শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

রবীন্দ্রনাথের জাপান ভাবনা

প্রবন্ধ | প্রবীর বিকাশ সরকার

রবীন্দ্রনাথের জাপান ভাবনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবে কখন নিম্নোক্ত এই ক্ষুদ্র কবিতাটি লিখেছিলেন জানা নেই। এটা ‘স্ফুলিঙ্গ’ কাব্যে সংযুক্ত আছে ৯০ নম্বর কবিতা হিসেবে : ‘জাপান, তোমার সিন্ধু অধীর, প্রান্তর তব শান্ত, পর্বত তোমার কঠিন নিবিড়, কানন কোমল কান্ত।’

আসলেই তাই। যারা জাপানে এসেছেন তারা জানেন যে, জাপানকে ঘিরে থাকা প্রশান্ত মহাসাগরের অস্থিরতা কী রকম! অথচ তার বিস্তর সমতল প্রান্তর শান্ত, নিথর এবং সবুজ। যে সবুজ তথা প্রকৃতি রবীন্দ্রনাথকে অভিভূত করেছিল তার ভ্রমণগুলোকে।

জাপানের অনেক পর্বত পাথুরে। সেই পাহাড় থেকে প্রবাহিত অগভীর নদীগুলোতে পাথরের প্রবাহ রবীন্দ্রনাথও প্রত্যক্ষ করেছিলেন। ‘কানন কোমল কান্ত’ বাক্যবন্ধটি অর্থপূর্ণ। এটা যে ঐতিহ্যবাহী জাপানি ‘তেইএন’ তথা ‘উদ্যানে’র কথা বলেছেন তাতে দ্বিমত না থাকারই কথা। জাপানি উদ্যানগুলো যে প্রকৃতি ও আধ্যাত্মিক চিন্তার অপূর্ব যৌথ সমন্বয় এবং শৈল্পিক নিদর্শন যারা দেখেছেন তারাই ভালো জানবেন। রবীন্দ্রনাথ জাপানে অবস্থানকালে অনেক উদ্যানে পরিভ্রমণ করেছিলেন। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা এই বাক্যবন্ধে চমৎকারভাবে প্রস্ফুটিত! এবং ‘শিক্ষার মিলন’ নামে একটি রচনায় তিনি লিখেছেন : ‘যখন জাপানে ছিলেম তখন প্রাচীন জাপানের যে রূপ সেখানে দেখেছি সে আমাকে গভীর তৃপ্তি দিয়েছে। কেননা, অর্থহীন বহুলতা তার বাহন নয়। প্রাচীন জাপান আপন হৃৎপদ্মের মাঝখানে সুন্দরকে পেয়েছিল। তার সমস্তই বেশভূষা, কর্ম,  খেলা, তার বাসা আসবাব, তার শিষ্টাচার ধর্মানুষ্ঠান, সমস্ত একটি মূল ভাবের দ্বারা অধিকৃত হয়ে সেই এককে সেই সুন্দরকে বৈচিত্র্যের মধ্যে প্রকাশ করেছে। একান্ত রিক্ততাও নিরর্থক, একান্ত বহুলতাও তেমনি। প্রাচীন জাপানের যে জিনিসটি আমার চোখে পড়েছিল তা রিক্ততাও নয়, বহুলতাও নয়, তা পূর্ণতা। এই পূর্ণতাই মানুষের হৃদয়কে আতিথ্য দান করে; সে ডেকে আনে, সে তাড়িয়ে দেয় না। আধুনিক জাপানকেও এর পাশাপাশি দেখেছি। সেখানে ভোজপুরি মাল্লার দল আড্ডা করেছে; তালের যে প্রচণ্ড খচমচ উঠেছে সুন্দরের সঙ্গে তার মিল হল না, পূর্ণিমাকে তা ব্যঙ্গ করতে লাগল।’

এটা তার প্রথম জাপান ভ্রমণসংক্রান্ত অভিজ্ঞতার একাংশ। এখানে তিনি জাপানে প্রচলিত প্রাচ্য ও প্রতীচ্যের ধ্যান-ধারণার তুলনা করেছেন। ১৯১৬ থেকে ১৯২৯ সালের মধ্যে তার পাঁচবার জাপান ভ্রমণের সময়ে তিনি টোকিওসহ অন্য শহর-নগরগুলোতে প্রাচ্য সংস্কৃতির পাশাপাশি পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অবাধ প্রসার পরিলক্ষ করেছিলেন। ফলে বারবার সমালোচনাও করেছিলেন।

আরও একটি রচনা ‘অভিভাষণ’-এ উল্লেখ করেছেন : ‘জাপানি ভাষায় তত্ত্বঘটিত শব্দরচনা সহজ নয়। জাপানির সঙ্গে সেজন্যে চীনে ভাষার যোগ রয়ে গেছে। যুদ্ধের দ্বারা সেদিনও জাপান চীনকে অসম্মান করেছে, অপমান করেছে। কিন্তু ভাষার মধ্যে সে চীনকে সম্মান করতে বাধ্য। তাই জাপানি অক্ষরের মধ্যে চৈনিক অক্ষরও অপরিহার্য। ঘরের কথা জাপানি ভাষায় চলে হয়তো, কিন্তু চীনে ভাষা সঙ্গে না থাকলে বড়ো কোনো জ্ঞান বা উপলব্ধির প্রকাশ অসম্ভব হয়।’

প্রকৃতপক্ষে, জাপান সুদূর প্রাচীনকালে চীনা অক্ষর ‘কানজি’ আমদানি করলেও সেগুলোর অধিকাংশেরই লেখ্যরীতি এবং উচ্চারণ ভিন্নভাবে করা হয়েছে। হুবহু চীনা কানজির উচ্চারণকে বলা হয় ‘অনয়োমি’ এবং জাপানি উচ্চারণে পরিবর্তিত কানজিকে ‘কুনয়োমি’ বলা হয়। এতে করে জাপানি ভাষা জটিল হলেও দীর্ঘতর বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করা করা যায়। ভাবতে অবাক লাগে যে, রবীন্দ্রনাথ ভাষার এই বিষয়টি জানতেন। 

অন্য আরেকটি রচনায় লিখেছেন : ‘ইতিমধ্যে ইতিহাস এগিয়ে চলল। বহুকালের সুপ্ত এশিয়ায় দেখা দিল জাগরণের উদ্যম। পাশ্চাত্যেরই সংঘাতে সংস্রবে জাপান অতি অল্পকালের মধ্যেই বিশ্ব জাতিসংঘের মধ্যে জয় করে নিলে সম্মানের অধিকার। অর্থাৎ জাপান বর্তমানকালের মধ্যেই বর্তমান, অতীতে ছায়াচ্ছন্ন নয়, সে তা সম্যকরূপে প্রমাণ করল। দেখতে পেলেম প্রাচ্য জাতিরা নবযুগের দিকে যাত্রা করেছে।’

এই অংশটি প্রণিধানযোগ্য। দেড়শ বছর আগে জাপানে প্রতীচ্যের ধারায় যে জাগরণের সূচনা হয়েছিল তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত জাপানেই সীমাবদ্ধ ছিল। এবং এই আধুনিক জাগরণের অগ্রদূত জাপান। অবিভক্ত কোরিয়া এবং চীনের একাধিক নগর বিশেষ করে মাঞ্চুরিয়া রাজ্যের আধুনিকীকরণে জাপানের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এটা রবীন্দ্রনাথ জানতেন বলেই মনে হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপানেরই আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা এবং প্রশিক্ষণের বদৌলতে পাল্টে গেছে এশিয়ার প্রায় সব দেশ। আজকের দক্ষিণ কোরিয়া এবং চীন অর্থনৈতিক উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছানোর মূল প্রদায়ক এবং কারিগরই হচ্ছে জাপান।  

এই চারটি সংক্ষিপ্ত বিবরণে কবিগুরু তাঁর সময়ের জাপানকে যেভাবে তুলে ধরেছেন তার প্রতিধ্বনি আমরা ‘জাপান যাত্রী’ ভ্রমণলিপিতেও পাই। ‘লুক ইস্ট’ বা ‘পূর্বে তাকাও’ এই আপ্তবাক্যের বয়স মাত্র ৭০ নয়, দেড়শ বছরের পুরনো—মেইজি যুগে (১৮৬৮-১৯১২) যার শুরু, যাকে আধুনিক ইতিহাস বলছে, মেইজি রেস্টোরেশন বা মেইজি পুনরুদ্ধার। কী পুনরুদ্ধার? কীসের পুনরুদ্ধার? সামুরাই মিলিটারিদের হাত থেকে জনকল্যাণকামী সম্রাটীয় শাসনকে পুনরুদ্ধার বহির্বিশ্বের প্রভাবে, শক্তি ধার করে, সমকক্ষ হওয়ার শিক্ষা নিয়ে? বস্তুত তাই। তাই ঘটেছিল এই যুগে যা অভাবনীয় এক পরিবর্তন সূচিত হয়েছিল জাপানে—এশিয়ার প্রথম শক্তিশালী এবং শিল্পোন্নত সাম্রাজ্যের উত্থানের মধ্য দিয়ে। গ্রহণ-বর্জন, দেওয়া-নেওয়া, মিলিবে-মিলাবের দর্শনকে বাস্তব রূপ দিতে পেরেছিল আধুনিক জাপান। কারা এই আধুনিক জাপানের রূপকার বা কারিগর? তাঁরা প্রায় সবাই অতীতের সামুরাই চেতনা-শক্তির সুশিক্ষিত প্রজন্ম। আজকের জাপান যাদের বিস্মৃত হয়েছে রাজনৈতিক কারণে। সেই রাজনীতির পটভূমিও বিশাল এবং আজ অজ্ঞাতপ্রায়।

