সোমবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

সুসংবাদ

রাফিউজ্জামান সিফাত

সুসংবাদ

শেফালীর বাবা কেরামত আলী পরীক্ষার আগে এবার বলেছিলেন, পরীক্ষায় ফেল করলে শেফালীকে তিনি রিকশাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দিবেন। কথাটা শুনে রাগ-অভিমান মনে হতে পারে। তবে তিনি এক কথার মানুষ। একবার বাজারে মুরগির কিনতে গিয়ে মুরগিওয়ালার সঙ্গে তর্কে জড়ান। একটা মুরগি দেখিয়ে আন্দাজে তিনি বলেন, ‘ওজন দেড় কেজি হইব।’ মুরগিওয়ালা বলে, ‘উহু, আফনে ওজন বুঝুইন না। এই মুরগির ওজন দুই কেজির কম হইব না।’ দুজনের বাহাসে বাজারে লোক জমে যায়। মুহূর্তে পাবলিক দুই ভাগে বিভক্ত, একদল কেরামত আলীর পক্ষে অন্যদল মুরগিওয়ালার পক্ষে। কেরামত আলী রেগে গিয়ে বলেন, ‘বাটখারায় ওজন মাপ, দেড় কেজির বেশি হইলে মাথার সব চুল ফালাইয়া ন্যাড়া হইয়া যামু। আর দেড় কেজির কম হইলে তুমি আইজ সারা দিন কান ধরে মুরগি হইয়া বসে থাকবা।’ উৎসুক জনতা ব্যাপক তালি বাজায়। কয়েকজন শিষ দেয়। পাবলিকের নিরাসক্ত জীবনে উৎসবের আমেজ লাগে। মুরগিওয়ালা ওজন মাপে। মুরগির ওজন হয় এক কেজি সাতশো গ্রাম। মুরগিওয়ালা দাঁত বের করে হাসে, কেরামত আলী চলে যান সেলুনে। সেলুন থেকে ন্যাড়া মাথায় বাড়ি ফেরেন তিনি। সেই কেরামত আলী যখন শেফালীকে বলেন, ফেল করলে রিকশাওয়ালার সঙ্গে বিয়ে দিবেন, তখন ঘটনা সিরিয়াস। শেফালী পরীক্ষায় ফেল করতে চায় না। সে পড়াশোনায় মন দেয়। কারণ তার কলজের টুকরা পল্টুকে সে বিয়ে করতে চায়। পল্টু তো আর রিকশাওয়ালা না। সে মুরগির দোকানদার। মানে সেই মুরগিওয়ালা ছিল পল্টু নিজেই। মুরগির ঘটনার সময় পল্টু জানত না, কেরামত আলীই শেফালীর বাবা। যা সর্বনাশ হওয়ার হয়ে গেছে। শেফালী পরীক্ষায় ফেল করলে তার বাবা যেহেতু ঘোষণা দিয়েই দিয়েছেন রিকশাওয়ালার সঙ্গে ওর বিয়ে দিবে তাই পল্টুকে মুরগিওয়ালা থেকে রিকশাওয়ালা হয়ে যেতে হবে। তার মন বলছে, শেফালী ফেল করবে। আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে সে। ইতিমধ্যে মুরগির দোকানটা বিক্রি করে নতুন রিকশা কিনেছে। প্রতিদিন বিকালে কয়েক ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে সে হাত প্র্যাকটিসে রাখছে। শেফালীর রেজাল্ট প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পল্টু রিকশা চালিয়ে ওদের বাড়ির সামনে হাজির হয়। রঙিন জামা, টাইট জিনসের প্যান্ট পরে গায়ে সেন্ট মেখে রিকশা চালিয়ে শেফালীদের বাড়ির সামনের কড়ই গাছের নিচে দাঁড়িয়েছে সে। শেফালী এখুনি ছুটে এসে হাসি মুখে জানাবে, সে ফেল করেছে। কিন্তু সময় বয়ে যায় শেফালী সুসংবাদ নিয়ে ছুটে আসে না। বহু সময় পর চোরের মতো লুকিয়ে শেফালী আসে। তার মুখে হাসি নেই। চোখ ফোলা-ফোলা। পল্টু ঢোক গিলে, ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘মুখ অন্ধকার কেন?’ শেফালী কথা বলে না। পল্টু আবার জানতে চায়, ‘ফেল করো নাই?’ শেফালী মাথা নাড়ে। পল্টু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে?’ শেফালী বলে, ‘আমি জিপিএ ফাইভ পাইছি!’ পেছন থেকে কেরামত আলী এসে দাঁড়ান। পল্টুকে দেখেই বলেন, ‘অ্যাঁই রিকশা, বাজারে চলো। বাজারের সব মিষ্টি কিনা আনমু। আমার মেয়ে এ প্লাস পাইছে। পুরা মহল্লা মিষ্টি খাওয়ামু।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর