সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

বহুমুখী প্রতিভা

সাদিকুল নিয়োগী পন্নী

বহুমুখী প্রতিভা

ইদানীং মানুষের বহুমুখী প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে। আমার চারপাশে এমন অসংখ্য প্রতিভাবান রয়েছে। তাদের কেউ একমুখী চর্চা করেন না। এমন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট ভাই হুমায়ুন। ক্যাম্পাসে ভালো আবৃত্তি করত সে। সম্প্রতি তার আবৃত্তি চর্চা তেমন চোখে পড়ছে না। সেদিন হঠাৎ হুমায়ুনের সঙ্গে দেখা। পরনে পায়জামা-পাঞ্জাবি। চুল-দাড়ি কাটে না হয়তো অনেকদিন ধরে। গোঁফ দিয়ে ঠোঁট ঢাকা পড়েছে। কাঁধে ঝুলানো চটের ব্যাগ। বাহ্যিক দিক দেখে মনে হবে পাতি কবি কিংবা সন্ন্যাসী। আমি হুমায়ুনকে নিয়ে একটা চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসলাম। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আমাদের কথা শুরু হলো। জানতে চাইলাম তার আবৃত্তি চর্চার বিষয়ে।

হুমায়ুন মুচকি হাসি দিয়ে বলল, আপনি এখনো আমাকে আবৃত্তিশিল্পী ভেবে বসে আছেন। আপনার ভাই তো এখন কবি। চেহারা দেখে বোঝেন না?

ভিরমি খেয়ে বললাম, কবে থেকে এ পথে নামলে? সে বলল, ভাই, বেশিদিন হয়নি। একটু তেল মেরে বললাম, তোমার এমন সুপ্ত প্রতিভা ক্যাম্পাসে বিকশিত হলো না। আহা! হুমায়ুন বলল, হ্যাঁ, একটু দেরি হয়ে গেছে। ভালো খবর হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমি বললাম, তোমার তো ভরাট কণ্ঠ। আবৃত্তি বাদ দিলে কেন? সে বলল, কবিতা আগের চেয়ে বেশি পড়ছি এখন। তবে অন্যের কবিতা পড়ি না আর। গত ১০ বছর ধরে অন্যদের কবিতা আবৃত্তি করে আসছি। প্রতিষ্ঠিত হতে পারলাম না। বরং অনেক অ-কবি আমার আবৃত্তির জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল। আমি বললাম, রবীন্দ্রানাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ প্রথিতযশা কোনো কবিই তো নিজেকে আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেননি। তোমার মাথায় ভূত চাপল কেন? সে উদাস মনে বলল, ভাই উনাদের কণ্ঠ আমার মতো হলে তারা ঠিকই আবৃত্তি করতেন। কৌতূহল বাড়িয়ে বললাম, মাত্রা ও ছন্দসহ কবিতার বিষয়ে নিশ্চয়ই পড়াশোনা করেছ? হুমায়ুন হাসি দিয়ে বলল, ভাই আধুনিক যুগে এসব লাগে না। মনে যা আসে লিখি। পরে সুবিধা মতো লাইন এদিক-সেদিক করে কবিতার আকার দেই। জানতে ইচ্ছা হলো, তোমাদের দর্শক কারা? হুমায়ুন বলল, ফেসবুক এখন বড় প্ল্যাটফরম। ওখানে লাইভ অনুষ্ঠানের আয়োজন করি। এমন সময় হুমায়ুনের ফোনে কল এলো। সে তার অবস্থানের কথা ফোনে জানাল। একটু পর ক্যাম্পাসে ছোট বোন সাথী ও ছোট ভাই মিরণ হাজির হলো। তারাও আমাদের সঙ্গে চা-চক্রে যোগ দিল। সাথীও আবৃত্তিশিল্পী। তার আরেকটা পরিচয় সে হুমায়ুনের প্রেমিকা। মিরণ ফটোগ্রাফার। খুব ভালো ছবি তোলে। আমি সাথীকে জিজ্ঞাসা করলাম, তুমিও কবিতা লিখ নাকি? সে মুচকি হেসে উত্তর দিল, ভাই কবিতা লেখার চর্চা তো কবেই শুরু করেছি। উদ্বিগ্ন হয়ে বললাম, মিরণও কি কবিতা লিখ? সে বলল, না ভাই। চেষ্টায় আছি। আপাতত ছবি তুলি। আজ ভাইয়া ও আপুদের ছবি তুলব। আমি হুমায়ুনকে বললাম, আজ বিশেষ কোনো কারণ আছে নাকি? হুমায়ুন বলল, না ভাই। পাবলিক কবিতা বোঝে না। ছবি দেখে ফেসবুকে লাইক দেয়। তাই নানা ঢঙে ছবি তুলব। প্রতিটি কবিতার সঙ্গে একটা করে ছবি যুক্ত করে ফেসবুকে পোস্ট দেব। এ ক্যামেরায় ভিডিও করা যায়। কবিতা ধারণ করে রাতে নিজেদের ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড দেব। তোমাদের নিজেদের কবিতা শুনে কেউ বিরূপ মন্তব্য করে না। সাথী বলল, আমরা স্বরচিত কবিতা পাঠের পাশাপাশি একে অন্যের কবিতা পাঠ করি। হুমায়ুনের কবিতা পড়ে আমি ক্যাপশনে লিখি- ‘এমন কবিতা আবৃত্তি করতে পেরে আমি ধন্য।’ তখন হুমায়ুন কমেন্ট করে, ‘এমন সুরেলা কণ্ঠে আমার লেখা কবিতা শুনে হাজার বছর বাঁচতে ইচ্ছা করে।’ প্রথমদিকে ভালো কমেন্ট থাকলে পাবলিক বাজে মন্তব্য করার আগে দশবার চিন্তা করে। আমি তাদের কথা শুনে টাসকি খেয়ে গেলাম। হুমায়ুন বলল, ভাই এখন যেতে হবে। এ আলোতে ছবি ভালো আসবে। তারপর টিএসসিতে বসে লাইভ কবিতাও পড়ব। সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেল। আমি আরেক কাপ চা নিলাম। দোকানদারকে ঠাট্টার ছলে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কবিতা লেখেন নাকি? দোকানদার একটু লজ্জা পেয়ে বলল, ফেসবুকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, একটু লাইক-টাইক দিয়েন!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর