সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

বছর নয়া, প্ল্যান পুরানা

ইকবাল খন্দকার

বছর নয়া, প্ল্যান পুরানা

আমার এক বড় ভাই বললেন, যতবার নতুন বছর আসে, ততবারই সেই চিঠির যুগের কথা মনে পড়ে যায়। স্বর্ণালি সেই চিঠির যুগ, আহা! আমি বললাম, নতুন বছরের সঙ্গে চিঠির যুগের কী সম্পর্ক? বড় ভাই বললেন, সম্পর্কের কথা কখন বললাম? আমি কোনো সম্পর্কের কথা বলিনি। তবে এটা কিন্তু সত্য, নতুন বছর যখন আসে, তখন আমার চিঠির যুগের কথা মনে পড়ে। আমি তাকে অত রহস্য না করে মূল ব্যাপারটা খুলে বলতে অনুরোধ জানালাম। বড় ভাই বললেন, চিঠির যুগে আমরা কী করতাম মনে আছে? যদি গ্রাম আর ডাকঘর একই হতো, তাহলে লিখতাম ‘গ্রাম : অমুক’, ‘ডাকঘর : ঐ’। তার মানে দ্বিতীয়বার একই জিনিস না লিখে ‘ঐ’ লিখে দিতাম। তো প্রতিবছর মানুষ জিজ্ঞেস করে, নতুন বছরের পরিকল্পনা কী। আমি বলে দিই, ঐ। তার মানে প্রতিবছর একই পরিকল্পনা থাকে। কিন্তু কোনো বছরই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারি না। ফলে পরিকল্পনা পরিকল্পনাই থেকে যায় এবং পরের বছরের জন্য থেকে যায়। এবার আমি বললাম, ঐ। বড় ভাই বললেন, ‘ঐ’ মানে? আমি বললাম, ‘ঐ’ মানে আমারও একই অবস্থা। আমার এক ছোটভাই বলল, গত বছর অনেকটাই নিশ্চিত ছিলাম, একটা প্রেম হবে। কিন্তু হয়নি। এবার আমি নতুন করে আশায় বুক বেঁধেছি। মানে আশা করছি প্রেম একটা হবেই হবে। আমি বললাম, এতটা নিশ্চিত কীভাবে হলি? ছোট ভাই বলল, প্রেম মানেই তো দুজনের একটা ব্যাপার স্যাপার। খেয়াল করে দেখে ২০২২-এর মধ্যে কতগুলো দুই! তাহলে এই বছরে প্রেম হবে না তো কোন বছরে হবে? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, জিনিসপত্রের দাম কমবে, এমন একটা আশ্বাস গত বছর অনেকবার পেয়েছি। কিন্তু বছর শেষে মনে হয়েছে, এগুলো মিথ্যা আশ্বাস। তবে এই বছর আশা করছি জিনিসপত্রের দাম অবশ্যই কমবে। এবার পাশ থেকে আরেক প্রতিবেশী বলে উঠলেন, জিনিসপত্রের দাম কমার লক্ষণ আমিও দেখতেছি। তবে শর্ত একটাই। যে কোনো জিনিস অর্ধেক কিনতে হবে। যেমন এক কেজি চালের দাম যদি ষাট টাকা হয়, অর্ধেক কিনলেই পাওয়া যাবে অর্ধেক দামে। মানে ত্রিশ টাকায়। কত সাশ্রয় না? আমি বোঝার চেষ্টা করলাম, প্রতিবেশী মজা করলেন নাকি সত্যি সত্যি বললেন। কিন্তু বুঝতে না পেরে হাঁটা দিলাম অন্যদিকে। কিছুদূর যেতেই এলাকার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। তিনি বললেন, নতুন বছর কেমন যাবে, এটা জানার জন্য আমি একজন জ্যোতিষী খুঁজছিলাম। তোর খোঁজে ভালো কোনো জ্যোতিষী আছে নাকি? হাত দেখে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বলে দিল, এই আরকি। আমি বললাম, ভালো জ্যোতিষী অবশ্যই আছে। তবে আপনার হাতের কী অবস্থা, সেটা আগে জেনে নিতে হবে। কারণ, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আজকাল যারা হাত দেখাতে আসছে, তাদের কারও হাতের রেখাই ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না। ফলে ভবিষ্যদ্বাণী করতে সমস্যা হয়ে যাবে। দেখা যাচ্ছে বলা হলো অর্থযোগ আছে, হয়ে গেল অর্থবিয়োগ। বড় ভাই অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, কেন? হাতের রেখা ঠিকঠাক দেখা যাচ্ছে না কেন? আমি বললাম, করোনার প্রভাবে। দৈনিক চল্লিশ-পঞ্চাশবার বিশ সেকেন্ড করে হাত ধোয়ার পর হাতের রেখা কি অবশিষ্ট থাকে? আমার এক ভাবি বললেন, করোনার জন্য গত বছর কেনাকাটাটা একটু কমই করতে পেরেছি। তবে এই বছর পুষিয়ে নিতে পারব বলে আশা করছি। আমি বললাম, এই বছর যদি করোনা আবার বাড়ে, তাহলে কী করবেন? ভাবি বললেন, কোনো সমস্যা নেই। করোনা বাড়লে করোনা রিলেটেড জিনিসপত্র কেনার জন্য ঘন ঘন কেনাকাটায় যাব। যেমন- মাস্ক, হ্যান্ড সানিটাইজার, গ্লাভস ইত্যাদি। মোটকথা, কেনাকাটা করতে পারলেই হলো। কী কিনলাম, সেটা বড় কথা নহে। আমার ছোট ভাই বলল, যা বুঝলাম, গত বছরের চেয়ে এই বছরটা আমার ভালো কাটবে। গত বছর শব্দদূষণ আমাকে সাংঘাতিক জ¦ালিয়েছে। রাস্তার পাশে বাসা তো! এই বছর আশা করছি, শব্দদূষণ আমার কোনো প্রবলেমই করতে পারবে না। আমি বললাম, তার মানে তুই বাসা চেঞ্জ করেছিস, নিরিবিলি জায়গায় বাসা ভাড়া নিয়েছিস? ছোট ভাই বলল, আরে না, এরকম কিছু না। বাসা আগেরটাই আছে। সমস্যা বা সুবিধা যেইটা হচ্ছে, আমি কানে তেমন শুনতে পাচ্ছি না। আর কানে যে তেমন শোনে না, তার কাছে আবার কীসের শব্দদূষণ। আমি বললাম, তুই কানে তেমন শুনছিস না মানে কী? কোনো সমস্যা? ছোট ভাই বলল, সমস্যা তো বটেই। থার্টিফার্স্ট নাইট উদযাপন করতে ছাদে গিয়েছিলাম। একজন কানের কাছে পটকা ফোটালো। ব্যস, সেই যে তব্ধা লাগল, আশা করা যাচ্ছে পুরা বছরটা তব্ধা অবস্থায়ই যাবে। মন্দ না বিষয়টা। অনেক কিছু না শুইনা থাকা যায়। আপনিও বাজার থেকে পটকা কিনে কানের কাছে ফুটিয়ে ট্রাই করতে পারেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর