সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

শীত শীত লাগে

‘শীত শীত লাগার কারণে ফ্যান বন্ধ রাখি। অথবা স্পিড কমিয়ে দিয়ে রাখি। এখন খুব ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে ফ্যানে কী পরিমাণ ময়লা।’

ইকবাল খন্দকার

শীত শীত লাগে

আমার এক ছোট ভাই বলল, গানে যতই বলুক, ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’, আমি কিন্তু সেটা বলব না। আমি বলব, ‘আগেই বরং কষ্টে দিন কাটাইতাম। আর এখন কী সুন্দর দিন কাটাচ্ছি।’ আমি জানতে চাইলাম, কী রকম? ছোট ভাই বলল, কী রকম আবার? এখন অনেক রক্ত বেঁচে যাচ্ছে। এবার আমার অবাক হওয়ার পালা, বলিস কী! রক্ত বেঁচে যাচ্ছে মানে? ছোট ভাই বলল, না মানে ব্যাপার খুবই সহজ এবং সরল। আগে গরমের চোটে খালি গায়ে শোয়া ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এতে মশাদের ঈদ লেগে যেত। আর এখন শীত শীত লাগে। গায়ে পাতলা কাঁথা বা চাদর দিয়ে শুই। ফলে মশাদের হরিষে বিষাদ। হরিষে বিষাদ ছারপোকাদেরও। যেহেতু আগে খালি গায়ে শুইলেও এখন গায়ে অন্তত একটা টি-শার্ট থাকে। বুঝতেই পারছেন, কিছু রক্ত বাঁচাতে পারছি মশার হাত থেকে আর কিছু রক্ত ছারপোকার হাত থেকে। অতএব, এই শীত শীত লাগা অব্যাহত থাকুক। কী বলেন? আমি কিছুই বললাম না। তবে মনে মনে অনেক কিছুই বললাম এই ভেবে, যেহেতু শীত শীত আবহাওয়ার কারণে আমার আজকাল ঘুমের সমস্যা হচ্ছে। আর ঘুমের সমস্যাটা হচ্ছে জনৈক প্রতিবেশীর কারণে। বারান্দায় বসে রাত উপভোগ করার কবিসুলভ অভ্যাস যার মধ্যে বিদ্যমান। তো এই ভদ্রলোক অন্য সময়ের মতোই গত কয়েক দিন ধরেও রাতদুপুরে বারান্দায় বসে রাত উপভোগ করছিলেন। এতে হয়েছে কী, হিমেল বাতাসে তার কাশি বেড়ে গেছে। আর বুকে বসে গেছে ঠান্ডা। এখন তিনি এমন জোরে জোরে একেকটা কাশি ডেলিভারি দেন, কী আর বলব। কাশি তো নয়, যেন কেউ ড্রাম বাড়ি মারছে। দ্রিম দ্রিম। কানের কাছে এরকম বাড়ি চলতে থাকলে ঘুমাতে পারে সাধ্য কার? আমার এক বড়ভাই বললেন, শীত শীত লাগতে শুরু করার পর থেকেই লজ্জায় পড়ে গেলাম। বিশেষ করে বাসায় মেহমান ঢোকাতে খুব লজ্জা লাগছে। আমি তার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে বললাম, শীত শীত লাগলে বাসায় মেহমান ঢোকানো যায় না, এই রীতি কই পেলেন? বড়ভাই বললেন, আগে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা কর। আমার কাছে জগতের সবচেয়ে কঠিন কাজ মনে হয় ফ্যান মোছাকে। তবে যখন প্রচন্ড গরম থাকে, তখন ফ্যান না মুছলেও চলে। কারণ, ফ্যান তুফানবেগে ঘোরে। আর এই ঘোরার কারণে বোঝা যায় না ফ্যানে কী পরিমাণ ময়লা আছে। কিন্তু এখন শীত শীত লাগার কারণে ফ্যান বন্ধ রাখি। অথবা স্পিড কমিয়ে দিয়ে রাখি। এখন খুব ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে ফ্যানে কী পরিমাণ ময়লা। এ অবস্থায় বাসায় মেহমান ঢোকানো যায় কি না, তুই-ই বল। আমি বললাম, সব মেহমানকে ঢুকতে না দিয়ে বেছে বেছে ঢোকান। মানে এরকম মেহমানদের ঢুকতে দেন, যাদের চোখে সমস্যা আছে। অর্থাৎ ফ্যানে ময়লা থাকলেও সেভাবে দেখতে পাবে না। আবার তাদেরও ঢুকতে দিতে পারেন, যাদের ঘাড়ে ব্যথা। যাতে ঘাড় উল্টিয়ে ফ্যানের দিকে না তাকাতে পারে আরকি। আমার এক ভাবি বললেন, শীত শীত লাগার এই আবহাওয়াটা কয়দিন পরে শুরু হলেও পারত। এতগুলো টাকা খরচ করলাম... নাহ, এটা মানা যায় না। আমি তার অসম্পূর্ণ কথার অর্থ তুলতে না পেরে বললাম, কী হয়েছে বলেন তো! এসি কিনেছিলেন নাকি? না, মানে এসি কিনেছেন আর শীত শীত আবহাওয়া শুরু হয়ে গেছে, ব্যাপারটা কি এমন? ভাবি বললেন, জি না। কিনেছিলাম দামি একটা চেইন। এর মধ্যে শীত শীত আবহাওয়া শুরু হয়ে গেছে। আমার আবার ঠান্ডা সমস্যা। ব্যস, সারা দিন গলায় মাফলার  পেঁচিয়ে রাখতে হচ্ছে। মাফলারের জন্য চেইনটা কেউ দেখতেই পাচ্ছে না! কী ট্র্যাজেডি! আমার বাসার পাশের চায়ের দোকানদার বলল, দড়ি লাগবে। দড়ি। আর পারতেছি না। আমি বললাম, বলেন কী! গলায় দড়ি দেবেন নাকি? কিন্তু এটা তো ঠিক না। দোকানদার বলল, যা বোঝেন না, তা নিয়া কথা কইতে আইসেন না। আমি অনুরোধ করলাম, যেহেতু বুঝি না, একটু বোঝান। দোকানদার বোঝালেন, শীত শীত আবহাওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই একদল পাবলিক আমার চায়ের চুলার কাছাকাছি আইসা বসার চেষ্টা করতাছে। মানে যাদের আগুন পোহানির ইচ্ছা আছে আরকি। তো আসে ভালো কথা, আবার আলাপও জুইড়া দেয়। এতে তাদের মুখ থেকে বাইর হওয়া থুতু, পানের রস ইত্যাদিতে আমি খুব ঝুঁকির মধ্যে আছি। এ জন্য চারপাশে একটা দড়ি দিয়া রাখমু। যাতে কাছে না আসতে পারে। বোঝা গেল?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর