শিরোনাম
সোমবার, ৪ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

জ্যামের সঙ্গে গরম ফ্রি

ইকবাল খন্দকার

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, আগে রাস্তায় বের হলে শান্তি না লাগলেও অন্তত অশান্তি লাগত না। কারণ, যত গরমই থাকুক গাড়ি চলতে শুরু করলে জানালা দিয়ে শোঁ-শোঁ করে বাতাস ঢুকত। শরীর জুড়িয়ে যেত। আর এখন জ্যামের জন্য গাড়ি নড়েই না। ফলে গরমে ডিমসিদ্ধের মতো সিদ্ধ হয়ে যেতে হয়। এ অবস্থা থেকে বাঁচার উপায় কী? আমি বললাম, আপাতত কোনো উপায় নেই। তবে ভবিষ্যতে উপায় বের হলেও হতে পারে। প্রতিবেশী জানতে চাইলেন, যদি উপায় বের হয়ই, কী ধরনের উপায় বের হতে পারে বলে আপনার ধারণা? আমি বললাম, তা এখনই ঠিক বলা যাচ্ছে না। তবে এমন একটা উপায় বের হতে পারে, বাসের ভিতর চৌবাচ্চা টাইপের কিছু একটা রাখা হতে পারে। লম্বা জ্যামে পড়ে গরমে সিদ্ধ হতে শুরু করলেই যাত্রীরা এ চৌবাচ্চায় ডুব দেবে। জলহস্তীর মতো। প্রতিবেশী কিছুক্ষণ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে বললেন, উপায়টা মন্দ না। কিন্তু প্রচন্ড গরমে আর তীব্র তাপে যদি চৌবাচ্চার পানি গরম হয়ে যায় তখন কী হবে? আমি বললাম, তখন অবশ্যই কাউকে সেই পানিতে নামতে দেওয়া যাবে না। যেটা করতে হবে, পরিমাণ মতো চায়ের পাতি ছেড়ে দিতে হবে। ব্যস, হয়ে যাবে গরম গরম চা। সবাই মাগনা চা খাওয়ার সুযোগ পেলে আশা করা যায় গরম আর জ্যামের কথা ভুলে যাবে। মানে হচ্ছে জ্যাম আর গরমের সঙ্গে চা ফ্রি। আমার এক ছোটভাই বলল, এখন যে পরিমাণ গরম পড়েছে, তার ওপরে জ্যাম; আমার তো মনে হয় বেশিদিন এ শহরে টেকা যাবে না। গ্রামে পালিয়ে যেতে হবে। এবার পাশ থেকে আরেক ছোটভাই বলে ওঠল, গ্রামে যে পালিয়ে যাবি, পালাবি কীভাবে? খুব টাফ। আমি গ্রামে পালানোর জন্য কমলাপুর গিয়েছিলাম। ট্রেনের টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গরমে কখন জানি সেন্সলেস হয়ে গেলাম। তারপর হাসপাতালে। এখন বাড়ি যাওয়ার কথা চিন্তা করলেই টিকিটের লাইনের কথা মনে পড়ে। আর হুঁশ হারানোর একটা জোশ চলে আসে। আমার এক বড় ভাই বললেন, ঢাকা শহরের জ্যাম কমাতে না পারলে আমরা সত্যিই খুব পিছিয়ে যাব। কিন্তু এটা তো হতে দেওয়া যায় না। পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক ভদ্রলোক। তিনি হাসতে হাসতে বললেন, এই যে বললেন পিছায়া যাইবেন, ক্যামনে পিছাইবেন? পিছানি কি সম্ভব? সম্ভব না রে ভাই। কারণ, পিছনেও জ্যাম। গতকাল শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পথে জ্যামে আটকা পইড়া কত চেষ্টা করলাম পিছায়া আবার বাসায় চইলা আসার জন্য। কই, পারলাম না কিন্তু। পিছাইতে গিয়া উল্টা দাবড়ানি খাইলাম। আমার এক বন্ধু বলল, আমি একটা জিনিস খেয়াল করেছি, গাড়িতে ফ্যান থাকলেও সেটা যাত্রীদের কোনো কাজে আসে না। কারণ, ছোট সাইজের সেই ফ্যানটা ঘুরিয়ে রাখা হয় ড্রাইভারের দিকে। তার মানে ড্রাইভার ঠিকই বাতাস পায় আর যাত্রীরা গরমে পচে। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। আরেক বন্ধু বলল, এটা দূর করার কোনো দরকার নেই। ড্রাইভার একা একা ফ্যানের বাতাস খায়, খাক। তবু বেটা সিটে থাকুক। যদি সিটে না থাকে, মানে বাতাস খাওয়ার কথা বলে সিট থেকে নেমে যদি বাইরে চলে যায় তাহলে বাস যে রাস্তার পাশের গর্তে পড়বে না তার কোনো গ্যারান্টি কিন্তু থাকবে না। প্রথম বন্ধু বলল, বুঝলাম না ব্যাপারটা। একটু বুঝিয়ে বল। দ্বিতীয় বন্ধু বলল, না বোঝার কিছু নাই রে পাগলা। সিটের পাশে ফ্যানসহ যথেষ্ট সুযোগ-সুবিধা না থাকলে জ্যাম আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে আরামপ্রিয় ড্রাইভার মহোদয়রা সিট থেকে নেমে এদিক-ওদিক চলে যান হাঁটার জন্য। এ সুযোগে হেলপাররা বসে সিটে। হঠাৎ জ্যাম ছুটে গেলে এ হেলপাররা যদি গাড়ি চালাতে শুরু করে তখন? তখন এ গাড়ি গর্তে পড়বে না খাম্বায় বাড়ি খাবে সেটা নিশ্চিত করে বলার ক্ষমতা কেউ রাখে না। অতএব যতদিন জ্যাম থাকবে, গরম থাকবে, ততদিন ড্রাইভারদের জন্য শুধু ছোট ফ্যান না, ছোটখাটো এসির ব্যবস্থাও করা যেতে পারে। আচ্ছা, বাজারে কি ‘পকেট এসি’ এসেছে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর