শিরোনাম
সোমবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘোরাঘুরি নাকি ওড়াউড়ি

আপনি দরকার হলে ‘গাইড’ নেবেন। প্রতিবেশী এবার ছুড়ে বসলেন এক বিস্ফোরক মন্তব্য- গাইডের ওপর নির্ভর করা লোক আমি না। ছাত্রজীবনেও আমি গাইডের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। মূল বই পড়েছি।

ইকবাল খন্দকার

 আমার এক বড়ভাই বললেন, মানুষ আজকাল যেভাবে ঘুরছে, তাতে আমি নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে শৈশব- কৈশোরের কথা। আমি বললাম, নিশ্চয়ই আপনি শৈশব-কৈশোরে প্রচুর ঘোরাঘুরি করতেন। যে কারণে মানুষের ঘোরাঘুরি দেখে সেই সময়ের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছেন। সমস্যা কী ভাই? আপনি নিজেও একদিন ঘুরে আসেন না! আমার কথায় বড়ভাই যারপরনাই বিরক্ত হলেন। বললেন, আন্দাজে কথা বলার অভ্যাসটা তোর গেল না। আমি বলি কী আর আমার সারিন্দা বাজায় কী! যত্তসব। এবার আমি তাকে সবিনয়ে অনুরোধ করলাম ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলার জন্য। অর্থাৎ এটা একটু সহজ করে বলার জন্য যে, মানুষ ঘুরছে, তাতে তিনি কেন নস্টালজিক হচ্ছেন, কেন তার শৈশব-কৈশোরের কথা মনে পড়ছে। বড় ভাই আমার অনুরোধ রাখলেন। বললেন, মানুষ যেভাবে ঘুরছে, ছোটবেলায় এভাবে আমাদের লাটিম ঘুরত। তো মানুষের ঘোরা দেখে আমার মনে পড়ে যাচ্ছে লাটিম ঘোরার কথা, লাটিম ঘোরানোর কথা। সত্যি, লাটিমের কথা মনে পড়ার কারণে আমি নস্টালজিক হয়ে যাচ্ছি। আমি বললাম, তাও ভালো, মানুষের ঘোরা দেখে আপনার পরীক্ষার হলের কথা মনে পড়ছে না। বড়ভাই চটে গিয়ে বললেন, কেন? মানুষের ঘোরা দেখে পরীক্ষার হলের কথা মনে পড়বে কেন? আমি বললাম, না, মানে আপনি প্রায়ই বলেন না, পরীক্ষার হলে ঢুকে প্রশ্নপত্রের দিকে তাকালেই নাকি আপনার মাথা ঘুরত! মানে ঘোরার বিষয়টা এখানেও ছিল আর কি।

আমার এক ছোটভাই বলল, আজকাল মানুষ প্রচুর ঘুরছে। আমিও ঘুরতে যেতে চাই। কিন্তু কোথায় যাওয়া যায়, ভেবে পাচ্ছি না। আপনি আমাকে একটু পরামর্শ দেন তো, কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়? আমি বললাম, অফিশিয়াল কাজ থাকলে বলিস। তোকে পাঠাব। এক ফাইল সাইন করাতে কত জায়গায় ঘুরতে হয় টের পাবি। আশা করি তোর ঘোরার শখ পূরণ হবে।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, সবাইকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে আপনার ভাবি বলতেছে দেশের বাইরে নাকি ঘুরতে যাবে। কিন্তু আমি রাজি হচ্ছি না। কেন রাজি হব বলেন? দেশে কি ঘোরার জায়গা কম আছে? ঘুরতে হলে শুধু বিদেশেই যেতে হবে কেন? এত বিদেশপ্রেম কেন আমাদের? আমি প্রতিবেশীর পক্ষ নিয়ে কিছু বলতে শুরু করব, এমন সময় তার স্ত্রী হাজির। অর্থাৎ যাকে নিয়ে তিনি এতক্ষণ কথা বলছিলেন। তো ভাবির চেহারা দেখে আমি বুঝে গেলাম, তিনি আড়ালে দাঁড়িয়ে সব কথাই শুনে ফেলেছেন। অতএব অপেক্ষায় থাকলাম বিস্ফোরণের। বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হলো না। তিনি বিস্ফোরিত হলেন এভাবে- তুমি বিদেশে কেন ঘুরতে যেতে চাও না, এটা মানুষ না জানলেও আমি তো ঠিকই জানি। ইংরেজিতে যে লোক এক গ্লাস পানি পর্যন্ত চাইতে পারে না, তার মতো ইংরেজির জাহাজ বিদেশে যাওয়ার বিরোধিতা করবে না তো কে করবে? আমি ভাবিকে বলে-কয়ে বিদায় করলাম। আর প্রতিবেশীকে বললাম, ইংরেজিতে দুর্বল থাকলে বিদেশে ঘুরতে যাওয়া যাবে না, তা না। আপনি দরকার হলে ‘গাইড’ নেবেন। প্রতিবেশী এবার ছুড়ে বসলেন এক বিস্ফোরক মন্তব্য, গাইডের ওপর নির্ভর করা লোক আমি না। ছাত্রজীবনেও আমি গাইডের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম না। মূল বই পড়েছি। আমার এক বন্ধু বলল, সবাইকে ঘুরতে যেতে দেখে খুব ইচ্ছা হচ্ছে কোথাও ঘুরতে যাই। কিন্তু তোর ভাবির জন্য পারি না। সে নিজেও কোথাও ঘুরতে যেতে চায় না, আমাকে একাও যেতে দিতে চায় না। আমি অবাক হয়ে বললাম, এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। এমন হলে তো চলবে না। সমস্যা নেই, আমি একবার ভাবির সঙ্গে কথা বলব, তাকে বোঝাব। ঠিকই একদিন পরে ভাবিকে ফোন দিলাম। বললাম, দেখেন ভাবি, সবাই কিন্তু এই সিজনে ঘুরতে যাচ্ছে। আপনারাও ঘুরে আসেন। ভাবি বলল, সবাই যাচ্ছে বলে আমাদেরও যেতে হবে, এমন কোনো কথা আছে? আমি একটু হোঁচট খেলাম। তবু বললাম, দেখেন, ঘুরতে গেলে কিন্তু অনেক কিছু দেখা যায়। এতে মন ভালো থাকে। ফ্রেশ থাকে। ভাবি বললেন, এখন থেকে মাসে দুইশ টাকা বেশি খরচ হবে। তার পরও ঘুরতে যেতে হবে কেন? আমি বললাম, আপনার কথা ঠিক বুঝলাম না। ভাবি বললেন, আগে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের বিল প্রতি মাসে দিতাম ৮০০ টাকা। এখন আরও স্পিডওয়ালাটা নিয়েছি ১ হাজার টাকা দিয়ে। আমি বললাম, এসবের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়া না যাওয়ার সম্পর্ক কী? ভাবি বলল, আপনি বললেন না, ঘুরতে গেলে নাকি অনেক কিছু দেখা যায়?  আমি যেহেতু বেশি স্পিডওয়ালা নেট নিয়েছি, অতএব সবকিছু আমি ঘরে বসেই দেখতে পারব। এই তো একটু আগে গুগলে সার্চ দিয়ে আগ্রার তাজমহলটা দেখলাম। ভাল্লাগছে কিন্তু।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর