারণে চলে গিয়েছিল, এইটাও একই কারণ। রেস্টুরেন্টের বিলের অর্ধেক ওকে দিতে বলেছিলাম।’ আমরা হতাশ হয়ে মাথা নাড়লাম। তার এই এক সমস্যা। প্রেমিকার কাছে সে রেস্টুরেন্টের বিলের অর্ধেক দাবি করে। অর্থ সম্পদে তার অভাব নেই। তার বাবার প্রচুর টাকা। যদিও খলিল কিছু করে না। শুধু টাকা উড়ায়। বিশেষত প্রেমিকাদের জন্য সে উদার। মুক্তহস্তে শপিং থেকে শুরু করে মোবাইল বিল সবকিছু সে দিতে প্রস্তুত কিন্তু বাইরে কোথাও খেতে গেলে খাবার বিলের অর্ধেক নিজে শোধ করে বাকিটা এগিয়ে দেয় প্রেমিকার দিকে। খলিলের এমন অপ্রেমিকসুলভ কর্মকান্ড দেখে মেয়েরা ওর সঙ্গে বেশিদিন সম্পর্ক রাখে না। আমরা বন্ধুরা ওকে বহুবার বুঝিয়েছি, প্রেমিকা আর বন্ধু এক না রে! বন্ধুদের কাছে রেস্টুরেন্টের অর্ধেক বিল দাবি করা যায় কিন্তু প্রেমিকা ভিন্ন কেইস। ‘সেধে সেধে বিল প্রদান প্রেমিকের দায়িত্ব, প্রেমিকার পাওনা।’ যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে। কিন্তু খলিল মানতে রাজি না। তার কথা, দুজনেই যেহেতু খেয়েছি, সুতরাং দুজনকেই বিল দিতে হবে। আমরা বন্ধুরা ‘তোর যা ইচ্ছা কর’ বলে চলে আসি। গভীর রাতে খলিল বন্ধুদের গ্রুপে কল দেয়। তাকে বেশ উত্তেজিত মনে হয়। চিৎকার করে সে জানায়, বিল বিষয়ক সমস্যার একটা সমাধান সে পেয়েছে। যেহেতু রেস্টুরেন্টের বিল নিয়েই যাবতীয় ভ্যাজাল, তাই খলিল নিজেই একটা খাবারের রেস্টুরেন্ট দেবে। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে থাকবে আকর্ষণীয় অফার। কাপলদের মধ্যে গার্লফ্রেন্ড যদি প্রথম বিলের অর্ধেক নিজে দেয় তবে পরবর্তী খাবারের আইটেম ফ্রি। ফ্রি অফারের জন্য হলেও প্রেমিক, প্রেমিকা সমান হারে রেস্টুরেন্টের বিল প্রদানে আগ্রহী হবে। খলিল তার অভিনব আইডিয়া নিয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। আমরা বন্ধুরা তেমন পাত্তা দিলাম না। ‘তোর রেস্টুরেন্ট চলত না’ বলে কল কেটে দিলাম। কিন্তু সে থামল না। মাস দুয়েকের  ভিতর সে সত্যি সত্যি একটা রেস্টুরেন্ট দিয়ে দিল। নাম দিল- ‘খাইব ষোল আনা, শুধিব দুইজনা’। আমাদের অবাক করে দিয়ে তার রেস্টুরেন্ট ব্যবসা হিট। কাপলদের উপচে পড়া ভিড়। বাইরে লাইন দিয়েও ভিতরে জায়গা মেলে না। একদিন খলিলের দেখা, আমরা বন্ধুরা জিজ্ঞাস করলাম, ‘কি রে অনেকদিন হলো, জীবনের মানে খুঁজছিস না! আর ব্রেকাপ হয়নি বুঝি?’ খলিল ক্যাশ কাউন্টারে টাকা গুনতে গুনতে বলল, ‘দোস্ত, ব্যবসা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকি, আজকাল প্রেম করারও সময় পাচ্ছি না রে!’ ব্যবসা যে জমে গেছে সেটা তো বুঝলাম। কিন্তু কেমন জমেছে সেটা টাকার হিসাবে বুঝে নেওয়া দরকার। আমরা বললাম, ‘খুব লাভ হচ্ছে, তাই না?’ এ কথা শুনেই খলিল খেপে গেল। বলল, ‘লাভ না, লাভের আন্ডা! পরের আইটেম ফ্রি খাওয়ার জন্যই প্রেমিক-প্রেমিকার ভিড়। ফ্রি খাওয়াতে খাওয়াতে ব্যাংক ব্যালেন্স শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তাও চলছিল। তবে আজকে টের পেলাম- অনেক ছেলে মেয়ে ফ্রি খাওয়ার জন্য ভুয়া প্রেমিক-প্রেমিকা সেজে আমার রেস্টুরেন্টে আসছে!’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর