সোমবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ধোঁকাবাজি

রাফিউজ্জামান সিফাত

ধোঁকাবাজি

তুমি একটা ধোঁকাবাজ- মশারির ভিতর থেকে মজনুর দিকে চেয়ে জরিনা যখন কথাটা বলল মজনু তখন টিভির রিমোট হাতে সোফায় আধ শোয়া হয়ে  চ্যানেল চেঞ্জ করছিল। জরিনার অভিযোগ শুনে মজনু তড়াক করে ওঠে বসল। সাধারণত মজনু কোনো ভুল কাজ করে অথবা জরিনার কিছুর প্রয়োজন হয় তখন এ কথা বলে। মজনু সোফায় বসে বিদ্যুতের গতিতে ভাবতে শুরু করল সারা দিন সে কি কি ভুল করেছে। আজ ছুটির দিন ছিল বিধায় মজনু ভেবেছিল একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমাবে। কিন্তু সাতসকালে জরিনা তাকে ডেকে বাজারের থলি ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘কুইক বাজারে যাও। সবচেয়ে বড় মাছ নিয়ে আস। আমার বান্ধবীরা আসবে।’ মাসে এক দিন তার বান্ধবীরা এক জায়গায় জড়ো হয়ে আড্ডা দেয়। ঘটনাচক্রে আজকে জরিনার বাসায় আড্ডার লোকেশন নির্বাচিত হয়েছিল। বাসা এমনভাবে সাজানো হয় যেন বিয়ের আয়োজন। বাবুর্চি ডেকে ভালো ভালো রান্না করা হয়। দেয়ালজুড়ে টাঙানো হয় তাদের সাম্প্রতিক হাসোজ্জল ট্যুরের ছবি। জরিনা গা-ভর্তি গয়না গায়ে বান্ধবীদের আপ্যায়ন করে। এমনি মজনুকেও পরতে হয় দামি জামা কাপড়। ফিটফাট সেজে তাকে রুমে বসে থাকতে হয়। জরিনা সকাল থেকে যা যা বলেছে, মজনু সবই করেছে। কোথাও কোনো ভুল করেনি। আড্ডা উপলক্ষে সে নতুন ব্লেজার, শার্ট, প্যান্ট টাই কিনে এসেছিল। জরিনাকে উপহার দিয়েছিল নেকলেস। সবই ঠিক ছিল। সন্ধ্যার পর অতিথিরা বিদায় নিলে জরিনা আপন মনে হেসে বলেছিল, ‘গতবার শিউলিদের বাসার চেয়ে এবার আমার বাসায় আড্ডা বেশি জমেছে, সবাই খুব প্রশংসা করেছে আমার।’ শুনে মজনু অভিনন্দন জানিয়েছিল জরিনাকে। রাতে তারা একসঙ্গে খেতে বসে, আড্ডায় কে কি বলল সেসব নিয়ে স্বামী-স্ত্রী খুব হাসাহাসি হয়েছিল। সবই ঠিকঠাক চলছিল। মজনু খুশি মনে মশারি টাঙিয়ে টিভি খুলে বসেছিল। তখনই শুনল, ‘তুমি একটা ধোঁকাবাজ।’ কারণ কী? তবে কি জরিনা নতুন কিছু চায়? মজনু আবারও ঝড়ের বেগে স্মৃতি হাতরে গত কয়েকদিনে জরিনার সঙ্গে তার সব কথা মনে করার চেষ্টা করল। জরিনা সাজেক ঘুরতে চেয়েছিল। মজনু অফিস থেকে অসুস্থতার ছুটি চেয়ে সাজেক ঘুরে এসেছে। নেকলেসের কথা বলেছিল সেটাও কিনে দেওয়া হয়েছে। বাবার বাড়িতে জরিনা গরুর আস্ত রান পাঠাতে বলেছিল। জুম্মন কসাইয়ের দোকান থেকে গরুর আস্ত রান কিনে মজনু নিজে পিঠে বয়ে  শ্বশুরমশাইয়ের বাসায়  দিয়ে এসেছে। তবে? জরিনার রাগের কারণ সে ধরতে পারছে না। সে জরিনার দিকে চেয়ে দেখল, জরিনা তার দিকে চেয়ে রাগে গজগজ করে অভিমানের সুরে বলছে, ‘বিয়ের আগে বলেছিলে, আমাকে রাজ রানীর মতো ভালোবাসবে, আমাকে কোনো কষ্ট দেবে না, দুঃখ দেবে না, সব ধোঁকা। বিয়ের পর তুমি বদলে গেছ। আমাকে ধোঁকা দিয়েছ।’ জরিনা কথা বলছে আর ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। মজনু ভয়ে ভয়ে সোফা ছেড়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে নিমাই কণ্ঠে বলল, ‘ইয়ে মানে, জান, তোমার কথা সঠিক, আমি কাজটা ঠিক করি নাই। কিন্তু মানে, আমার বেঠিক কি একটু যদি মনে করিয়ে দিতে বড় উপকৃত হতাম!’ জরিনা এবার আরও দ্বিগুণ বেগে হাউমাউ করে কেঁদে বলল, ‘মশারি টাঙিয়ে দিয়েছ, গুঁজে দিলা না ক্যান!’ 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর