সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

সবুরে চ্যাম্পিয়ন

ইকবাল খন্দকার

সবুরে চ্যাম্পিয়ন

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

ভাবি বললেন, এই যে রাস্তাঘাটে এত জ্যাম আর জ্যামের বিপক্ষে এই যে মানুষ এত কথা বলে, আমি বুঝি না কেন মানুষ এটা করে। আমি মনে করি, জ্যাম আরেও বাড়া উচিত। তাতে হবে কী, প্রচুর সংসার টিকে যাবে।  এখন যেই অবস্থা, পটাপট সংসার ভেঙে যাচ্ছে। জ্যাম বাড়লে সংসার ভাঙবে না। আমি বললাম, জ্যাম বাড়লে সংসার ভাঙবে না, এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিল?

আমার এক বড় ভাই বললেন, এই যে আমাদের দেশের জনসংখ্যা সমস্যা, এই সমস্যাটা কেন তৈরি হয়েছে জানিস? মানে দেশে কেন এত মানুষ, জানিস কি? আমি চুপ থাকলাম। বড় ভাই বললেন, দেশে এত মানুষ থাকার একটাই কারণ। সেটা হচ্ছে ধৈর্য। আমরা ধৈর্যশীল বলেই সংখ্যার দিক থেকে আমরা এত এগিয়ে। আমি প্রশ্ন করলাম, কীভাবে? বড়ভাই বললেন, কীভাবে আবার? ‘যে সহে, সে রহে’ কথাটা কবি এমনি এমনি বলেছেন? ধৈর্যশীলরাই রহে। রইতে রইতেই সংখ্যার আজকে সংখ্যার দিক থেকে আঠার কোটি। যদি না রহিতাম, তাহা হইলে তো বিনাশ হইয়া যাইতাম। আঠার কোটি হইয়া যাইত নয় কোটি। ঠিক কিনা। আমি বললাম, ঠিক মানে? মস্ত ঠিক। আমার এক ছোটভাই বললো, যেই অবস্থা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে আর ভাত খেতে হবে না। বাকি জীবন ফল খেয়েই কাটাতে হবে। তাও আবার বারো জাতের ফল না। নির্দিষ্ট এক জাতের ফল। আমি বললাম, ফল খুব ভালো জিনিস। প্রচুর ভিটামিন আছে ফলে। কিন্তু ফলের দামও তো প্রচুর। সারাজীবন কীভাবে ফল খেয়ে কাটাবো? এত টাকা পাবো কোথায়? ছোট ভাই বললো, সহজ বিষয় যদি না বোঝেন, তাহলে ক্যামনে কী হবে? ভাইরে, আমরা হলাম সবচেয়ে ধৈর্যশীল। ঘরে ধৈর্য ধরি, বাইরে ধৈর্য ধরি। আর ধৈর্য শব্দটার আরবি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘সবুর’। কবি বলেছেন, সবুরে মেওয়া ফলে। আপনার অবগতির জন্য জানাচ্ছি, মেওয়া হচ্ছে এক কিসিমের ফল। তার মানে আমরা ধৈর্য ধরতেই থাকবো আর আমাদের কপালে মেওয়া মিলতেই থাকবে। তিনবেলা আমরা শুধু মেওয়ার উপরেই থাকবো। মাওয়া গেলে তো আজকাল ইলিশ খাওয়া যায়, তখন হয়তো মাওয়া গেলেও মেওয়া-ই খেতে হবে। উচ্চারণের দিক থেকে মিল আছে তো! আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ভাই, আগামীকাল ফ্রি আছেন নাকি? ফ্রি থাকলে ভালো। তবে ফ্রি না থাকলেও একটু সময় বের করেন। আমি বললাম, কেন? বিশেষ কোনো