সেই সামুরাই প্রজন্মের সার্থক দার্শনিক ছিলেন ওকাকুরা তেনশিন (১৮৬৩-১৯১৩) রবীন্দ্রনাথকে যিনি আবিষ্কার করেছিলেন কলকাতায় ১৯০২ সালে আর রবীন্দ্রনাথও ওকাকুরার মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রাচ্য-প্রতীচ্যের আদর্শজাত অপূর্ব এক বিস্ময়কে! সেই বিস্ময়ই তাঁকে পাঁচবার জাপানে টেনে এনেছে এবং প্রতিবারই তিনি জাপানকে নবরূপে আবিষ্কার করেছেন। রবীন্দ্রনাথ জাপানের আধুনিকতার সমালোচনা করেছেন তীব্র মনোবেদনা থেকে। ১৯১৬ সালে প্রথম জাপান ভ্রমণে এলে পরে মাতৃভূমি বাংলা তথা ভারতবর্ষের অন্ধকারকে অনুভব করেছিলেন সুতীব্রভাবে! কী দেখেছিলেন তিনি জাপানে প্রায় তিন মাস অবস্থানকালে? উপরোক্ত ‘শিক্ষার মিলন’ রচনার বিবরণটুকুতে তিনি যা বলেছেন তাই দেখেছিলেন। জাপান তখন ‘পূর্ণতা’ নিয়ে প্রস্ফুটিত ছিল এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে মাত্র তিন দশকের মধ্যে পুনরায় ‘পূর্ণতা’ অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এরকম বিস্ময়কর উদাহরণ বিশ্বের নেই বললেই চলে। অথচ একই এশিয়ার দেশ হয়ে রবীন্দ্রনাথের জন্মভূমি বাংলা অথবা ভারতবর্ষ স্বাধীনতার কয়েক দশক অতিক্রান্ত হলেও আজও ‘পূর্ণতা’ থেকে বহু বহু দূরে। ভারত-বাংলাদেশ তো বটেই, এশিয়ার প্রায় সব দেশ জাপানকে লক্ষ্য করে (লুক ইস্ট) নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে গেল। ভারত ও বাংলাদেশ তাকালো অনেক পরে।

‘লুক ইস্ট’ তথা এশিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উন্নয়নের জনক জাপানকেই বলা হয়ে থাকে। ছাইভস্ম থেকে মাতৃভাষায় ব্যবহারিক শিক্ষা ও বুদ্ধিগত প্রযুক্তির বদৌলতে জাপান উঠে দাঁড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথের সময়কার জাপানও তাই ছিল। সর্বস্তরে শিক্ষা ও পাশ্চাত্যের বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অভূতপূর্ব সমকক্ষ হয়ে ওঠা। যার ফলশ্রুতি ১৯০৪-০৫ সালে সংঘটিত রুশ-জাপান যুদ্ধে বিপুলভাবে জয়লাভ করেছিল শ্বেতাঙ্গ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি রাশিয়ার বিরুদ্ধে। এই গৌরবময় বিজয়ীই এশিয়ার মুক্তিকামী ঔপনিবেশিক দেশগুলোকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ ভারতবর্ষও তার ব্যতিক্রম ছিল না। মহাত্মা গান্ধী, নেহরু, তিলক, লালা লাজপত রায়, রাজেন্দ্র প্রসাদ, রবীন্দ্রনাথসহ তৎকালীন বহু নেতা এ ঘটনার কথা জানেন। এদের অনেকেই সঙ্কর জাতি জাপানিদের সাহসিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও।

১৯০৭ সালে চট্টগ্রাম সফরকালে তিনি এক সমাবেশে ছোট্ট দেশ জাপান যদি পরাক্রমশালী রাশিয়াকে পরাভূত করতে পারে বাঙালি কেন পারবে না। বাঙালি কি এখনো ঘুমিয়ে থাকবে?—এরকম মন্তব্য করেছিলেন। একমাত্র রবীন্দ্রনাথই অনুভব করেছিলেন, শক্তিটা কোথায় জাপানের। এবং কোন শক্তিবলে জাপান এ অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম হলো।

প্রকৃতপক্ষে, শক্তিটা তিনি জাপানে আগমনের আগেই আবিষ্কার করেছিলেন। যেসব জাপানি নাগরিক কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে অবস্থান করছিলেন তিনি তাদের মধ্যে সেই শক্তি প্রত্যক্ষ করেছিলেন। শক্তিটা যে নিহিত আছে জাপানিদের নিত্যদিনের জীবনচর্চায়— সংস্কৃতিতে যেমন, ইকেবানা বা ফুলসজ্জায়, চা-দোও বা চা-অনুষ্ঠানে, জুওদোও বা জুজুত্সুতে, নিহোনগা তথা ঐতিহ্যবাহী চিত্রকলায়— এসবের মধ্যে মানবিক রুচি, সহিষ্ণুতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধা-ভক্তি, দৈহিক আত্মরক্ষা, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, ধর্মীয় বৈচিত্র্য, দেশপ্রেম, রাষ্ট্রশক্তি—সব বিদ্যমান। এসবই সামুরাই অধ্যাত্মস্নাত মানবিক গুণ। এককথায় সামুরাই সংস্কৃতি। আর এ সংস্কৃতির গুণেই জাপানের উত্থান যেমন প্রাচ্যের আদর্শ রক্ষায় তেমনি পাশ্চাত্যশক্তির সমকক্ষ হওয়ার মধ্যে বিরাজমান ছিল এবং আজও আছে।

রবীন্দ্রনাথ এ সংস্কৃতিটাই শান্তিনিকেতনে চালু করতে চেয়েছিলেন। তাঁর অনুরোধে, আহ্বানে একাধিক জাপানি মাস্টার তথা প্রশিক্ষক কলকাতা ও শান্তিনিকেতনে গিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জীবদ্দশাতেই সেই স্বপ্ন বা প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। 

তথাপি, একথা বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই প্রথম ব্যক্তি যিনি ‘লুক ইস্ট’ অর্থাৎ পূর্বদেশীয় জাপানের দিকে তাকিয়ে ছিলেন গভীর কৌতূহল ও আশাবাদ নিয়ে জাতিগঠনের লক্ষ্যে। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, আগে জাতিগঠন তারপর উন্নয়ন। জাতিগঠন না করে উন্নয়ন যতই করা হোক না কেন তা শক্তিশালী তো হয়ই না, বরং যেকোনো বিপর্যয়ে ধসে যেতে বাধ্য। আজকের বাংলাদেশে যা হচ্ছে সেটা এ জাতি না গঠনের অদূরদর্শিতাই দায়ী। দেশপ্রেম দিয়ে যে উন্নয়ন সাধিত হয় সেটাই টেকসই এবং চিরকালের। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার উন্নয়ন টেকসই হয় না, হতে পারে না।

রবীন্দ্রনাথ জাপানকে পাঁচবার স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিলেন, অবাধে ঘুরেছিলেন এ দেশে। যত দেখেছিলেন ততই বুঝতে পেরেছিলেন— বিশৃঙ্খলা, কুশিক্ষা এবং ধর্মীয় সীমাবদ্ধতায় সংস্কৃতির বিকাশ ঘটে না, আত্মশক্তিহীনতায় শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ্বীর সমকক্ষ হওয়া যায় না, জাতিও গঠন করা যায় না। এ আধ্যাত্মিক শক্তিটা তিনি আরও আগেই নীরব বিপ্লবী ওকাকুরা তেনশিনের চিন্তার মধ্যে, চিত্রশিল্পী য়োকোয়ামা তাইকানের (১৮৬৮-১৯৫৮) শিল্পকলাচর্চার মধ্যে গভীরভাবে দেখতে পেয়েছিলেন। ১৯১৬ সালে প্রথম জাপান দর্শন এবং প্রায় মাস তিনেকের অবস্থান বাঙালি ও জাপানি এ দুই মহান জাতির শিক্ষা-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক ভাববিনিময়ের যে সেতুবন্ধ স্থাপন করেছিল তা আজ ইতিহাস। শতবর্ষের ইতিহাস। কিন্তু বৃহত্তর বাঙালি বা ভারতবাসীর কাছে অজানাই রয়ে গেল বলা চলে। 

সেই ইতিহাস অন্বেষণের জাগরণ নানা কারণে স্তিমিত হলেও মিলিয়ে যায়নি তার প্রমাণ পাওয়া যায় ১৯৬১ সালে জাপানে রবীন্দ্রনাথের শততম জন্মবর্ষ উদযাপনে—যা সাড়ে তিন বছর সময় নিয়ে বিপুল কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা হয়েছিল! আবার ঠিক এর অর্ধযুগ পরে ২০১১ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল বড় মাপের ‘ইন্ডিয়া-জাপান গ্লোবাল পার্টনারশিপ সামিট’— বেসরকারিভাবে তিন দিনব্যাপী। দুটোর পেছনেই ছিল দুটি সরকারের ব্যাপক সহযোগিতা। যেখানে রবীন্দ্র-ওকাকুরার আত্মিক এবং সাংস্কৃতিক মৈত্রীচিন্তার আলো জ্বলজ্বল করছিল!

সর্বশেষ খবর