শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা

মাটির সন্তানেরা ঠিকানা খোঁজে বারবার

জাহানারা আরজু

মাটির সন্তানেরা মাটির ঠিকানা খোঁজে বারবার

এক টুকরো মাটি হৃৎপিণ্ডের মত এক খণ্ড ভূমি,

স্পর্শ চায় সে পলাতকা কাজল কালো মাটির!

 

আর্তনাদের মুষ্টিযুদ্ধ হাতগুলো বড় অসহায় এখন,

মহান আল্লাহর দরবারে সে হাত রহমত যাচে সর্বক্ষণ!

সমগ্র দেশটাই কি ভাসমান অতল সমুদ্র হয়ে উঠবে আবার?

আবার কি এলো সেই নূহের তুফান? শংকিত আদমেরা

কাঁপে থর থর। কোথায় সে কিস্তি পরিত্রাণের?

 

ভয়াল ক্ষুধায় গিলছে, ভিটে-মাটি, হালের বলদ,

বাগবাগিচা, শস্যের সোনা ঝরা ক্ষেত, পুঁই-এর মাচান

ভেসে যায় হাঁড়িকুড়ি সোনাভানের ফুল তোলা শিকে,

পেটরার রেশমি শাড়ি বিয়ের নোলক, খোকার লাল ঘুড়ি,

খুকুর শখের চুড়ি, আর নানাজানের কোরআন কেতাব!

 

মাথার ওপর আকাশ ভাঙ্গা বিরামহীন বর্ষণ,

চৌদিকে মাতাল ঢেউ-এর ক্রুদ্ধ নির্মম ছোবল,

মহা আক্রোশে ধেয়ে আসছে দিন রাত বন্যার তোড়

দানবিক উল্লাসে ক্ষিপ্ত ক্ষুধায়।

 

মাচানের ওপরে দুঃখিনী মা আগলায় আদুল ছেলেটাকে,

ছিন্ন আঁচলে গেঁড়ো দিয়ে বেঁধে রাখে নারী ছেঁড়া ধন

ঘুমের আড়ালে কখনো বা ভেসে যায় অসতর্কতায় এ মহারতন।

চোখের ওপর ওইত সেদিন ভেসে গেল সোনা বরুর

সাধের এক রত্তি দুধের বাচ্চাটা, ঘরের মেঝের পানিতে

টুপ করে পড়ে, এক মুহূর্তেই হয়ে গেল লাশ!

হায়রে কপাল!

 

হিংসা বেনো জল খাবলে নিয়েছে কংক্রিটের রাজপথ,

বিপণি বিতান, সবুজের শ্যামলিমা, জায়নামাজের মত

জমিনের মাটি পূর্ব পুরুষের কবরস্থান, দাদাজানের

কবরের শিয়রে চিহ্নিত সিঁদুরে আমগাছটাও।

 

হায় এ কোন ফোরাতের তীর

সুপেয় পানির পান পাত্র হাতে আদমের কাফেলা দীর্ঘতর আজ,

নিরন্ন মানুষেরা ছোটে একটু আশ্রয় আচ্ছাদনের খোঁজে

বাংলার মুষ্টিবদ্ধ জোড়া জোড়া হাত আজ খোঁজে দিনরাত

শুধু দু’মুঠো ভাত, অসহ্য জ্বালা নিয়ত অভুক্ত জঠরের!

 

এক টুকরো মাটিও জোটে না হয়ত কবরের

নিরুদ্দেশে ভেসে যায় স্বজনের লাশ

মাটির মানুষেরা মাটিরই ঠিকানা খোঁজে বারবার।

সর্বশেষ খবর