সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

তেলের তেলেসমাতি

ইকবাল খন্দকার

তেলের তেলেসমাতি

 বাজারে যাচ্ছিলাম। কিছুদূর যেতেই আমার এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা। আমি তার  চোখের দিকে তাকিয়ে চমকে ওঠলাম। কারণ, তার চোখ দেখে মনে হচ্ছিল কত রাত ঘুমান না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কোনো সমস্যা কি না। বড় ভাই বললেন, সমস্যা তো বটেই। কিছুদিন পরপর তেলের দাম বাড়াবে আর আমাদের চোখের ঘুম হারাম করবে। আমি বললাম, তার মানে তেলের দাম বাড়ানোর টেনশনে আপনি সারা রাত ঘুমাননি। কিন্তু এটা তো ঠিক না। সবার যেই গতি আপনারও সেই গতিই হবে। কেন শুধু শুধু ব্যক্তিগতভাবে চাপ নিয়ে রাতের ঘুম নষ্ট করবেন? এতে তো শরীর খারাপ হয়ে যাবে। বড় ভাই বললেন, না বুঝে কথা বলা খুবই বাজে অভ্যাস। আমি নিশ্চিত, তুই এ বাজে অভ্যাসে আক্রান্ত। নইলে আসল ঘটনা না জেনে এত কথা কেন বলবি? আমি বললাম, আসল ঘটনা বলতো? যা বললেন, আর যা শুনলাম, এর বাইরেও কোনো ঘটনা আছে নাকি? বড়ভাই বললেন, অবশ্যই আছে। আসলে আমি তেলের দাম বাড়ার টেনশনে ঘুমাতে পারিনি, বিষয়টা এমন না। আমি ঘুমাতে পারিনি বাড়িওয়ালার কিপটেমির কারণে। তুই চিন্তা কর, আমি যে বাসায় ভাড়া থাকি সে বাসার গেটটা খোলার সময় এবং বন্ধ করার সময় এমন বিকট আওয়াজ হয় যে, একদম লাফিয়ে ওঠতে হয় ভয়ে। গত রাতেও বেশ কবার লাফিয়ে ওঠলাম আর ঘুম হলো না। আমি বললাম, ঠিক আছে আপনার কথা। কিন্তু এর সঙ্গে তেলের দাম বাড়ার সম্পর্ক কোথায়? বড়ভাই বললেন, এই যে গেটটা খোলা এবং বন্ধ করার সময় এমন বিকট শব্দ হয়, এই শব্দ বন্ধ করার একটাই রাস্তা, গেটের কব্জায় তেল দেওয়া। তেল দিলেই কব্জাগুলো ইজি হয়ে যাবে। শব্দ করবে না। কিন্তু কঞ্জুস বাড়িওয়ালার একটাই কথা, তেলের দাম বেড়ে গেছে, অতএব গেটের কব্জায় এক ফোঁটা তেলও সে খরচ করবে না। যদি করতেই হয় তাহলে নাকি পরের মাসে ভাড়া বাড়াবে।

পাশের বাসার ভাবী বললেন, তেলের দাম কিন্তু বাড়তেই পারে। তবে এখানে আমাদেরও কিছু করণীয় আছে। আমরা যদি আমাদের করণীয়টা ঠিকঠাক পালন করি তাহলে তেলের দাম যতই বাড়–ক, বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। তো আমাদের আপাতত যেটা করণীয় সেটা হচ্ছে তেলের ব্যবহার কমানো। যা ইতোমধ্যে আমি শুরু করে দিয়েছি। আমার মতো সবাই যদি তেলের ব্যবহার কমায় তাহলে তেলের দাম আবার কমে যেতে বাধ্য। ভাবীর দীর্ঘ বক্তৃতা শোনার পর আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তেলের ব্যবহার কোথায়, কীভাবে কমিয়েছেন, একটু বলবেন? ভাবী বললেন, গতকাল থেকে আলুভর্তায় সরিষার তেল খাচ্ছি না।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারে অশান্তি লেগে গেল। একটু আগেও আপনার ভাবী ঝগড়া করতে করতে আমার দিকে কাঁচা পেঁপে ছুড়ে মারল। ভাগ্যিস, ক্যাচ ধরায় দক্ষ ছিলাম। নইলে তো নাকের জায়গায় নাক থাকত না। আমি বললাম, খুবই দুশ্চিন্তার বিষয়। কিন্তু তেলের দাম বাড়ার কারণে ভাবী কেন এটা সেটা ছুড়ে মারবে? প্রতিবেশী বললেন, আসলে তার বায়ুচড়া রোগ আছে। মাথায় পর্যাপ্ত নারিকেল তেল দিয়ে এ রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় নারিকেল তেলের বোতলও কিনিনি আর সে-ও মাথায় পর্যাপ্ত তেল দিতে পারেনি। ফলে বায়ুচড়া রোগ পূর্ণমাত্রায় দেখা দিয়েছে। তখন তো তাও পেঁপে ছুড়ে মেরেছে, এটা যদি কাঁঠালের সিজন হতো, তাহলে হয়তো কাঁঠালই ছুড়ে মারতো। একা ছুড়তে না পারলে কাজের মহিলার হেল্প নিত। আমার এক ছোটভাই বলল, যতবার তেল-গ্যাসের দাম বাড়ে ততবারই আন্দোলন হয়। কিন্তু বাড়তি দামটাই থেকে যায়। মানে আন্দোলনে কোনোদিন দাম কমতে দেখলাম না। এ বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন? আমি বললাম, বিষয়টা নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে দেখি। এসব ক্ষেত্রে কেরোসিন তেলের ব্যবহার হওয়ার ভয়ে নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে বিষয়টা দেখাই সমীচীন, কী বলেন?

আমার এক বন্ধু বলল, তেলের দাম যত বাড়বে ততই ভালো। আমি জানতে চাইলাম, কোন যুক্তিতে ভালো? বন্ধু বলল, কোনো যুক্তি নেই। আমি চাই, আমি যেমন তেল খেতে পারছি না, অন্যরাও খেতে না পারুক। আমি বললাম, তুই তেল খেতে পারছিস না কেন? বন্ধু বলল, ডাক্তার নিষেধ করেছে। আমার হার্টে নাকি মৃদু সমস্যা আছে।

হার্টের সমস্যা না থাকলেও আমার আরেক বন্ধুর অন্য সমস্যা বেড়ে গেছে। তাকে উ™£ান্তের মতো দেখায় আজকাল। ডেকে বললাম, ঘটনা কি বল তো? বলল, সবাইকে তেল মারতে মারতে এমন অবস্থায় পৌঁছে গেছি এখন কাউকে তেল মারতে না পারলে অস্থির লাগে। বললাম, আয় আমার সঙ্গে। তোর একটা উপকার করি। বন্ধুটি আমার সঙ্গে পথ চলতে চলতে জানতে চাইল কোথায় যাচ্ছি। তাকে উত্তর দিলাম না। সোজা গিয়ে দুইজনে হাজির হলাম চিড়িয়াখানার জিরাফের খাঁচার সামনে। বললাম, যা, তেল মেরে আয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর