সোমবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

মন খারাপের ওষুধ

তানভীর আহমেদ

মন খারাপের ওষুধ

ফাটা কপাল হলে যা হয়। কাউকে সাপোর্ট করলে তারও কপাল ফেটে যায়। যে কারণে টিভিতে খেলা দেখি না। যে দলকে সাপোর্ট করি সে দলই হেরে যায়। ঘটনা এত ছড়িয়ে গেছে যে, খেলার গুরুত্বপূর্ণ সময় আমাকে কেউ টিভির সামনে দাঁড়াতে দেয় না। শুধু খেলা নয়, যে কোনো বিষয়ে এ ধরনের বিপত্তি দেখা দেয়। যেদিন ট্রেনে চড়ি সেদিন ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। যেদিন পথে বাসে যাই, রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ জ্যাম লেগে যায়। বাজারে একদিন মরিচ কিনতে গেলাম। গিয়ে শুনি ওইদিনই কেজিতে দাম বেড়েছে ২০ টাকা। মোবাইলে ফেসবুক ইনস্টল করলাম। সে রাতেই বিশ্বজুড়ে ফেসবুকের সার্ভার ডাউন হয়ে গেল। এসব ঘটনা আশপাশের অনেকেই জেনে গেছে। তাদের একজন মামুন ভাই। মহল্লার বড় ভাই। এক সন্ধ্যায় পথ আটকালেন তিনি। বললেন, ‘ছোট ভাই, তোমার একটা হেল্প লাগবে।’ ‘কী হেল্প?’, জানতে চাইলাম। লজ্জায় মুখটা লাল করে বললেন, ‘আমি একটা মেয়েকে লাভ করি। ওর বিয়ে ঠিক হয়ে যাচ্ছে অন্য জায়গায়।’ ‘এখন আপনার কী সমস্যা? বিয়েতে দাওয়াত দেয়নি?’ মামুন ভাই অবাক হয়ে আমাকে দেখলেন। তারপর বললেন, ‘ফাইজলামি করছি বলে মনে হয়? বিষয়টা সিরিয়াস। আমার গার্লফ্রেন্ডের বিয়ে ভাঙানোর ব্যবস্থা করো।’ এটা কী ধরনের প্রস্তাব। ‘ভাই, বলেন কি! সেটা কীভাবে সম্ভব?’ বললেন, ‘তুমি মেয়েটার বাসায় যাও। আজ ওকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। তুমি গেলে নিশ্চয়ই ওখানে ভালো কিছু হবে না। মানে, বিয়ে না হওয়ার সম্ভাবনা নব্বই শতাংশ বেড়ে যাবে।’ কথা শুনে কিছুটা মন খারাপ হলেও বললাম, ‘মেয়েটা কে?’ ‘তোমার প্রতিবেশী জরিনা।’ ‘আচ্ছা, যাব।’ বলেই চলে এলাম। কি কপাল! রাতে জরিনাদের বাসায় যেতে হলো। জরুরি খবর দিয়ে আমাকে নেওয়া হয়েছে। গিয়ে দেখি বাসাভর্তি মেহমান। পাত্রপক্ষ জরিনাকে দেখতে এসেছে। টেবিলভর্তি খাবার। ভদ্রতা করে আপ্যায়নে অংশ নিতে বলা হলো। ভদ্রতা রক্ষা করার জন্য এক কথায় টেবিলে বসে পড়লাম। কথাবার্তা শুনে যা বুঝলাম পাত্রপক্ষ জরিনাকে পছন্দ করেছে। কিন্তু জরিনা গড়িমসি করছে। আমাকে ডাকা হয়েছে জরিনাকে একটু বুঝিয়ে বিয়েতে রাজি করানোর জন্য। ও নাকি আমাকে খুব মানে। আমার সঙ্গে কথা বলে কি হলো কে জানে, জরিনার মত বদলাল। গ্রিন সিগনাল পেয়ে পাত্রপক্ষ হুট করে সিদ্ধান্ত নিল, আজ রাতেই বিয়ে পড়ানো হোক। এখনই কাজী ডেকে নিয়ে আসতে হবে। কারও আর তর সইছে না। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে শাড়ি, আংটি কেনা হলো। ফুল দিয়ে ঘর সাজানো হলো। আমি কাজী নিয়ে হাজির। বিয়ে পড়ানো হলো। জরিনার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আমার মামুন ভাইয়ের কথা মনে পড়ল। এতক্ষণ বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ততায় সব ভুলে গিয়েছিলাম। তখন মনে পড়লেই কি, আর না পড়লেই কি। বাসায় ফিরে দিলাম ঘুম। পরদিন ভোরে ঘুম ভাঙল মামুন ভাইয়ের ডাকাডাকিতে। উঠে দেখি মামুন ভাইয়ের মুখ গম্ভীর। ‘জরিনার তো কাল রাতে বিয়ে হয়ে গেছে। ঘটনা কী বল তো?’ মনে মনে বললাম ঘটনা আর কি, আমার সাপোর্টে আপনার কপাল পুড়ছে। মনের কথাটা না বলে, মুখে বললাম, ‘ভাই, ঘটনা কিছুই না। হুট করে সব হয়ে গেল।’ মামুন ভাই বেশ উদাস হয়ে বসে আছেন।  স্পষ্ট বুঝতে পারছি কেন তার মন খারাপ। বললাম, ‘ভাই, মন খারাপ কইরেন না। বউভাত, বিয়ের সব প্রোগ্রাম কিছু হয় নাই। হবে সামনের সপ্তাহে। চট্টগ্রামের মেজবানের আয়োজন থাকছে। আপনি যেন সবার আগে দাওয়াত পান সেই ব্যবস্থা করব।  তবু মন খারাপ কইরেন না।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর