সোমবার, ২০ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

কলিজা কালার

জাহিদ সব আপেল দোকানে ঢেলে দিয়ে বলল, ‘এখান থেকে যে কোনো কালার হলেই চলবে।’ দোকানদার বলল, ‘ভাই, আপনি কি পাগল? পাবনা পাগলা গারদ থেকে কবে পালিয়ে এসেছেন? বাড়ির ঠিকানা দেন। আপনার বাড়িতে যোগাযোগ করি। টেলিফোন নম্বর আছে?’

হানিফ ওয়াহিদ

কলিজা কালার

গার্লফ্রেন্ড মিতু ফোন দিয়ে বলল, ‘আপেলের দোকান খুঁজে পাইছো?’ জাহিদ উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ, পেয়েছি।’ ‘ভেরি গুড। ভালো করে দেখে কালার চেক করো, ভুল যেন না হয়। আগেরবার কী করেছিলা মনে নাই? বললাম বাঙ্গি-কালার ড্রেস আনতে। আর তুমি কী করলা?’ জাহিদ মিনমিনে গলায় বলল, ‘আমি তো বাঙ্গি কালারই আনছিলাম।’ মিতু বিরক্ত গলায় বলল, ‘হ্যাঁ। তবে পচা বাঙ্গি কালার। তোমার কি মনে হয় আমি পচা? আমাকে তোমার এই মনে হয়? দেখো, এবার যেন আমার প্রেস্টিজ নষ্ট না হয়। বান্ধবীদের বলেছি, আমার জান, কলিজার টুকরা এবার আপেল কালার ড্রেস কিনে দিবে। ড্রেস পরে কী কী করবো সব পরিকল্পনা হয়ে গেছে। ভালো করে তুমি দোকানে দোকানে ঘুরে চেক করে দেখো যেন মিস না হয়।’

মোবাইলে কথা শেষ করে জাহিদ ফলের দোকানের সামনে কিছুক্ষণ ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। দোকানে নানা পদের আপেল থরে থরে সাজানো। কোনোটার কালার সবুজ, কোনোটার হলুদ, কোনোটার হলুদ লালের কম্বিনেশন। কোনটা রেখে কোনটা কিনবে সে? এর আগে ভুল করেছে। এবার আর ভুল করা যাবে না। ভুল হলেই মিতু বলে দিয়েছে, ব্রেকআপ!

মিতু সব সময় আনকমন জিনিস পছন্দ করে। বেছে বেছে আনকমন কালারের ড্রেস কিনবে। সে পছন্দ করে ফলের কালারের ড্রেস। গত রোজার ঈদে তার পছন্দ ছিল বাঙ্গি-কালার। কোরবানি ঈদে ছিল তরমুজ-কালার। এবার সে চয়েস করেছে আপেল-কালার। যে করেই হোক তাকে আপেল কালারের ড্রেস কিনতেই হবে। এ জন্যই আপেলের দোকানে এসেছে ভালো করে রং চেক করার জন্য। দোকানে সাত কালারের আপেল দেখা যাচ্ছে। সে সাত প্রকারের সাত কেজি আপেল কিনে কাপড়ের মার্কেটে রওনা দিল। বড় একটা কাপড়ের দোকানে ঢুকে দোকানিকে বলল, ‘ভাই, আপেল কালারের ড্রেস দেন তো।’ দোকানদার অবাক হয়ে বলল, ‘কী কালার?’ জাহিদ একটা আপেল বের করে দেখাল। দোকানদার চোখ কপালে তুলে বলল, ‘আপনি মার্কেটে আপেল নিয়ে ঘুরছেন? মাথার স্ক্রু বোধহয় সব কয়টা ঢিলা। যান ভাই, স্ক্রু টাইট দিয়া পরে আসেন।’ জাহিদ আরেকটা দোকানে ঢুকল। একটা আপেল দেখিয়ে বলল, ‘এই কালারের ড্রেস দেন।’ দোকানদার বলল, ‘নাই।’ সে আরেকটা আপেল বের করে বলল, ‘তাহলে এই কালার দেন।’ দোকানদার বলল, ‘এই কালারও নাই।’ জাহিদ সব আপেল দোকানে ঢেলে দিয়ে বলল, ‘এখান থেকে যে কোনো কালার হলেই চলবে।’ দোকানদার বলল, ‘ভাই, আপনি কি পাগল? পাবনা পাগলা গারদ থেকে কবে পালিয়ে এসেছেন? বাড়ির ঠিকানা দেন। আপনার বাড়িতে যোগাযোগ করি। টেলিফোন নম্বর আছে?’ জাহিদ দৌড়ে দোকান থেকে বের হয়ে আসলো। বলা তো যায় না, যদি পাগল মনে করে বেঁধে রাখে। এবার সে আরেকটা দোকানে ঢুকল। আপেল কালারের ড্রেস চাইতেই দোকানদার বলল, ‘আপেল কেন? অন্য অনেক সুন্দর সুন্দর কালার এসেছে, এখান থেকে চয়েস করেন।’ সে বলল, ‘মিতু বলেছে আপেল কালার ড্রেস না কিনলে সোজা ব্রেকআপ।’ ‘মিতু কে?’ জাহিদ বলল, ‘আমার গার্লফ্রেন্ড। আমার জান। আমার কলিজা।’ দোকানদার এবার বিরক্ত গলায় বলল, ‘এতই যখন আপনার কলিজা তাহলে কলিজা কালারের একটা ড্রেস কিনে দেন।’ জাহিদ দোকানের বাইরে এসে মিতুকে ফোন দিল। মিতু ফোন ধরেই বলল, ‘পেয়েছো?’ জাহিদ বলল, ‘জান, এই বছর একটা নতুন আনকমন কালার এসেছে। সবাই তো ওই কালারের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তুমি বাদ যাবে কেন? সবাই বলছে এটা নাকি বেস্ট ইউনিক কালার।’ মিতু আহলাদি গলায় বলল, ‘বল কি! তা কী কালার?’ জাহিদ নিস্পৃহ গলায় বলল, ‘কলিজা কালার।’ মিতু অবাক হয়ে বলল, ‘কলিজা কালার! বাহ, বেশ আনকমন লাগছে তো? তা কিসের কলিজা কালার? গরু না ছাগলের?’ জাহিদ জোরে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। তারপর ক্লান্ত গলায় বলল, ‘গরুও না, ছাগলের ও না।

আমার!’

- জাজিরা, কোন্ডা, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর