শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ ০০:০০ টা

সশ্রদ্ধ প্রণতি, ভূমেন্দ্র

মাসুদুজ্জামান

সশ্রদ্ধ প্রণতি, ভূমেন্দ্র

জীবনানন্দই বলেছিলেন কথাটা, মানুষের মৃত্যু হলে মানব থেকে যায়। ভূমেন্দ্র, ভূমেন্দ্র গুহ (১৯৩৩-২০১৫), জীবনানন্দ অন্তপ্রাণ, জীবনানন্দের সূত্রেই যার খ্যাতি, মানবিকতার যে মহিমা স্থাপন করে গেছেন তার তুলনা ছিলেন তিনি নিজেই।

ভাবলে বিস্ময় জাগে, কী করে তিনি চিনেছিলেন জীবনানন্দকে, যার তখনো কোনো কবিখ্যাতি হয়নি! অনেকের কাছেই আর দশজন কবির মতো যিনি সাধারণ একজন কবি। সাধারণই তো, ভূমেন্দ্রই সেই গল্পটা বলেছেন, জীবনানন্দের চরম দুঃসময় ছিল সেটা। অর্থকষ্টে ভুগছেন। কিছু টাকার জন্য গিয়েছিলেন ‘দেশ’ পত্রিকায় নতুন লেখা কিছু কবিতা দিয়ে অগ্রিম কিছু টাকা পেতে। কিন্তু দেশ পত্রিকার সুরেশ মজুমদার খালি হাতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। অপমানে মর্মাহত জীবনানন্দ ছুটে গিয়ে ঘটনাটা বলেছিলেন পূর্ব্বাশার সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে। সঞ্জয়বাবু সুরেশবাবুকে এর জন্য যে তিরস্কার করেছিলেন, জীবনানন্দ তাতে বিব্রত হলেও তিনি যে তখনো কবি হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছেন না, ভূমেন্দ্র গুহর স্মৃতিচারণাতেই সেসব কথা উঠে এসেছে। জীবনান্দের জীবনের এরকম অনেক টুকরো ঘটনা ভূমেন্দ্র এত চমত্কারভাবে লিখে রেখে গেছেন যে, জীবনানন্দের স্বভাবটি আমাদের কাছে উন্মোচিত হয়ে যায়। কিন্তু সঞ্জয় ভট্টাচার্য এমন এক সময়ের কথা বিবৃত করে গেছেন, যখন তিনি মেডিকেল কলেজের ছাত্র। বয়স কতইবা হবে— বাইশ অথবা তেইশ। ওই বয়সেই সাহিত্যের প্রতি, বিশেষ করে কবিতার প্রতি দুর্মর আকর্ষণ ছিল তার। 

সময়টা ১৯৫২ সাল। তিনি এবং তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে প্রকাশ করলেন ‘ময়ূখ’ নামের এক ফর্মার একটা পত্রিকা। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর প্রকাশিত হলো ‘জীবনানন্দস্মৃতি ময়ূখ’। এ বিশেষ সংখ্যাটি প্রকাশের দুই বছর আগে জীবনানন্দের সঙ্গে ভূমেন্দ্র গুহর পরিচয়। ‘পূর্ববঙ্গের গাঁয়ের ছেলে’ ভূমেন্দ্র যখন জীবনানন্দের সঙ্গে দেখা করার জন্য কয়েক দিন ধরে জীবনানন্দের কলকাতার ল্যান্সডাউন রোডের বাড়ির সামনে ঘুরঘুর করছিলেন, সেরকম একটা দিনে জীবনানন্দের ছোট বোন সুচরিতা দাশ তাদের ভিতরে নিয়ে যান আর জীবনানন্দের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেন। সেই শুরু। এরপর দুই বছর ধরে নানা সময়ে সামান্য আলাপ-পরিচয় হওয়ার পর এসে যায় সেই ভয়াবহ দিনটি ১৪ অক্টোবর ১৯৫৪ সাল। ওই দিন ট্রামের ধাক্কায় আহত হন জীবনানন্দ দাশ। পরদিন সকালে ওই অ্যাকসিডেন্টের খবর শুনে ভূমেন্দ্র আর তার বন্ধুরা ছুটে গেলেন জীবনানন্দ যেখানে অচেতন হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিলেন সেই শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। তারপর তার এবং তার বন্ধুদের জীবনানন্দকে বাঁচানোর কী প্রাণান্তকর চেষ্টা। ভূমেন্দ্র নিজেই এই সময়টা নিয়ে লিখেছেন : ‘কয়েকটি ডাক্তারি-পড়া ছেলে, পাশে বসে রাতজাগা, ওষুধপত্তর খাইয়ে দেওয়া, রোগীর সুবিধামতো তার ভারী শরীরটাকে নানান ভঙ্গিতে সাজিয়ে দেওয়া, মুখ ধুইয়ে দেওয়া, কাপড়চোপড় পালটে দেওয়া, বড় ডাক্তারবাবুদের হুকুম তামিল করা, (আর এখন জানি, তাদের নির্বিবেক অবহেলার চিকিত্সার সঙ্গী হওয়া), সজনীকান্তর তারাশঙ্করের কাছে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের চিঠি বহন করে নিয়ে গিয়ে বিধান রায়কে দিয়ে চিকিত্সা পদ্ধতি অনুকূলে প্রভাবান্বিত করার প্রয়াসের সঙ্গে প্রকারান্তরে জুটে-পড়া— এসব ছাড়া বিশেষ কীইবা করার ছিল! আর একটা কাজ ছিল, ধুম জ্বর ধেয়ে এলে জ্বরের ঘোরে কতজনের সঙ্গে কথা যে তিনি বলতে থাকতেন যার প্রায় কিছুই ধরাছোঁয়ার নাগালের মধ্যে পাওয়ার মতো নয়— সেসব কথা গভীর মনোনিবেশে শুনে যাওয়া, যেন ভয়, আমরা যে অমনোযোগী হয়ে পড়ছি, তা জেনে ফেললেই তিনি বড় দুঃখ পেতে থাকবেন। তাই যদি হয়ে ওঠে, তাহলে আর কী করতে এখানে বসে আছি!’

এরকমই ছিল জীবনানন্দের প্রতি ভূমেন্দ্রর প্রেম। স্ত্রী লাবণ্য দাশ ও জীবনানন্দের দুই সন্তান হাসপাতালে থাকেননি। কিন্তু হাসপাতালে তখন পরমপ্রিয় আত্মীয়দের মতো পালাক্রমে জীবনানন্দের যাবতীয় সেবা আর দেখভাল করে গেছেন এই ভূমেন্দ্র গুহ আর তার বন্ধুরা, যে বন্ধুরা ছিলেন জীবনানন্দের কবিতার গুণমুগ্ধ অনুরাগী। জীবনানন্দের শেষকৃত্যানুষ্ঠান করার ব্যাপারেও সর্বোতভাবে সাহায্য করেছেন ভূমেন্দ্ররা। এরপরের ইতিহাস আরও চমকপ্রদ। জীবনানন্দের কয়েক ট্রাঙ্ক পাণ্ডুলিপি সুচরিতা দাশ আর অশোকানন্দ দাশের অনুমোদনে ভূমেন্দ্রর অধিগত হলে একের পর এক নিবিড় গবেষণার মধ্য দিয়ে প্রকাশ করে গেছেন। জীবনের সেই পর্বে, যখন অন্য দশজন ডাক্তারি-পড়া তরুণের মতো ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবার কথা, ভূমেন্দ্র তখন পরম নিষ্ঠার সঙ্গে বছরের পর বছর জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করে গেছেন : ‘এই-যে আজ বছর দশেক ধরে কোনও এক ভাবে জীবনানন্দর পাণ্ডুলিপি নিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে, তাও সেই জন্য। কাজকর্ম নেই, বেকার। তেমন ভাবে কোনও প্রতিভাও ধারণ করি না যে, সৃজনমূলক কোনও শক্ত কাজ নিয়ে লেগে পড়ব; সমাজহিতৈষণার কোনো প্রবল আবেগ নেই যে, প্রত্যক্ষত অথবা পরোক্ষত রাজনীতির মাঠে নেমে পড়ব; তেমনভাবে অর্থপিপাসা নেই যে, টেলিফোনে ফাটকা খেলব, অথবা শেয়ারবাজার নিয়ে মাথা ঘামাব। অতএব, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরে উদ্বৃত্ত সময় কাটানো একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বটে, বিশেষত যখন মরে যাবার কোনও লক্ষণ নেই এই মুহূর্তে। জীবনানন্দ’র ভাইপো অমিতানন্দ দাশ-এর বদান্যতায় জীবনানন্দর ছেঁড়া-খোঁড়া পোকায়-কাটা উইতে-ধরা ছোটখাটো এক-ডাঁই কাগজপত্র পাণ্ডুলিপি এই শূন্য সময়টায় ঘাড়ের ওপর এসে হুমড়ি খেয়ে পড়ল; আর আমার যা স্বভাব, সাধ্যমতো তাদের কোনও রকম একটা সুষ্ঠু বিলিব্যবস্থা করার দায়িত্ব তাঁর তরফে আমাকে নিয়ে নিতে হল। কাজটা খুব যে সুখের ছিল অথবা আছে, তা-ও নয়।’

এই যে ঘাড়ের ওপর পড়ার কথাটা বললেন ভূমেন্দ্র, সেটা তার কাছে নতুন কিছু ছিল না। শম্ভুনাথ হাসপাতালে ভূমেন্দ্র আর তার বন্ধুরাই জীবনানন্দকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন। ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর রাত ১১টা ১৫ মিনিটে জীবনানন্দ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলে ‘ময়ূখ’ কবিতা পত্রিকার যে ছেলেরা হাসপাতালে তাকে সেবাযত্ন করছিল, তারাই জীবনানন্দের ভাই, ভাইবউ অশোকানন্দ ও নলিনী দাশের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন। পরদিন মরদেহটা কেওড়াতলা মহাশ্মশানে চিতায় পুড়ে যাওয়ার সময়ও তিনি সঙ্গে ছিলেন। তারপর ব্যাপারটা এমন দাঁড়াল যে ভূমেন্দ্রই শুধু দাশ-পরিবারের সঙ্গে সেঁটে থেকেছেন। জীবনানন্দকে খুব কাছে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল শুধু তারই। মৃত্যুর পর কি ছিল জীবনানন্দের বিষয়আশয় বা সম্পত্তি? ভূমেন্দ্রই বলছেন, ‘কেরোসিন কাঠের ছোট ন্যাড়া একটা টেবিল ও একটা চেয়ার; টেবিলে কয়েকটা এক্সারসাইজ খাতা। পরীক্ষার খাতা দেখার লাল-নীল পেন্সিল। কাঠ-পেন্সিল, সুলেখা কালির দোয়াত, কলম। ঘরের কোণায় একটা পিঁড়ের উপরে সযত্নে সাজিয়ে রাখা খবরের কাগজের সারি, সাহিত্যপত্র-পত্রিকা। একটা তক্তপোশ, তার উপরে একটা পাতলা তোশক-চাদর-বালিশ, এবং একটা ওয়াড়বিহীন পুরনো লেপ, হাতপাখা; ঘরের এক কোণায় দাঁড় করিয়ে রাখা গুটোনো একটা মাদুর। এবং, সর্বোপরি, তক্তপোশের তলায় গোটা কয়েক কালো টিনের ট্রাঙ্ক, জামা-কাপড়ের, কাগজপত্রের। জীবনানন্দ’র আসল বিষয়সম্পত্তি তো রয়েছে টিনের ট্রাঙ্কগুলির ভিতরে। সে বিষয়-সম্পত্তির হিসেব তার বিস্মৃত পরিবারের  কেউ জানেন না। কেউ জানতে চান নি, তিনিও কাউকে জানতে দিতে চান নি।’ কিন্তু এ ট্রাঙ্কগুলোই এসে পড়েছিল একজনের হাতে, আর তিনি হলেন ভূমেন্দ্র গুহ। জীবনানন্দের মৃত্যুর পর বাড়ি বদল করলে সেই বাড়িতে ট্রাঙ্কগুলো আনার দায়িত্ব ছিল তার, যে ওই বাড়ির কেউ নন, ডাক্তারির ছাত্র, কস্মিনকালে সাহিত্যের কেউ হবেন বলে যিনি ভাবেন নি, যদিও কবিতা লেখার পোকা ঢুকেছিল তার মাথায়। সেকালের বিখ্যাত পত্রিকা পূর্ব্বাশার ততধিক বিখ্যাত সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্যের কাগজে যার কবিতা ছাপা হয়েছিল জীবনানন্দ বেঁচে থাকতেই। একুশ-বাইশ বছর তার বয়স, চাল নেই চুলো নেই, ঊনত্রিশ নম্বর শ্রীগোপাল মল্লিক লেনের একটা ফেলমারা মুদি দোকানের পাঁচ টাকার ভাড়াটে। যেমন সেই তরুণ ভূমেন্দ্রর স্বভাব, ঘাড়ে এসে পড়লে ঘাড় থেকে তা আর নামাতে পারলেন না। জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপির সঙ্গে শুরু হয়ে গেল তার আমৃত্যু সংসর্গ আর সেসব পাণ্ডুলিপির প্রকাশপর্ব।

প্রথমে প্রকাশিত হলো ‘জীবনানন্দস্মৃতি ময়ূখ’, যেখানে বিভিন্ন জনকে লেখা জীবনানন্দের চিঠিসহ পরবর্তীকালে রূপসী বাংলায় সংকলিত হবে এমন কিছু কবিতা প্রকাশ পায়। এরপর অনুক্ত পত্রিকায় বের হয় জীবনানন্দ দাশের কয়েকটি গল্প। সেই প্রথম জানা গেল যে, জীবনানন্দ গল্প লিখেছিলেন। প্রকৃতপক্ষে তখনো জীবনানন্দের গদ্য লেখা আবিষ্কারের প্রতি মনোযোগী হননি ভূমেন্দ্র। কিন্তু এরপর জীবনানন্দের সমুদয় লেখার শ্রেণিবিন্যাসের কাজটি করেছেন তিনি— গদ্যপদ্য সব মিলিয়ে এ কাজটি ছিল সত্যি দুরূহ। জীবনানন্দের কিছু পাণ্ডুলিপি ছিল তৈরি করা, কিছু অর্ধসমাপ্ত, কিছু এলোমেলো, কোনো পরিকল্পনা ছিল না বই প্রকাশের— এমন লেখাও ছিল প্রচুর। কিন্তু ভূমেন্দ্র অনেক পরিশ্রম করে তৈরি করলেন ‘কবিতার কথা’র প্রেসকপি, রূপসী বাংলার প্রেসকপি। বইগুলো বেরিয়েও গেল। রূপসী বাংলা বইটার প্রেসকপির নাম ছিল, জীবনানন্দই নামটা ঠিক করে লিখে রেখে গিয়েছিলেন— ‘বাংলার ত্রস্ত নীলিমা’, কিন্তু এর প্রকাশক সিগনেটের দিলীপ কুমার গুপ্ত নাম পাল্টে, অনেক কবিতা বাদ দিয়ে বা কাটছাঁট করে রূপসী বাংলা নাম দিয়ে বইটা বের করলেন। ভূমেন্দ্র এভাবেই প্রথমে বোন সুচরিতা দাশ ও ভাই অশোকানন্দ দাশ এবং পরে জীবনানন্দের ভ্রাতুষ্পুত্র অমিতানন্দ দাশের কাছে সংরক্ষিত পাণ্ডুলিপিগুলি একে একে প্রকাশ করে গেছেন। ময়ুখ থেকে যার সূত্রপাত ঘটেছিল, পরে বিভিন্ন লিটিলম্যাগ বা ছোট কাগজে তিনি সম্পাদনা করে জীবনানন্দ দাশের কবিতা, গল্প, দিনলিপি, চিঠিপত্র, প্রবন্ধ ধারাবাহিতভাবে প্রকাশ করে গেছেন। এর সবই তিনি করেছেন জীবনানন্দ দাশকে ভালোবেসে, পরম মমতায়। এ ধরনের কাজ করেছেন আরও দুজন— কলকাতার প্রতিক্ষণ প্রকাশনীর সঙ্গে যুক্ত প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক দেবেশ রায় আর সাম্প্রতিককালে গৌতম মিত্র। দেবেশ রায় কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত জীবনানন্দের গল্প-উপন্যাসগুলো সম্পাদনা করে প্রকাশ করতে শুরু করেন ১৯৮৫ সালে, আর সম্প্রতি গৌতম মিত্রের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে জীবনানন্দ দাশের একটা অপ্রকাশিত কাব্যসংকলন। গৌতম জীবনানন্দের হারিয়ে যাওয়া একটা ট্রাঙ্ক খুঁজে পেয়ে ওই গ্রন্থটি প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন। দেবেশ রায় ও গৌতম মিত্র— জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি প্রকাশের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে আমাদের মতো যারা জীবনানন্দ সম্পর্কে আগ্রহী তাদের কাছে সমাদৃত হবেন, কিন্তু ভূমেন্দ্র যেভাবে জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপি নিয়ে কাজ করেছেন, প্রকাশ করেছেন, যা তিনি করে গেছেন আমৃত্যু পর্যন্ত তার কোনো তুলনা হয় না। 

ফলে নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনানন্দ যে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তার মূলে আছে ভূমেন্দ্রর অবিস্মরণীয় অবদান। জীবনানন্দকে খুব কাছে থেকে আবিষ্কার করা, চেনা ও পরিচিতি করানোর ব্যাপারে এ মানুষটির অবদান ভুলবার নয়। জীবনানন্দের ওপর যে কয়েকটা বই তিনি লিখেছেন, সেসব বইতে জীবনানন্দের চারিত্র্য ও আন্তর-স্বভাবের অন্তরঙ্গ বর্ণনা আছে। বিশেষ করে অ্যাকসিডেন্ট পরবর্তী হাসপাতালে জীবনানন্দের কীভাবে কেটেছে তার বিশদ বর্ণনা পাওয়া যায় তার  লেখায়। জীবনানন্দের পাণ্ডুলিপিগুলোও গভীরভাবে পড়েছেন তিনি, সেসব পাণ্ডুলিপি তন্ন তন্ন করে পড়া, তুলনামূলক পাঠ লক্ষ করা থেকে শুরু করে কোনো পাণ্ডুলিপি সম্পর্কে জীবনানন্দ কী সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছিলেন কিংবা কী সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে, পূর্বাপর বিবেচনা করে সেসবেরও হদিস দিয়েছেন ভূমেন্দ্র। প্রকাশও করেছেন অক্লান্তভাবে। জীবনানন্দ যে অসাধারণ সব গল্প আর উপন্যাস লিখেছেন, ভূমেন্দ্র না হলে সেই রত্নভাণ্ডারের সন্ধানও হয়তো আমরা পেতাম না! কবি ছাড়াও অন্য যে এক জীবনানন্দ আছেন, সেটাও কি জানা হতো কখনো? ডাক্তার ছাড়াও অন্য যে আরেক ভূমেন্দ্র আছেন, যিনি কবি ও জীবনানন্দপ্রেমিক ও গবেষক, তাও হয়তো জানা যেত না। আরেক কবি ও প্রাবন্ধিক শঙ্খ ঘোষ এ মানুষটি সম্পর্কে তাই যথার্থই বলেছেন, ‘পরম-লিপ্ত কিন্তু পরম-উদাসীন বিচিত্রমুখী এই মানুষটির স্বতঃপ্রণোদিত উপচিকীর্ষার কথা আমার ভাবতে ভালো লাগে সবসময়েই [‘উদাসীন এক ডাক্তার’]’।

ভূমেন্দ্র গুহর প্রয়াণ উপলক্ষে লেখা এ রচনায় তার প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ প্রণতি।

সর্বশেষ খবর