কারণ আছে নাকি? প্রতিবেশী বললেন, কারণ তো অবশ্যই আছে। একটা অনুষ্ঠানে যেতে হবে। এলাকার সবাইকেই দাওয়াত দিচ্ছি। আপনাকেও দিলাম। পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠান। আমি বললাম, খুব ভালো, খুব ভালো। এমন অনুষ্ঠান আমার খুব ভালো লাগে। নায়ক নায়িকারা আসে তো! প্রতিবেশী বললেন,ভাইরে আপনি যে ধরনের  অনুষ্ঠানের কথা বললেন, আমি কিন্তু সেই ধরনের  অনুষ্ঠানের কথা বলিনি। আর অনুষ্ঠানটা বড় কোনো অডিটরিয়ামেও হবে না। হবে আমাদের ছাদে। আসল ঘটনা তাহলে বলেই ফেলি। পুরষ্কারটা দেবে আমাদের বিল্ডিংয়ের নারীগণ। আমরা পুরুষেরা তাদের ধমক টমক ইত্যাদি হাসি মুখে সহ্য করে যাচ্ছি তো, এই জন্য তারা নাকি আমাদেরকে ‘ধৈর্যশীল অ্যাওয়ার্ড’ এ ভূষিত করবে।  আশা করা যাচ্ছে, সবচেয়ে সম্মানজনক যে পুরষ্কারটা আমার ভাগ্যেই জুটবে। অনুষ্ঠানে আসবেন কিন্তু। আমার এক বন্ধু বললো, আগে দশ মিনিটের জন্য কারেন্ট গেলে অস্থির হয়ে যেতাম। হইহল্লা তো করতামই, মেজাজ বেশি খারাপ হয়ে গেলে ভাংচুর পর্যন্ত করতাম। আর এখন দৈনিক দুই ঘণ্টা তো লোডশেডিং হয়ই, কোনো কোনোদিন তিন ঘণ্টাও হয়। কিনতু মেজাজ খারাপ হয় না। এটা আসলে কিসের লক্ষণ? আমি বললাম, এটা চামড়া মোটা হওয়ার লক্ষণ। বন্ধু বললো, ঠিক বুঝলাম না। আমি বললাম, এরচেয়ে বুঝিয়ে বলা আমার পক্ষে সম্ভব না। তুই যদি এরচেয়ে বেশি বুঝতে চাস, তাহলে গন্ডারের সাথে কথা বল। ফোনে বলতে পারবি না। কারণ, গন্ডার মোবাইল ব্যবহার করে না। সরাসরি যেতে হবে। আমার এক ভাবি বললেন, এই যে রাস্তাঘাটে এত জ্যাম আর জ্যামের বিপক্ষে এই যে মানুষ এত কথা বলে, আমি বুঝি না কেন মানুষ এটা করে। আমি মনে করি, জ্যাম আরো বাড়া উচিত। তাতে হবে কী, প্রচুর সংসার টিকে যাবে। এখন যেই অবস্থা, পটাপট সংসার ভেঙে যাচ্ছে। জ্যাম বাড়লে সংসার ভাঙ্গবে না। আমি বললাম, জ্যাম বাড়লে সংসার ভাংবে না, এই গ্যারান্টি আপনাকে কে দিল? ভাবি বললেন, আমি নিজেই দিচ্ছি গ্যারান্টি। অনেক বছর আগে যখন ঢাকা শহরে জ্যাম ছিল না বললেই চলে, তখন আপনার ভাই অফিস ছুটি হওয়ার পর রিকশায় উঠে বসার দশ মিনিটের মাথায় বাসায় চলে আসতো। আর আর সঙ্গে এটা সেটা নিয়ে ঝগড়া করতো। যেহেতু তার তখন ফুল অ্যানার্জি থাকতো। আর এখন রাস্তায় দেরি হয় ঘণ্টা দুয়েক। এতে তার ধৈর্য তো বেড়েছেই, আবার রাস্তায়ই অ্যানার্জি হ্রাস পাওয়ার কারণে আমার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করারও অনুপ্রেরণা পায় না। ফলে আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর