সোমবার, ৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তেলের খাতা

রাফিউজ্জামান সিফাত

তেলের খাতা

পিন্টুর হাতে লাল খাতা। খাতাটা তার ছেলে বল্টুর স্কুলের। রোল টানা সেই খাতায় সে নামের তালিকা তৈরি করছে। তালিকাটা সে বানিয়েছে এভাবে- খাতার বাম পাশের প্রথম কলামে আত্মীয়ের নাম, দ্বিতীয় কলামে সম্পর্ক, তৃতীয় কলামে ঠিকানা, চতুর্থ কলামে তারিখ। পিন্টুর স্ত্রী গভীর মনোযোগে স্বামীর তালিকা বানানো দেখছিল। তালিকার অধিকাংশ নাম তার পরিচিত। কিছু নাম পিন্টুর বাবার বাড়ির দিকে, কিছু নাম পিন্টুর বউয়ের বাপের বাড়ির দিকের। যদিও বাবার বাড়ি অপেক্ষা পিন্টুর শ্বশুরবাড়ির দিকের আত্মীয়দের নাম বেশি বেশি। তার স্ত্রী কয়েকবার ছেলেকে পাঠিয়ে কাহিনী বোঝার চেষ্টা চালিয়েছে, লাভ হয়নি। বল্টু বহুক্ষণ বাবার পাশে দাঁড়িয়ে থেকেও কিছু বুঝতে পারেনি। এভাবে দীর্ঘ সময় কেটে যাওয়ার পর পিন্টুর স্ত্রী আর প্রশ্ন না করে থাকতে পারল না। সে জিজ্ঞেস করল, ‘ওগো, তুমি আমাদের বাপ, দাদা, আত্মীয়দের নাম ঠিকানা লিখতেছ কেন? ফ্যামিলি ট্রি বানাবা?’ পিন্টু খাতা থেকে মুখ তুলে মিটিমিটি হাসে। কলম কামড়ে কী যেন ভাবে। বাদ পড়ে যাওয়া কারও নাম মনে পড়লে আবার খাতায় লিখে। এতে তার স্ত্রীর কৌতূহল আরও বাড়ে। মনে মনে সে এমন অদ্ভুত খাতা তৈরির কারণ ভাবতে শুরু করে। পিন্টু হয়তো সব আত্মীয়র নাম ধরে ধরে দোয়া করতে চাইছে। এমন ভেবে পিন্টুর স্ত্রী দারুণ খুশি হয়। তার স্বামী নিজের বাড়ির থেকে শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের নাম বেশি লিখেছে। একটু পরেই তার মনে হয়, তাহলে নামের সঙ্গে ঠিকানা লিখছে কেন? পিন্টুর স্ত্রী হিসাব মেলাতে পারে না। অগত্যা স্বামীকে সে আবারও জিজ্ঞেস করে, ‘এই বল্টুর বাপ, ঘটনা খুলে বল তো।’ পিন্টু এবার বিরক্ত হয়। খাতা থেকে মুখ তুলে স্ত্রীর দিকে চেয়ে বলে, ‘তেলের দাম বাড়ছে, সে খবর রাখ? এ মাস থেকে বাড়িতে আর তেল কিনতে পারব না। আত্মীয়দের নাম লিখে রাখছি। সিরিয়াল ধরে ঘুরে ঘুরে একেক দিন একেক আত্মীয়র বাসায় গিয়ে দাওয়াত খাব। তালিকার শুরু থেকে শেষ সবার বাসায় খাওয়া শেষ হলে আবার প্রথম থেকে শুরু করব। বাড়িতে তোমাকে আর রান্না করতে হবে না। রান্না কম হলে তেলের ব্যবহারও কম হবে। আমাকে আর তেল কিনতে হবে না।’ স্বামীর এমন তেলের খরচ বাঁচানোর পুরনো বুদ্ধিতে স্ত্রী খুশি হয়। সে নিজেও কয়েকজন দূর সম্পর্কের আত্মীয়র নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দেয়। স্বামী-স্ত্রী মিলে মহাউৎসাহে যখন খাতায় নাম টুকতে ব্যস্ত তখন বাসার কলিংবেল বেজে উঠে। পিন্টুর স্ত্রী উঠে দরজা খুলে দেখে পিন্টুর ফুপাত ভাইয়ের পরিবার বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে চব্বিশ দাঁত বের করে হেসে বলে, ‘ভাবী, বহুদিন দেখা সাক্ষাৎ নেই, তাই তোমাদের দেখতে চলে এলাম। এ বেলা তোমাদের সঙ্গে খাব।’ পিন্টুর স্ত্রী অবাক চোখে চেয়ে দেখে ওদের হাতেও মিষ্টির প্যাকেটের পরিবর্তে পিন্টুর মতোই একটা বাঁধাই করা লাল খাতা!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর