শিরোনাম
সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

রুটিন কালচার

আমার বউ আজকাল একটু পরে পরেই প্রশ্ন করে, আচ্ছা, আজকের লোডশেডিংয়ের শিডিউল কী? আর তখনই আমি গেয়ে উঠি কমন একটা গান...

ইকবাল খন্দকার

রুটিন কালচার

আমার এক বড়ভাই বললেন, বিপদের আর শেষ নাই। কী যে করি! আমি জানতে চাইলাম কিসের বিপদ। বড়ভাই বললেন, কিসের আবার! রুটিনের বিপদ। এই রুটিন নিয়ে আর পারা যায় না। এমনিতেই তোর ভাবির সঙ্গে আমার বনিবনা একটু কম ছিল। রুটিন ইস্যুতে সম্পর্ক এখন এমন জায়গায় গেছে, কী আর বলবো। ধুর, ভাল্লাগে না এইসব। বড়ভাই মুখ হাঁড়ির মতো বানিয়ে ফেললেন। আমি বললাম ব্যাপারটা যাতে খুলে বলেন। বড়ভাই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। তারপর বললেন, ছাত্রজীবনে আমার একটা অভ্যাস ছিল। পড়ার রুটিন বলিস আর পরীক্ষার রুটিনই বলিস, আমি সেটা পড়ার টেবিল-সংলগ্ন দেয়ালে টানিয়ে রাখতাম। এত বছর পরে এখন আবার রুটিনের প্রচলন এসেছে। লোডশেডিংয়ের রুটিন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এখন তো আমার পড়ার টেবিল নেই। আবার টেবিল ছাড়া চলবে না। যেহেতু অভ্যাসের ব্যাপার। তাই করি কি, লোডশেডিংয়ের যে শিডিউলটা, এটা সাঁটিয়ে রাখি তোর ভাবির ড্রেসিং টেবিলে। মানে ড্রেসিং টেবিলের আয়নায়। ব্যস, তাতেই সে ক্ষিপ্ত। কারণ, আয়নায় শিডিউল সাঁটিয়ে রাখার কারণে নাকি তার মুখের পুরোটা দেখা যায় না। আমি অবশ্য রসিকতা করে বলেছিলাম, তোমার এত বড় মুখ, পুরোটা একবারে দেখা না যাওয়াটাই স্বাভাবিক। সমস্যা নেই, ধাপে ধাপে দেখো। এতে বউ এমন ক্ষেপা ক্ষেপলো যে, মেক-আপের ডিব্বা ছুড়ে মারলো আমার দিকে। ভাগ্যিস, আমি ‘ক্যাচ’ ধরায় দক্ষ ছিলাম।

আমার এক ছোটভাই বললো, আমরা যারা অগুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করি, তাদের জন্য হয়েছে বিপদ। অথচ আজ যদি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করতাম, যদি আমার একজন পিএস থাকতো, তাহলে কোনো ঝামেলাই ছিল না। আমি বললাম, তা তো বটেই। পিএস থাকলে অনেক সুবিধা। ছোটভাই বললো, ভাই মনে হয় বিষয়টা না বুঝেই কমেন্ট করলেন। আমি এবার আমতা আমতা করতে শুরু করলাম। ছোটভাই বললো, আসলে হয়েছে কি ভাই, পিএস থাকলে নরমালি যেসব সুবিধা পাওয়া যায়, এর চেয়ে এখনকার পরিস্থিতিটা আরও জটিল। যা-ই হোক, এখন আমি পিএস রাখার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি বিশেষ একটা কারণে। মানে আমাকে যাতে সে লোডশেডিংয়ের রুটিনটা মনে করিয়ে দিতে পারে- এই আর কি। এবার আমার আমতা আমতা ভাব কেটে গেল। আমি বললাম, লোডশেডিংয়ের রুটিন মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য পিএস রাখার চিন্তা করার চেয়ে অনেক সহজ আইপিএস রাখা। তাতে লোডশেডিং টের পাওয়া যাবে না। পিএস আর আইপিএস, তেমন কোনো তফাৎ নেই কিন্তু।

আমার এক বন্ধু বললো, তুই তো জানিস আমি সংগীতপ্রেমী মানুষ। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমি গান গাইতে বা শুনতে পছন্দ করি। এই যে লোডশেডিং, এই যে লোডশেডিং-সংক্রান্ত রুটিন জটিলতা, এই পরিস্থিতিতেও কিন্তু আমার কণ্ঠে গান চলে আসছে। আমি হুটহাট গান গেয়ে উঠছি। ঠিক হুটহাট না, যখন আমার বউ প্রশ্নটা করে আর কি। আমি জানতে চাইলাম তার বউ কী প্রশ্ন করে। বন্ধু বললো, আমার বউ আজকাল একটু পরে পরেই প্রশ্ন করে, আচ্ছা, আজকের লোডশেডিংয়ের শিডিউল কী? আর তখনই আমি গেয়ে উঠি কমন একটা গান। অবশ্যই যুৎসই গান। আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, লোডশেডিংয়ের শিডিউলের সঙ্গে যুৎসই এমন কোনো গান আছে নাকি? বন্ধু বললো, অবশ্যই আছে। আমার বউ যখন প্রশ্ন করে শিডিউল কী, রুটিন কী, তখনই আমি গলা ছেড়ে গেয়ে উঠি, ‘শুধু প্রশ্ন করো না আমায়, আমি মরে যাবো লজ্জায়’। অবশ্য কোনো কোনো সময় গানের লিরিক হালকা চেঞ্জও করি। যেমন- ‘শুধু প্রশ্ন করো না আমায়, আমি মরে যাবো প্যারায়’। আমার এক ভাবি বললেন, লোডশেডিংয়ের রুটিন মনে রাখতে গিয়ে আজকাল নরমাল কাজকর্ম করতে পারছি না। প্রায়ই উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রান্নায়। এই যেমন একটু আগে মাছের তরকারি রান্না করছিলাম। এর মধ্যেই মাথায় ঢুকলো লোডশেডিংয়ের রুটিনের বিষয়টা। আরে, আজকে যেন কখন বিদ্যুৎ যাবে? ব্যস, তরকারিতে যে একবার লবণ দিয়েছি, সেটা আর মনেই নেই। আবার দিলাম। ডবল লবণের তরকারি খেয়ে আপনার ভাই তো হেভি উত্তেজিত। আমি বললাম, এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। সামুদ্রিক মাছ তো, লবণ একটু বেশি মনে হতেই পারে। আপনার ভাই এবার আরও ক্ষেপে গেল। জানতে চাইলো পুঁটি মাছ কবে থেকে সামুদ্রিক মাছ হলো। আমিও কম চালাক না। বলে দিলাম, এটা আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন? পুঁটিকে জিজ্ঞেস করো। ঠিক আছে না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর