শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নাঙ্গা মাসুক

গল্প ♦ সুমন্ত আসলাম

নাঙ্গা মাসুক

সতের বছর আগে আমার বন্ধু মাসুক জাহিরী তার বউ বিক্রি করেছিল! আমরা তার হাত ধরেছিলাম, পা ধরেছিলাম, তবু সেই অমানবিক ব্যাপারটা ঠেকাতে পারিনি। তারপর বিনয়, আশীক, শোভন, মৃত্যুঞ্জয় আর আমি রাত দেড়টা পর্যন্ত বসেছিলাম শ্মশানের এক সিঁড়িতে। একটা মড়া পোড়ানো দেখছিলাম আর গাঁজা খাচ্ছিলাম। গাঁজাটা যখন পুরো মাত্রায় ধরে ফেলেছিল আমাদের, ঠিক তখনই মৃত্যুঞ্জয় হঠাৎ চিৎকার করে উঠে। দু হাত উঁচু করে বলতে থাকে, ‘ভগবান, তুমি সাক্ষী। বিয়ে করার পর যদি বউই বিক্রি করতে হয়, তাহলে সেই বিয়েই আমি করব না। তুমি আমাকে সরাসরি নরকে নিলেও না।’

তিন মাস পর ওই ভগবানকে সাক্ষী রেখেই বিয়ে করেছিল মৃত্যুঞ্জয়। সেই আনন্দে আমরা গাঁজা খেয়েছিলাম সেদিনও, ওই চিত্ত ভরেই। তারপর কী একটা হিন্দি গানের সুরে নাচতে নাচতে বিনয় তার ধুতিটা খুলে ফেলেছিল অবলীলায়। ভাগ্যিস ধুতির নিচে আন্ডার প্যান্ট ছিল, লালচে রঙের প্যান্ট।

বউ বিক্রি করার কিছুদিন পরেই মাসুক একদিন বাড়ি থেকে উধাও। তখন গুম-টুম বলে তেমন কিছু ছিল না। পেপার-পত্রিকায় হারানো বিজ্ঞপ্তি দেখা যেত আর পাড়ার মাইকে হারানো খবর শোনা যেত। সবাই তাই ধরে নিয়েছিল-ও বেচারা বউয়ের শোকে লোক-চক্ষুর আড়ালে চলে গেছে। আর ফিরবে না। কিন্তু তাদের সেই ধারনাকে ভুল প্রমাণিত করে এক মাস বারো দিন পর ফিরে এলো মাসুক। কিন্তু ওকে দেখে আমরা অবাক। ওর শরীরে এক বিন্দু কাপড় নেই, এমন কি একটা সুতোও।

পুরোপুরি নাঙ্গা সে!

মাথায় আগুন ধরে গেল আমাদের। এটা কী করে সম্ভব! কোনো কিছুতেই কোনো কিছু ভেবে পাচ্ছি না আমরা। উপর্যুপরী গাঁজা খেতে থাকি, ধোঁয়ায় ভাসিয়ে দেই চারপাশ, কড়া গন্ধে মৌ মৌ করে আকাশ-বাতাস। চোখ দুটো কোনোরকমে টেনে খুলে শোভন কিছুটা কাতর গলায় বলল, ‘এটা তো বড্ড অশোভনীয়, কিছু একটা কর তোরা!’

বিনয় বলল, ‘কী করব, সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’ বলেই লম্বা একটা টান দেয় কলকিতে।

‘একটা কাজ করলে কী হয়—।’ গোপন কথা বলার মতো গলা নিচু করল আশিক, ‘ওর বউকে ফিরিয়ে আনব নাকি? চুলের মুঠি ধরে কিংবা ইয়ে ধরে। ইয়ে মানে—।’ কলকেটা মুখের কাছে আনে আশিক, ‘দাঁড়া, মনে পড়ছে না, লম্বা একটা টান দিয়ে আগে মনে করে নেই।’

‘টেনে আনতে হবে না, টাকা-পয়সা ম্যানেজ করে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, কিন্তু মাসুক তো ওই বউকে আর ফেরত নেবে না।’ মৃত্যুঞ্জয় খুব সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, ‘মানুষ সব ফেরত নেয়, কিন্তু নিজের বউকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার পর সেটা আর ফেরত নেয় না। কাভি নেহি। যদি সে পাগল হয়, সে-ও না।’

‘অতি সত্য কথা।’ ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ল বিনয়, ‘আমাদের উপল কাকুর বউ চলে গিয়েছিল অন্য একজনের হাত ধরে, পরে আবার ফেরত এসেছিল। কিন্তু কাকা তাকে ঘরে তোলেনি। কিন্তু পাড়ার ধনেশ কাকা মারা গেলে তার বিধবা বউকে বিয়ে করেছিলেন ঠিকই।’

‘কিন্তু এসব কথা বলে লাভ কী?’ শোভনের গলায় অসন্তুষ্টি, ‘মাসুকটা যে এসব করবে, তা আমি কল্পনাও করতে পারিনি। সেদিন মিলি আমাকে ঠেস দিয়ে বলেছিল, বিয়ে করার তুমিও কি বউ বিক্রি করবে নাকি? তারপর ঘর পালিয়ে ন্যাংটা হয়ে বাড়ি ফিরবে।’ চুকচুক শব্দ করে শোভন, ‘বিয়ে করার আগেই প্রেমিকার মুখে যদি এসব শুনতে হয় তাহলে ভাল্ লাগে নাকি! এই, তোরা কিছু কর।’

সবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো-আমরা ওকে রিমান্ডে নেব। পশ্চােদশে সিদ্ধ ডিম প্রবেশ করিয়ে না, বন্ধুত্বের আবেশেই কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করব ওকে।

২.

মাসুকের রুমে গিয়ে দেখি-বুদ্ধের মতো আসন গেড়ে বসে আছে ও, খাটের ওপর। চোখ বুজে ফেলি আমি। নিজেকেই দেখে নিজের এক সময় ঘৃণা আসে, সেখানে নিজের মতো আরেকজনকে ন্যাংটো দেখতে ভালো লাগে নাকি! বাম পাশে রাখা আনলা থেকে একটা চাদরের মতো কাপড় নিয়ে ছড়িয়ে দেই মাসুকের কোলের ওপর। কিন্তু ওর কোনো ভাবান্তর নেই। ধ্যানী পুরুষের মতো স্থির হয়ে বসে আছে ও, চোখ নিচু করে নয়, সোজাসুজি সামনে তাকিয়ে। কেবল বাম গালটা একবার চুলকিয়ে নেয় বাম হাত দিয়ে।

মৃত্যুঞ্জয় ওর কাছ ঘেঁষে বসল, খাটে। আলতো করে হাত রাখল ওর পিঠে। বন্ধুত্বের স্পর্শে বুঝিয়ে দিতে চাইল-মন খারাপ করিস না পাগল, আমরা আছি। তারপর ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল, ‘ব্যাপার কী রে, মাসুক?’

মাসুক কিছু বলল না। মৃদু একটা হাসি দিল, হাত উঁচু করল বামটা। আমরা ওর হাত অনুসরণ করে উপরের দিকে তাকাই। তেমন কিছুই দেখতে পাই না। কেবল সিলিংয়ের সঙ্গে লটকে থাকা পুরনো ফ্যানটা দেখতে পাই, তার সঙ্গে মাকড়শার দুটো ছোট ছোট বাসা।

প্রশ্নটা আবার জিজ্ঞেস করল মৃত্যুঞ্জয়। মাসুক আগের মতোই হাত তুলল উপরের দিকে। আগের বার আঙ্গুলটা একটু বাঁকা ছিল, এবার টানটান সোজা।

বিরক্ত দেখাল মৃত্যুঞ্জয়কে, কিন্তু প্রকাশ করল না সে। বরং আগের চেয়ে দৃঢ় এবং স্থির হয়ে বলল, ‘উপরের দিকে কী দেখাচ্ছিস?’

প্রশ্নের উত্তরে আগের মতোই হাত তুলল সে, ওই  উপরেই।

আশিক আরেক পাশে বসল এবার। মৃত্যুঞ্জয়ের মতো ঠিক পিঠে না, কাঁধ এবং ঘাড়ের মাঝামাঝিতে হাত রাখল একটা। কিছুটা টিপতে লাগল সে জায়গাটা। আরামে চোখ দুটো একবার বুজে ফেলল মাসুক। তারপর আবার স্থির হয়ে তাকিয়ে রইল সামনের দিকে।

ঠোঁটের কাছাকাছি ডান হাতের মুঠিটা নিয়ে ছোট্ট একটা কাশি দিল আশিক। কাশিটা যতটা না মার্জিত মনে হলো, তার চেয়ে চেতন-দুর্বলতাটা ধরা পড়ল বেশি। হঠাৎ করে কোলের কাছে নেতিয়ে থাকা মাসুকের একটা হাত চেপে ধরে বলল, ‘দোস্ত, আল্লার কিরা লাগে কিছু একটা ক, মান-সম্মান যে সব চলে গেল!’

মান-সম্মানকে জলাঞ্জলি দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে কোলের ওপর রাখা চাদরটা ছুড়ে ফেলে দিল মাসুক। সঙ্গে সঙ্গে আশিক নাক কুঁচকে বলল, ‘দোস্ত রে, রোজ কিয়ামতের দিন আমাদের ন্যাংটা হয়েই আবার জাগতে হবে। তাই বলে এখনই!’ মেঝেতে ছুড়ে দেওয়া চাদরটা আবার কোলে বিছিয়ে দেয় আশিক।

‘দোস্ত, গাঁজা খাবি?’ পকেট থেকে একটা পুরিয়া বের করে ওর চোখের সামনে ধরল বিনয়। অন্য সময় হলে দৃষ্টি বদলে যেত মাসুকের, লোভাতুর হয়ে পরত সেটা। আজ সে নির্বিকার। পাথরের চোখের মতো স্থির তার চোখ, মূর্তির মতো সটান দেহ।  

‘অন্য কিছু খাবি?’ মৃত্যুঞ্জয় আদুরে গলায় বলল, ‘বল, ম্যানেজ করি। প্রমতেশ মেসো মরে যাওয়ার দিন মনোজ একটা জিনিস খাইয়েছিল, তুই তো তখন ছিলি না, উধাও হয়ে গিয়েছিল, যা স্বাদ ছিল রে, তিনদিন জিভে পানি দেইনি, কোনো কিছু তো খাওয়া দূরের কথা।’ কিছুক্ষণ আগে সেবন করা গাঁজায় ধরেছে ওকে কিছুটা, ‘ওটা ম্যানেজ করব নাকি?’

মাসুক কারো কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিল না। কেবল শরীরটা একটু কাত করে, নিচের অংশ কিছুটা উঁচুতে তুলে, পো করে একটা আওয়াজ করল মুক্ত সুরঙ্গে। গাঁজার গন্ধে এতক্ষণ জটিল হয়ে গিয়েছিল ঘরের ভেতরটা, আরেকটা গন্ধ যোগ হয়ে একেবোর বীভিষিকাময় হয়ে গেল পরিবেশটা।  

বের হয়ে এলাম আমরা সবাই।

৩.

বিনয়, আশিক, মৃত্যুঞ্জয়ের প্রশ্নের উত্তরে শুধু না, সবার প্রশ্নের উত্তরে মাসুকের ওই একই জবাব-হাত তোলা, সোজা আঙ্গুলটা সিলিংয়ের দিকে তাক করা।  

দু’ দিন পর ফিসফিসানি শুরু হলো। কেউ কেউ তো বলেই ফেলল, ‘আধ্যত্ববাদে জড়িয়ে গেছে মাসুক। অলৌকিক একটা ক্ষমতা পেয়েছে সে।’ কেউ কেউ এও প্রস্তাব দিল, ‘একটা খানকায়ে খোলা যেতে পারে। সেখানে একটা আসনও থাকবে। তার উপর মাসুক। পেছনে, সামনে, চারপাশে লেখা থাকবে-নাঙ্গা বাবার মুক্ত আসর। আশীর্বাদ নিন, ভালো থাকুন।

আইডিয়াটা লুফে নিল বিনয়। শোভন গ্রাফিক্স ডিজাইনে ডিপ্লোমা করেছে। সাইনবোর্ডের কয়েকটা ডিজাইন করে ফেলল ও কম্পিউটারে। সবাইকে দেখাল। সবার সম্মতি পেল যে ডিজাইনগুলো, সেগুলো ডিজিটাল সাইনবোর্ডে প্রিন্ট করে আনা হলো বেশ কয়েকটা। মৃত্যুঞ্জয়দের বাড়ির পেছনে ঘন একটা জঙ্গল আছে, সামনে একটা পুকুর, সেখানে তালপাতা আর খেঁজুর পাতা দিয়ে একটা ঘর তুলে টাঙ্গিয়ে দিলাম সাইনবোর্ডগুলো। তার ভেতর লাল সালু ঘেরা একটা আসন বানিয়ে বসিয়ে দেওয়া হলো মাসুককেও।

এক সপ্তাহ গেল না, লোক জানাজানি হয়ে গেল চারদিকে-নাঙ্গা বাবার কেরামতি! ভীড় বাড়তে লাগল আস্তে আস্তে। বোতল ভরে পানি নিয়ে আসে, ফুঁ দিয়ে দেয় নাঙ্গা মাসুক; গুড় নিয়ে আসে আখের, ফুঁ দিয়ে দেয় মাসুক। ল্যাংড়া, খোড়া, কানা, বধির-সবাই এসে হাজির। সবাইকে ফুঁ দিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় তার সামনে বিছানো লালসালুতে একশ টাকা, পাঁচশ নোট, এক হাজার নোট রেখে যায় সবাই।

টাকাগুলো গোছানোর দায়িত্ব শোভনকে দেয়া হলো। তিন মাস পর গুণে দেখা গেল-বারো লাখ চুয়ান্ন হাজার ছয়শ পঞ্চাশ টাকা জমেছে। আরও দেড় মাস পর একুশ লাখ তিনশ পঞ্চান্ন টাকা, ছয় মাসের মাথায় দাঁড়াল পঞ্চাশ লাখ তিপ্পান্ন হাজার নয়শ ষাট টাকা। মাসুক বলল, ‘এবার কাপড় নিয়ে আয়, আমি কাপড় পরাব।’

দীর্ঘ আট মাস এগার দিন পর মাসুকের মুখের কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেলাম আমরা। মন আর দেহ পুরে গাঁজা খেলাম সেদিন। শহরের আনাচে-কানাচে আর যা কিছু পাওয়া যায়, তাও খেলাম।

বাসায় ফেরার সময় বিনয় আর আশিক হাত ধরাধরি করে গান গাইতে লাগল গলা ফাটিয়ে। রাস্তা দিয়ে টহল দেওয়া একটা পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল পাশ দিয়ে। আমাদের দেখেই থেমে গেল সেটা হঠাৎ। পেট মোটা পুলিশটি নেমে সামনে এসে বললেন, ‘কী ব্যাপার?’

মৃত্যুঞ্জয় নাক টেনে বলল, ‘ক্বি ক্বি কিচ্ছু না। আমরা আজ জাতিস্বর হয়ে গেছি!’

‘জাতিস্বর! ওটা আবার কী?’ পুলিশ আংকেলের চোখে বিষ্ময়।

‘ওটা একটা—।’ ডান হাতে সবগুলো আঙ্গুল জড়ো করে একটা মুরগির ডিমের আকার করে ও, ‘ফল। যেমন হাঁসের ডিম।’

‘হাঁসের ডিম আবার ফল হয় নাকি!’

‘না হলে রসগোল্লা। এই যেমন গরুর অন্ড—।’ কথা শেষ করতে পারল না মৃত্যুঞ্জয়। পুলিশ আংকেল হাত দিয়ে মুখ চাপা দিল ওর। তারপর গম্ভীর গলায় বললেন, ‘আমি এখন সবার পকেট চেক করব। নিশ্চয় সবাই ড্যাঞ্জারাস কিছু বয়ে বেড়াচ্ছে নিজের সঙ্গে।’ বলেই একে এক সবার পকেট চেক করলেন তিনি। সব মিলিয়ে শ চারেক টাকা আর নয়টা গাঁজার পুরিয়া পেলেন তিনি। দু চরিত্রের দুটো জিনিসই একসঙ্গে নিজের পকেটে পুরে ভরলেন, ‘না না, এগুলো ভয়ঙ্কর জিনিস। এগুলো পুলিশের কাস্টডিতে থাকা উচিত, তোমাদের কাছে না।’

পুলিশ আংকেল গাড়িতে উঠলেন। তারপর এতিমের মতো ফেলে রেখে চলে গেলেন আমাদের। যাওয়ার আগে মুচকি একটা হাসিও দিয়ে গেলেন। আনন্দ চিত্তে।

৪.

মাসুক পরের দিন আমাদের সবাইকে সামনে বসিয়ে বলল, ‘শেয়ারবাজারে টিকে থাকার জন্য সব টাকা শেষ করলাম, জমি-জমা শেষ করলাম। সবশেষে বউ বিক্রি করে যখন আবার বিনিয়োগ করলাম, তখন দেখলাম-সবাই আমার মতো ন্যাংটো হয়েই আবার নেমেছে, নামছে। ভালো করে তাকিয়ে দেখি-সত্যি সত্যি সবাই ন্যাংটা। তারপর বউ বিক্রির টাকাও যখন শেষ করে ফেললাম, তখন সিদ্ধান্ত নিলাম-যেহেতু আমার সব শেষ, বাড়ি থেকে পালাব এবার। কয়দিন পর পালিয়ে থাকলাম। হঠাৎ কয় দিন পর মনে হলো-আরে, শেয়ারবাজারে পুঁজি হারিয়ে দেশের অধিকাংশ মানুষই তো আপাতদৃষ্টিতে ন্যাংটা হয়ে গেছেন, সেখানে আমি সত্যি সত্যি কাপড় ছাড়া ন্যাংটা হলে সমস্যা কী? লজ্জার তো কিছু নেই এখানে! সবাই যেহেতু ন্যাংটাই! তাই ওই ন্যাংটা হয়েই জনসম্মুখে ফিরে এলাম। তোরা এটাকে পুঁজি করে আমাকে আবার পুঁজি যোগার করে দিলি। আমি আবার শেয়ারবাজারে যাব।’

৫.

তারপর যথারীতি মাসুক আবার ফতুর। সতের বছর পর শেয়ার বাজার আবার কিছুটা চাঙ্গা হতে না হতেই মাসুক এসে বলল, ‘দোস্ত, আমি আবার শেয়ারবাজারে যাব। আমি ন্যাংটা হই, তোরা আমাকে আগের মতো পুুঁজি যোগার করে দে।’

মৃত্যুঞ্জয়, বিনয় আমি আর আশিক পরস্পরের দিকে তাকালাম। বন্ধু একটা খায়েশ করেছে, পুুঁজি তো যোগার করে দিতেই হয়। কিন্তু আগের পদ্ধতি অবলম্বন করলে তো মানুষজন পিটবে।

বিনয় বলল. ‘তাহলে উপায়?’

আশিক বলল, ‘আমি জানি না।’

মৃত্যুঞ্জয় বলল, ‘আমিও না।’

টানা চারদিন গাঁজা সেবনের পর বিনয় চিৎকার করে বলল, ‘ইউরেকা ইউরেকা, পেয়েছি পেয়েছি।’ আমরা আশাভরা চোখে মৃত্যুঞ্জয়ের লাফানো  দেখে বলি, ‘আরে, ওটা তো মৃত্যুঞ্জয় না, স্বয়ং আর্কিমেডিস!’

৬.

চার রাস্তার মোড়ে মাসুককে বেধে রেখেছি আমরা, ন্যাংটো করেই। শক্ত করে বেধে রাখা হয়েছে, স্টিলের লাইটপোষ্টের সঙ্গে। পিঠের কাছে লেখা-আমি আবার শেয়ারবাজারে যেতে চাই। দয়া করে আমার পাছায় দুটো করে কষে লাথি মারুন এবং কিছু দান করে আমাকে পুঁজি যোগাতে সাহায্য করুন।’

৭.

ওকে বেধে রেখে একটু দূরে সরে এসেছি আমরা। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবস্থা দেখছি ওর। পাড়ার চামড়া ছেলা কুকুরটা দৌড়ে এসে, নিরেট পাথর ভেবে, পেছনের একটা পা তুলে ন্যাংটা মাসুকের দু পা বরাবর হিসি করে দিল হঠাৎ!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর