সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তেলের তেলেসমাতি

ইকবাল খন্দকার

তেলের তেলেসমাতি

আমার এক ছোটভাই বললো, কিছুদিন আগে বাড়িতে পুকুর কাটিয়েছিলাম। আর ইতোমধ্যে পরিকল্পনাও করে ফেলেছি, এই পুকুরে কী মাছ ছাড়বো। কিন্তু তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন আবার পরিকল্পনা পরিবর্তন করতে হচ্ছে। মানে আগে যেই জাতের মাছ ছাড়বো বলে ঠিক করেছিলাম, এখন আর সেটা ছাড়বো না। আরেক জাত ছাড়বো। আমি অবাক হয়ে বললাম, তেলের দাম বাড়ার সঙ্গে মাছের জাত পরিবর্তনের কী সম্পর্ক? ছোটভাই বললো, আছে, সম্পর্ক আছে। আগে ঠিক করেছিলাম মাগুর মাছ ছাড়বো। কিন্তু এখন ছাড়বো কৈ মাছ। আশা করি তেলের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে গেলেও আর কোনো সমস্যা হবে না। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? ছোটভাই বললো, কীভাবে আবার? শোনেননি, লোকে বলে কৈয়ের তেলে নাকি কৈ ভাজা যায়? তার মানে মাগুরের পরিবর্তে কৈ মাছ ছাড়লে সেই মাছ ভাজতে বা খেতে কোনো তেলই লাগবে না। কৈয়ের তেল দিয়েই ভেজে ফেলা যাবে। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠলো, এক কাজ কইরেন। কৈয়ের সঙ্গে কিছু ‘তেলাপিয়া’ও ছাইড়েন। নামের মধ্যেই একটা তেল তেল ভাব আছে না?

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, তেলের দাম বাড়ায় দেশের সবাই নাখোশ হলেও আমার বাসার বুয়া কিন্তু দারুণ খুশি হয়েছে। আমি জানতে চাইলাম তেলের দাম বৃদ্ধিতে বুয়ার খুশি হওয়ার কারণ কী। প্রতিবেশী বললেন, একটাই কারণ, এখন তরকারিতে তেল দেওয়া হয় কম। তাই প্লেটে তেলও লাগে কম। যে কারণে প্লেট-বাটি ধোয়া-মোছা করতে বুয়ার পরিশ্রম লাগে কম। পরিশ্রম কম লাগলে খুশি হবে না কোন দুঃখে? আমার এক বড়ভাই বললেন, ঈদের পর এমনিতেই হাতে টাকা পয়সা থাকে না। তার ওপর সহ্য করতে হচ্ছে বাড়তি চাপ। আমি জানতে চাইলাম বাড়তি চাপটা কীসের। বড়ভাই বললেন, বাসার দরজা চেঞ্জ করতে হচ্ছে। আগেরটা একটু ভাঙাচুরা ছিল তো! নতুন লাগাতে হচ্ছে। দরজার দাম কি কম? আমি বললাম, হঠাৎ করে দরজা বদলানোর উদ্যোগ নেওয়ার কারণ কী? বড়ভাই বললেন, ঘরে যখন দামি জিনিস থাকে, তখন নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দরজা-জানালাও নতুন ফিট করতে হয়। আসলে পাঁচ লিটারের দুই বোতল সয়াবিন কিনেছি তো! নিরাপত্তার একটা ব্যাপার আছে না? আচ্ছা, লোহার দরজার দাম কেমন পড়তে পারে? আমার এক বন্ধু বললো, এই যে তেলের এত দাম, তবু আমার বউকে আমি কন্ট্রোল করতে পারছি না। সে তরকারিতে গপাগপ তেল দিয়েই যাচ্ছে। কেন যে সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করলাম না! আমি বললাম, সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করলে কী হতো? তোর বউ তরকারিতে তেল কম দিত? বন্ধু বললো, হ্যাঁ, কম দিত। কম দিতে বাধ্য হতো। আমি জানতে চাইলাম, কীভাবে? বন্ধু বললো, আমি যদি সায়েন্স নিয়ে পড়তাম, তাহলে আমি ডাক্তার হতে না পারলেও বন্ধুদের মধ্যে কেউ না কেউ ডাক্তার হতো। আর বন্ধুদের মধ্যে ডাক্তার থাকা মানেই তাকে দিয়ে যেভাবে খুশি সেভাবে প্রেসক্রিপশন বানিয়ে নেওয়া। আমি করতাম কী, বন্ধুকে বলতাম, আমার বউকে এমন একটা প্রেসক্রিপশন বানিয়ে দে, যেখানে লেখা থাকবে তার হার্টে সমস্যা। অতএব তেল খাওয়া যাবে না একদমই। তারপর দেখতি তেলেসমাতি। কিন্তু এখন এমন কোনো ডাক্তার পাচ্ছি না বলে পরিকল্পনা মোতাবেকও কাজও করতে পারছি না, তরকারিতে বউয়ের অধিক তেল প্রদান কার্যক্রমও বন্ধ করতে পারছি না। বড় আফসোস! আমার এক ভাবি বললেন, আজকাল যখন বাচ্চাকাচ্চাকে রূপকথার গল্প শোনাই, তখন নিজেই চিন্তায় পড়ে যাই। কারণ, কোনোভাবেই মেলাতে পারি না, রূপকথার গল্পগুলো যদি এই আমলের মতো হতো, তাহলে কীভাবে খরচ পোষাতো। আমি বললাম, আপনার কথা তো একদমই বুঝতে পারছি না। একটু যদি বুঝিয়ে বলেন। ভাবি বললেন, বুঝিয়ে বলার আসলে কিছু নেই। ওই গল্পটা নিশ্চয়ই শুনেছেন। ওই যে টোনার পিঠা খাওয়ার গল্পটা। মানে টুনি যে পিঠা বানিয়েছিল আরকি। চিন্তা করেন, এই আমলে যদি টুনি পিঠা বানাতে যেত, কোনোভাবে কি সম্ভব হতো! তেলের যা দাম! খামোখা টোনাটুনির সংসারে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হতো না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর