সোমবার, ২৩ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

দাম বাড়ার সুফল

ইকবাল খন্দকার

আমার এক ছোটভাই বলল, খুব ঝামেলা হয়ে গেল। এখন প্রতিদিনই বাড়তি এক-দেড় ঘণ্টা সময় অপচয় করতে হচ্ছে। অথচ আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম! আগে কোনো সময়ই অপচয় হতো না। সেই দিন যে আবার কবে ফিরে আসবে! আমি বললাম, এক দেড় ঘণ্টা না, কোনো কোনো দিন চার-পাঁচ ঘণ্টা সময়ও আজকাল অপচয় হয়ে যায়। যা জ্যাম! তবে আশা করা যাচ্ছে, কিছুদিন পরে যখন মেট্রোরেল চালু হবে তখন আর এত জ্যামও থাকবে না, সময়ও অপচয় হবে না। আমার কথা শুনে ছোটভাই বলল, কিসের মধ্যে কী, নানরুটিতে ঘি। জ্যামের জন্য সময় অপচয় হচ্ছে, মানলাম। কিন্তু আমি তো জ্যামের প্রসঙ্গ আনিনি। আমি বলেছি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা। আমি বললাম, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে কীভাবে দৈনিক এক-দেড় ঘণ্টা সময় অপচয় হয় বা হওয়া সম্ভব, একটু বুঝিয়ে বলবি? ছোটভাই বলল, নরমালি বললেই বুঝে যাবেন। আগে যখন  দাম কম ছিল, তখন বাজার থেকে ম্যালা কিছু কিনতাম। আর সেইসব জিনিস দুই হাতে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতেই আমার ব্যায়াম হয়ে যেত। মনে করেন এক হাতে পাঁচ লিটার সয়াবিন তেলের বোতল, আরেক হাতে পাঁচ কেজি পিঁয়াজের ব্যাগ। দুই হাতে ১০ কেজি নিয়ে দুই কিলোমিটারের মতো হাঁটলে আর কিছু লাগে? এমনি এমনি হাতের মানে মাসলের ব্যায়াম হয়ে যায় না? আর এখন জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে যা যা কিনি, সেগুলোর ওজন সব মিলিয়ে এক কেজিও হয় না। ফলে আমাকে করতে হয় কি, জিমে গিয়ে আলাদা করে ব্যায়াম করতে হয়। ব্যস, রোজই এক-দেড় ঘণ্টা অপচয়। উফ, কবে যে আবার ব্যাগ ভরে বাজার করব আর বোতল ভরে তেল কিনব! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, হা-হুতাশ করে আসলে লাভ নেই। জিনিসপত্রের দাম বাড়বেই। আমাদের উচিত হবে বিষয়টাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা। আমি বললাম, জিনিস কেনা দরকার ১০টা। কিন্তু তিন-চারটা কিনতে কিনতেই পকেট গড়ের মাঠ হয়ে যাচ্ছে। তার মানে জিনিসপত্রের দাম এতই বেশি। তাহলে বিষয়টাকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে কীভাবে দেখা সম্ভব? প্রতিবেশী বললেন, চাইলেই সম্ভব। যেমন ধরেন আমি থাকি দোতলায়। আগে ওপরতলা থেকে এত বেশি তরকারির খোসা ফেলত, আমার বারান্দা একদম ভরে যেত। কিন্তু যেই তরিতরকারির দাম বেড়ে গেল, শুনলাম অনেকে নাকি আর খোসা ছাড়ায়ই না। আজকাল অবশ্য তরমুজের বিচি পাওয়া যাচ্ছে আমার বারান্দায়। যদি শিগগিরই তরমুজের দাম বাড়তে বাড়তে আকাশে ঠেকে যায়, তাহলে বিষয়টাকে অবশ্যই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। কারণ দাম বাড়ার কারণে যদি মানুষ বিচিসহ তরমুজ খাওয়ার অভ্যাস করে আর ওপর থেকে বিচি ফেলে অন্যের বারান্দা নোংরা না করে, তাহলে সেটা ইতিবাচক না? আমি বললাম, এটা ইতিবাচক না। বরং ভীতিবাচক। কারণ তরমুজের বিচিসহ তরমুজ খেলে পেটে তরমুজ গাছ গজানোর ভয় আছে- এমন ধারণা ছোটবেলা থেকে করে আসছি। আমার এক বন্ধু বলল, আমি মনে করি প্রতিবছর হাজার হাজার লাখ লাখ ইঁদুর উৎপাদন করতে হবে। তাহলে যদি একটা শ্রেণির মনে আতংক ঢোকে এবং তারা জিনিসপত্রের দাম কমানোর ক্ষেত্রে অবদান রাখে। আমি বন্ধুর কথা শুনে বেশ খানিকক্ষণ তাজ্জব হয়ে থাকার পর বললাম, ইঁদুরের বিষয়টা ঠিক বুঝলাম না। বন্ধু বলল, বোঝার কথাও না। নো টেনশন, বুঝিয়ে বলছি। আমি গবেষণা করে দেখেছি, যারা মজুদদার, তাদের জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। যেহেতু তারা গোডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস স্টক করে। এ জন্য লাখ লাখ ইঁদুর উৎপাদন করতে পারলে হবে কি, গোডাউনে গোডাউনে ছেড়ে দেওয়া যাবে। আর এরা তাদের স্টক করা জিনিস কেটে এবং খেয়ে সাফা করে ফেলবে। একবার যখন এই ঘটনা ঘটবে, তখন তারা সোজা হয়ে যাবে। পরবর্তীতে আর স্টকও করার চেষ্টা করবে না, জিনিসপত্রের দামও সেভাবে বাড়বে না। আমি বললাম, লাভ নাই রে পাগলা! যতই ইঁদুর উৎপাদন করা হোক, যারা স্টক করে, তারা কিন্তু সিন্ডি‘কেট’। আর ‘ক্যাট’ বা বিড়াল কিন্তু ইঁদুর পেলেই অমনি ধরে গাপুসগুপুস খায়। ক্যাট মানে বিড়ালের কথা শুনে বন্ধুটি মিউমিউ করতে বলল, ‘তাহলে ইঁদুর উৎপাদন না করাই ভালো, থাক।’ আমার এক ভাবি বললেন, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে আমার সংসারে স্বস্তি বিরাজ করছে। এমন স্বস্তি বিরাজ করুক আজীবন। উম স্বস্তি! আমি অবাক হয়ে বললাম, জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তো সংসারে অস্বস্তি বিরাজ করার কথা। স্বস্তি বিরাজ করে কীভাবে? ভাবি বললেন, আগে আপনার ভাই মাছ দিয়ে ভাত খাওয়ার সময় প্রায়ই গলায় মাছের কাঁটা বিঁধিয়ে হাউকাউ বাধিয়ে দিত। কী যে টেনশনে থাকতাম! আজকাল তো বাসায় সেভাবে মাছই আনা হয় না, আনলেও কাচকি টাইপের ছোটখাটো মাছ। কাঁটাও নেই, টেনশনও নেই। স্বস্তি চলমান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর