শিরোনাম
সোমবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

গরমের বাজার

ইকবাল খন্দকার

আমার এক বড়ভাই বললেন, তুই তো জানিস, বিদেশের দিকে আমার কোনো আকর্ষণ নেই। আমি ভ্রমণ করলে দেশের ভিতরেই করি। আর করব না কেন? আমাদের দেশেই কত কিছু আছে দেখার! তবে এইবার মনে হয় ভ্রমণ করার জন্য বিদেশেই যেতে হবে। কারণ, খুব পেরেশানিতে আছি। যদি দেশের ভিতরে ভ্রমণে যাই, তাহলে এই পেরেশানি আরও বাড়তে পারে। কী দরকার টাকা খরচা করে পেরেশানি বাড়ানোর? আমি বড়ভাইয়ের কথার রহস্য ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। তাই অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বড়ভাই বললেন, জিনিসপত্রের যা দাম, তাতে বাজারের নাম শুনলেই আমার ঘাম ছুটে যায়। ডাক্তার বলেছে, আমার শরীর-স্বাস্থ্যের বৃহত্তর স্বার্থে যেন বাজার থেকে দূরে থাকি। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, এই সুযোগে একটু ভ্রমণ করে আসি। কিন্তু তুই তো জানিস, আমি ভ্রমণে গেলে কমন একটা জায়গায় যাই। এবারও প্রায় রওনা হয়ে গিয়েছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, নাহ, যাওয়া যাবে না। কারণ, ওখানে গেলেও আমার মনে হবে আমি বুঝি বাজারেই আছি। সুতরাং ঘাম আর বন্ধ হবে না। ছুটতেই থাকবে। শত হলেও জায়গাটার নাম কক্স‘বাজার’। আমি বললাম, আপনার তো বাজারের নাম শুনলে ঘাম ছোটে। হাটের নাম শুনলে নিশ্চয়ই ছোটে না? বড়ভাই জিজ্ঞাসা করলেন, কেন? আমি বললাম, না, মানে আমি এক জায়গায় যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম। ভাবলাম আপনাকে যদি নিয়ে যাওয়া যায়। বড়ভাই জানতে চাইলেন, কোথায়? আমি বললাম, লালমনির‘হাট’।

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, দেশে আসলে পরিকল্পনার খুব অভাব। যদি সঠিক পরিকল্পনা থাকত আর সেই মোতাবেক কাজ হতো, তাহলে এসিগুলো বড় বড় অফিসে ফিট করা হতো না, ব্যাংক বা এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে ফিট করা হতো না। এসি ফিট করা হতো এমন এমন জায়গায়, যেসব জায়গায় সত্যিকার অর্থেই গরম থাকে। আমি বললাম, দুই-একটা জায়গার নাম শুনতে চাই, যেখানে এসি নেই অথচ থাকাটা খুব দরকার। প্রতিবেশী বললেন, কাঁচাবাজার, মাছবাজার ইত্যাদি। আমি বললাম, কাঁচাবাজারের কথা বাদ দিই। তবে মাছবাজারে কিন্তু এসি না থাকলেও চলে। আপনি যদি মনে করেন গরম বেশি, সেটা দামের গরম হোক আর নরমাল গরমই হোক; তাহলে মাছওয়ালার কাছে হেল্প চাইবেন। দেখবেন মাছওয়ালা আপনাকে কী চমৎকারভাবে হেল্প করছে। প্রতিবেশী অবাক হয়ে বললেন, মাছওয়ালা কীভাবে হেল্প করবে? আমি বললাম, আপনি নিশ্চয়ই জেনে থাকবেন, মাছওয়ালার কাছে বিস্তর বরফ থাকে। আপনি তার কাছে হেল্প চাইলে সে আপনাকে বরফের বাক্সেও ঢুকিয়ে রাখতে পারে, অথবা বাক্স উল্টে আপনার গায়ে সমুদয় বরফ ঢেলে দিতে পারে। তখন দেখবেন শান্তি কাকে বলে। ঠান্ডার চোটে আপনার মনে হবে আপনি শান্তিনগর অবস্থান করছেন। একদম শান্তিনগর চৌরাস্তায়।

আমার এক বন্ধু বলল, একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আরেকদিকে প্রচন্ড গরম। মানুষ যাবেটা কোথায়? পাশ থেকে একজন বলে উঠল, মিরপুরে। আমি অবাক হয়ে বললাম, মানুষ মিরপুরে যাবে কেন? মিরপুরে সস্তায় জিনিস পাওয়া যায় নাকি? নাকি গরম কম? পাশের জন বলল, আরে না, এমন কিছু না। মিরপুর চিড়িয়াখানায় জলহস্তিরা পানিতে শরীর ডুবিয়ে বসে থাকে তো! গরম থেকে বাঁচতে কেউ যদি এই পদ্ধতিটা অবলম্বন করতে চায়, তাহলে দেখে দেখে শেখার একটা ব্যাপার আছে না? আমার এক ছোটভাই বলল, জিনিসপত্রের দাম যেভাবে বেড়েছে, আমার মতো লোকজন নিশ্চিত কিছুদিনের মধ্যে পাগল হয়ে যাবে। অন্যদের খবর জানি না। তবে আমি যে পাগল হতে যাচ্ছি, তার কিন্তু লক্ষণ টের পাচ্ছি। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। বললাম, বলিস কী! কী ধরনের লক্ষণ টের পাচ্ছিস? ছোটভাই বলল, বেগুনের বাড়তি দামের কথা যখন থেকে শুনলাম, তখন থেকে আমি আর আমার নতুন ফুলহাতা শার্টটা পরতে পারি না। কারণ, এই শার্টের দিকে তাকালেই আমার মাথা ঘুরতে থাকে। আর মাথা ঘোরার কারণ আমার বেগুনের কথা মনে পড়ে। আমি বললাম, শার্টের দিকে তাকালে বেগুনের কথা মনে পড়ার কারণ কী? শার্টে কি বেগুনের ছবি আছে? ছোটভাই বলল, না ভাই, বেগুনের ছবি নেই। তবে শার্টটার রং ‘বেগুনি’।

আমার পাশের বাসার ভাবি বললেন, এমন গরম পড়েছে, মনে হচ্ছে ফ্যান আরও তিনটা কিনতে হবে। আমি বললাম, কারণ কী? কিছুদিন আগে যে তিনটা ফ্যান কিনেছিলেন, সেগুলো কি নষ্ট হয়ে গেছে? নাকি স্লো হয়ে গেছে? ভাবি বললেন, আরে না, ফ্যান ঠিকই আছে। আমি আরও তিনটা ফ্যান কিনতে চাচ্ছি এই তিনটা ফ্যানকে বাতাস করার জন্য। বোঝেন না, গরম বেশি তো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর