সোমবার, ১৬ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

তেলের খনি

ইকবাল খন্দকার

আমার এক ছোট ভাই বলল, দিন কিন্তু আসলেই বদলাইছে। আগে কত কিছু করতে হতো! কত আয়োজন! কত খরচাপাতি! আর এখন কিচ্ছু করতে হয় না। খরচাপাতি তো নেই-ই। শুধু কয়েকজনের একটা দল জায়গামতো এবং সময়মতো পৌঁছতে পারলেই হয়। আমি বললাম, সহমত। কিন্তু কীসের সঙ্গে সহমত পোষণ করলাম, সেটা কিন্তু বুঝতে পারিনি। ছোট ভাই এবার ক্লিয়ার করল। বলল, আগে যখন শুনতাম অমুক জায়গায় তেলের খনি পাওয়া গেছে, তখন বিরাট আয়োজন করতে হতো। বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল আনতে হতো সেই তেল উত্তোলনের জন্য। কত খরচ! আর এখন এই ধরনের কোনো খরচ বা আয়োজনই করতে হয় না। যেই শোনা যায় অমুকের গোডাউনে তেলের খনি পাওয়া গেছে, ব্যস, সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা যান আর সেই খনি থেকে তেল তুলে নিয়ে আসেন। আর হ্যাঁ, দিন কিন্তু আরেক দিক দিয়ে বদলাইছে। আগে খনি থেকে তেল তুলে নানারকম প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর সেটা ব্যবহার উপযোগী করতে হতো। এখন কোনো প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই যেতে হয় না। খনি থেকে বের করেই রান্না করে খেয়ে ফেলা যায়। তেলটা বোতলে থাকে তো! সেই বোতলও কিন্তু কোনো না কোনো কাজে লাগানো যায়। কত সুবিধা! আমার এক বড়ভাই বললেন, বিভিন্ন গোডাউনে অভিযান চালিয়ে তেলের খনির সন্ধান পাচ্ছে, তেল উদ্ধার করছে। তবে আমি মনে করি, একটু অন্যভাবে ভাবা উচিত। মানে একটু গভীরভাবে ভাবা উচিত আর কি। আমি জানতে চাইলাম, সেটা কীভাবে? বড় ভাই বললেন, না, মানে আমি বলছিলাম কী, গোডাউনে অভিযান চালানোর পাশাপাশি যদি কিছু কিছু মানুষের বডি তল্লাশি করা হতো, তাহলে খুব ভালো হতো। আমি প্রায় আঁতকে উঠে বললাম, বডি তল্লাশি! বলেন কী! বডি তল্লাশি কেন? বড়ভাই বললাম, কারণ, কিছু কিছু মানুষের কাজই তেল মারা। আমার ধারণা, তাদের বডির কোনো না কোনো অংশে তেলের মজুদ আছে। তাও বিরাট মজুদ। নইলে যখন তখন কীভাবে তেল মারে? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমার কিন্তু লাভ হয়েছে। আমার এখন কোনো টেনশন নেই। আমি কিছু বুঝতে না পেরে বললাম, তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় কীভাবে আপনার লাভ হয়েছে, কীভাবে আপনার টেনশন কমেছে, একটু বুঝিয়ে বলতে আজ্ঞা হয়। প্রতিবেশী বললেন, কীভাবে বলি, লজ্জার কথা। তবু না বলেও উপায় নেই। আমার বউকে আসলে আমি বিশ্বাস করি না। কারণ, তার হাবভাবটাই এমন, যে কোনো সময় আমাকে কিছু একটা খাইয়ে মেরে ফেলবে। তো যখন তেলের দাম কম ছিল, তখন বাসায় পর্যাপ্ত তেল থাকত। আর এই তেলের লোভে প্রচুর পিঁপড়া আসত। বউ করতো কী, আমাকে দিয়ে পিঁপড়া মারা গুঁড়া বিষ আনাত। আর সেই বিষ নিয়েই আমি টেনশনে থাকতাম। মনে হতো, এই বুঝি বিষের কিয়দাংশ আমার খাবার বা চায়ের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়ে আমার জান শেষ করে ফেলল। যেহেতু এখন বাসায় বলতে গেলে তেলই থাকে না, তেল না থাকলে যেহেতু পিঁপড়াও ওঠে না, বিষও আনতে হয় না; আমার শান্তি আর শান্তি। নো টেনশন, ডু আনন্দ। আমার আরেক প্রতিবেশী বললেন, কী আর বলব, কাজ শুধু বাড়ে। কমে না। এই যে এখানে ওখানে তেলের খনির সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে, এতে কাজ কেবল বেড়েই যাচ্ছে। আমি জানতে চাইলাম কীভাবে কাজ বেড়ে যাচ্ছে, কী কাজ বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী বললেন, আরে ভাইরে, এখন জরুরি ভিত্তিতে পাঠ্যবই চেঞ্জ করা দরকার। কারণ, পাঠ্যবইয়ে তেলের খনি হিসেবে যেসব জায়গার নাম লেখা আছে, সেগুলো বদলাতে হবে। অথবা সেগুলোর সঙ্গে যোগ করতে হবে আরও কিছু জায়গার নাম। যেমন অমুক এলাকার তমুকের গোডাউন। আমার এক বন্ধু বলল, আমি আশঙ্কা করছি, তেলের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে আবার করোনা বেড়ে যায় কি না। আমি অবাক হয়ে বললাম, তেলের দামে ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে করোনার ঊর্ধ্বগতির কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল, তেলের দাম যখন কম ছিল, তখন তরকারিতে বেশি তেল দেওয়া হতো। ফলে ভাত খাওয়ার পর আমাদের ২০ সেকেন্ড তো বটেই, ৪০-৫০ সেকেন্ডও হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে কচলিয়ে হাত ধুতে হতো। এতে শুধু হাতের তেলই দূর হতো না, করোনার জীবাণু মরেও সাফা হতো। আর এখন তরকারিতে বলতে গেলে তেলই দেওয়া হয় না।  তাই হ্যান্ডওয়াশেরও দরকার হয় না, করোনার জীবাণু নিয়ে টেনশন তো কমল না!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর