শুক্রবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

খান সাহেবের পতন

মোস্তফা কামাল

খান সাহেবের পতন

পূর্ব পাকিস্তানের যে অবস্থা তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আইয়ুব খান সরকার হাজার চেষ্টা করলেও আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। আইয়ুব খান হয়তো তা উপলব্ধি করতে পারছেন। তাই তিনি প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিলেন, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি আর প্রার্থী হচ্ছেন না। তার এ ঘোষণা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। উদ্বিগ্ন মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরতে শুরু করে। অনেকেই বলতে শুরু করেন, শেষ পর্যন্ত আপদ বিদায় হচ্ছে! নাকি নতুন কৌশল খুঁজছেন তিনি! দেশের মানুষ যেভাবে ক্ষেপে আছে, তাতে কোনো কৌশলই কাজে আসবে না। বরং তা বুমেরাং হবে।

আইয়ুব খানের সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা শেখ মুজিবের কানেও পৌঁছে। এ কথা শোনার পর তাঁর মন ভালো হওয়ার কথা। স্বস্তি ফিরে আসার কথা। অথচ তাঁর দুশ্চিন্তা কাটছে না। তাঁর মন কিছুতেই ভালো হচ্ছে না। তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আসলে সার্জেন্ট জহুরুল হকের মৃত্যুর ঘটনাটি তাঁর মনোপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি মনে মনে ভাবেন, ক্যান্টনমেন্টে আটক অবস্থায় তার মতো একজন মানুষকে মেরে ফেলা হলো! আমাকে মানসিক নিপীড়নের জন্যই এটা করা হয়েছে। তার মানে, আমাকেও হত্যা করা হবে! এ পরিকল্পনা তো আগেই করা হয়েছিল! তখন সতর্ক ছিলাম বলে সুযোগ পায়নি। সার্জেন্ট জহুরুল হককে মেরে আমাকে বুঝিয়েছে, শেষরক্ষা আমারও হবে না! এর চেয়ে বড় মানসিক শাস্তি আর কী হতে পারে! প্রতি মুহূর্তে আমি মৃত্যুযন্ত্রণায় ভুগছি!

এ সময় একজন কর্নেল শেখ মুজিবের রুমে ঢুকলেন। তাকে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যান শেখ মুজিব। তিনি বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, আপনি! আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি!

জি। আমি আগে কখনো আসিনি। আমি কি একটু বসতে পারি? যদি আপনি অনুমতি দেন...

বসেন না! বসেন।

কর্নেল সাহেব শেখ মুজিবের মুখোমুখি বসলেন। তারপর বললেন, আপনি কি কোনো বিষয় নিয়ে বেশি টেনশন করছেন?

না। তেমন কিছু না। টেনশন করে কী হবে?

আপনার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে, আপনি খুব টেনশনে আছেন।

আসলে আমার মনটা ভালো নেই।

এখন আমি আপনাকে যে খবরটা দেব তাতে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।

তাই? কী খবর বলেন তো!

আমার ধারণা, আপনার টেনশনের মূল কারণ, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা!

শেখ মুজিব বললেন, বলতে পারেন।

সরকার আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। এবার গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন তো?

মামলা প্রত্যাহার করে নিলে অবশ্যই যাব।

ধন্যবাদ। আপনি দুই-একদিনের মধ্যেই খবর পাবেন। রাওয়ালপিন্ডি থেকে টেলিগ্রাম এসেছে। আপনার কাছে খবরটা পৌঁছানোর জন্য বলা হয়েছে।

খবরটি শেখ মুজিবের কাছে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হলো। তার চেহারায় যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ ছিল তা কাটতে শুরু করল। কর্নেল সাহেব নিজের চোখে শেখ মুজিবের চেহারার পরিবর্তন দেখলেন। তাঁর কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় শুধু বললেন, আপনাকে সুখবরটি দিতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।

 

শেখ মুজিব স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, সকালবেলা সুখবরটি দেওয়ার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

শেখ মুজিব আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন। দরজা খুলে বারান্দার দিকে পা বাড়ান। দুই-তিন কদম সামনে এগোতেই এক সেনা কর্মকর্তাকে দেখে দাঁড়িয়ে যান। তিনি কিছু বলার আগেই শেখ মুজিব বললেন, আপনি কি আমাকে কিছু বলতে এসেছেন?

সেনা কর্মকর্তা হাত তুলে সালাম দিলেন। তারপর বললেন, জি স্যার। আপনার মুক্তির আদেশ হয়েছে। শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।

ধন্যবাদ। খবরটা কোথায় পেয়েছেন?

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান জরুরি আইন প্রত্যাহার করেই সরকারি প্রেসনোট জারি করেছেন। প্রেসনোটে বলা হয়, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। ওই মামলায় অভিযুক্ত আপনিসহ সবাইকে মুক্তির আদেশ দেওয়া হয়েছে।

আবারও ধন্যবাদ।

জি আমরাও স্বস্তি পেলাম স্যার। আপনি আজই ছাড়া পাবেন।

সেনা কর্মকর্তার কথা শুনে আজ সত্যিই শেখ মুজিবের ভালো লাগছে। তার মনের মধ্যে আনন্দ খেলা করছে। তিনি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, রাখে আল্লাহ মারে কে! 

২.

১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি।

সকাল থেকেই হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতে থাকেন কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়। বাংলার মহানায়ক শেখ মুজিবকে অভিনন্দন জানাতে তারা দলে দলে আসছেন। তাদের হাতে ফুল,  ব্যানার, ফেস্টুন। আজ মহা-আনন্দের দিন। তাদের স্লোগানে মুখরিত পুরো ঢাকা শহর। ‘অগ্নিপুরুষ শেখ মুজিব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ!’ ‘আমার নেতা, তোমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব।’ মহাবীরের বেশে কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টের কারাগার থেকে বের হয়ে আসেন শেখ মুজিব। লাখো মানুষ বৃষ্টির মতো তাঁর গায়ে ফুল ছিটিয়ে দেয়। মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি। সাধারণ মানুষও তাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে মুক্ত করতে পেরে আনন্দে উদ্বেলিত।

একদিকে চলে শেখ মুজিবকে বরণ আর অন্যদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা ক্যান্টনমেন্টে প্রতিষ্ঠিত সামরিক আদালতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। যে আদালত শেখ মুজিবকে বিনা অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দিতে চেয়েছিল; সেই আদালতই পুড়ে ছাই হলো।

শেখ মুজিবের সঙ্গে অন্য অভিযুক্তরাও ছাড়া পেলেন। ছাড়া পেলেন দেশের বিভিন্ন জেলে আটক রাজবন্দীরা। শেখ মুজিব মুক্তি পেয়েই মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তাঁর বাসায় চলে যান। তার সঙ্গে দীর্ঘ সময় আলোচনা করেন আইয়ুব সরকারের দুঃশাসন ও দেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে। আইয়ুব খানের গোলটেবিল বৈঠকে যোগ না দেওয়ার জন্য মওলানা ভাসানী সাহেব শেখ মুজিবের প্রতি আহ্বান জানান।

২২ তারিখেই পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচি থেকে ঢাকায় আসেন। তিনি মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভুট্টো সাহেব গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান না করার পক্ষে মত দেন। তিনি মনে করেন, গোলটেবিল বৈঠকে রাজনৈতিক নেতারা যোগ না দিলে আইয়ুব খানের মিশন ব্যর্থ হবে। এবং তাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। রাজনৈতিক নেতাদের জন্য তিনি নতুন করে ফাঁদ পেতেছেন। সেই ফাঁদে আমরা পা দিলে বিপদে পড়তে হবে।

ভাসানী সাহেব ভুট্টোর সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, গোলটেবিল বৈঠক স্রেফ লোক দেখানো ভাঁওতাবাজি ছাড়া আর কিছুই না। শেখ মুজিব বললেন, গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের বিষয়ে পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানালেন। এ বিষয়ে তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন না।

 

ভুট্টো সাহেব শেখ মুজিবকে শেষবারের মতো গোলটেবিল বৈঠকে যোগ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে করাচিতে চলে গেলেন।

শেখ মুজিব ভুট্টো সাহেবের বিষয়টা নিয়ে ভাবলেন। ভুট্টো সাহেব আসলে কী চান? তিনি আইয়ুব খান সরকারের মন্ত্রী ছিলেন! অথচ এখন প্রেসিডেন্ট সাহেবের সঙ্গে তার সম্পর্ক শত্রুভাবাপন্ন। তার বৈঠকে নিজে তো যোগ দেবেনই না; আমাদেরও বারণ করছেন। আমরা যাব কিনা সে সিদ্ধান্ত তো আমাদের! ভুট্টো সাহেব কেন গোলটেবিল ব্যর্থ করার মিশনে নামলেন!

শেখ মুজিব নিজে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন কিনা তা নিয়ে ভাবেন। হঠাৎ তার সামনে এসে দাঁড়ান ডাকসু ভিপি তোফায়েল আহমেদ। তিনি শেখ মুজিবকে উদ্দেশ করে বলেন, সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে আপনাকে গণসংবর্ধনা দিতে চাই। আপনি কোনোরকম আপত্তি করবেন না মুজিব ভাই।

শেখ মুজিব বললেন, আচ্ছা, করব না। অনুষ্ঠান কবে করতে চাও?

আরেকটু সময় নিলে ভালো হতো না?

আপনি আবার ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।

ঠিক আছে যাও। আয়োজন কর।

তোফায়েল আহমেদ একটা হাসি দিয়ে বের হয়ে গেলেন।

পরদিন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবকে গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। সভার মঞ্চটি তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের রাস্তা থেকে রেসকোর্স ময়দানের একটু ভিতরে। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সারা দেশ থেকে কয়েক লাখ লোক উপস্থিত হয়। সংবর্ধনা সভার সভাপতি ডাকসুর ভিপি তোফায়েল আহমেদ শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করেন। অনুষ্ঠানে শেখ মুজিব প্রায় ৫০ মিনিটের মতো বক্তৃতা করেন। টানা তিন বছর কারাগারে আটক থাকার পর এটাই তাঁর প্রথম ভাষণ। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকুন। আমি যদি এ দেশের মুক্তি আনতে ও জনগণের দাবি আদায় করতে না পারি, তবে আন্দোলন করে আবার কারাগারে চলে যাব। বাংলার মাটিকে আমি ভালোবাসি। বাংলার মাটিও আমাকে ভালোবাসে। ১১ দফা জিন্দাবাদ।

সন্ধ্যায় শেখ মুজিব ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে ফেরেন। বাড়িতে তিনি ছাত্রনেতাদের ডেকে পাঠান। শেখ ফজলুল হক মণি, সিরাজুল আলম খান, আবদুর রাজ্জাক, আবদুর রউফ, খালেদ মোহাম্মদ আলী, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখের সঙ্গে তিনি গোলটেবিল বৈঠকের বিষয় নিয়ে শলাপরামর্শ করেন। ছাত্র নেতারা বলেন, ছয়দফা ও ১১ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত না হওয়া পর্যন্ত রাওয়ালপিন্ডির গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেওয়া সমীচীন হবে না। শেখ মুজিব বললেন, গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়ে মওলানা ভাসানী সাহেবের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনিও আমাকে বলেছেন, গোলটেবিল বৈঠকে তিনি যোগ দেবেন না। তবে আমি মনে করি, গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করে ছয়দফা ও ১১ দফা দাবি জোরালোভাবে পেশ করা উচিত।

শেখ মুজিব ছাত্রনেতাদের এই বলে আশ্বস্ত করেন, ছয়দফা ও ১১ দফা দাবি যদি আইয়ুব খান ও অন্য রাজনৈতিক নেতারা মেনে না নেন তাহলে তিনি গোলটেবিল বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করবেন। তার বক্তব্যের পরেও ছাত্রনেতারা গোলটেবিল বৈঠকে যোগদানের বিরোধিতা করেন। এ সময় শেখ মুজিব তার জামাতা ওয়াজেদ মিয়ার মতামত জানতে চান। তিনি শেখ মুজিবকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি গোলটেবিল বৈঠকে যোগদান করলেও ছয়দফা ও ১১ দফার আন্দোলন বিঘ্নিত হবে না। কাজেই আপনি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে পারেন। শেখ মুজিব তার বক্তব্যে সহমত হয়ে বলেন, আমি গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিব।

পরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিব নয় সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির উদ্দেশে রওনা হন। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও শেখ মুজিবের সফরসঙ্গী হিসেবে রাওয়ালপিন্ডি যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ চৌধুরী, ড. সারওয়ার মুরশিদ, ড. আবদুর রাজ্জাক, ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম, ড. কামাল হোসেন প্রমুখ।

নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৬ ফেব্রুয়ারি রাওয়ালপিন্ডিতে আইয়ুব খানের সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হয়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গোলটেবিল বৈঠক বর্জন করে। বৈঠকটি ২৮ তারিখ পর্যন্ত চলার পর ১০ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়। ২৮ তারিখেই শেখ মুজিব ঢাকায় ফিরে আসেন। ৯ মার্চ শেখ মুজিব আবার আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী, খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে সঙ্গে নিয়ে রাওয়ালপিন্ডি যাত্রা করেন। এ সময় ভাসানী সাহেবও বৈঠকে যোগ দেন। তবে পিপিপি নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠক বর্জন করেন। ১০ মার্চের গোলটেবিল বৈঠকের প্রথম অধিবেশনেই শেখ মুজিব তেজোদীপ্ত কণ্ঠে ছয়দফা ও ১১ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। কিন্তু আইয়ুব খান শেখ মুজিবের দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি গোলটেবিল বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করেন।  পরে শেখ মুজিব তাঁর দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় ফিরে আসেন।

৩.

প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের আহ্বানে রাওয়ালপিন্ডিতে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠক কার্যত ব্যর্থ হলো। শেখ মুজিবের ছয়দফা, মওলানা ভাসানীর ১৪ দফা এবং সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবি অস্বীকৃত হলো। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে গেল অপূর্ণ। সঙ্গত কারণেই পূর্ব পাকিস্তানের আত্মনিয়ন্ত্রণকামী, স্বায়ত্তশাসনকামী মানুষকে আন্দোলনের পথেই থাকতে হলো। আইয়ুব খান ঘোষণা করলেন, তিনি শাসন ক্ষমতা থেকে অবসর নেবেন। মৌলিক গণতন্ত্রের স্থান নেবে প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকার ভিত্তিক সংসদীয় গণতন্ত্র। এককেন্দ্রিক শাসনতন্ত্র বাতিল করে যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হবে। সংসদীয় শাসনে রাষ্ট্রপতির জায়গায় প্রধানমন্ত্রী হবেন সরকারি ক্ষমতার কেন্দ্রস্থল এবং রাষ্ট্রপতি নামেই থাকবেন রাষ্ট্রপ্রধান।

পূর্ব পাকিস্তানে আইয়ুব খানের দোসর মোনেম খানকে বাদ দিয়ে নতুন গভর্নর করা হলো প্রাদেশিক সরকারের অর্থমন্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এন হুদাকে।

এর কয়েকদিন পরই সারা দেশে খবর রটে গেল, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান বিদায় নিচ্ছেন। অবশেষে তিনি ২৫ মার্চ তাঁর আরেক দোসর সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে প্রস্থান করেন। আনন্দের সাগরে ভাসে পূর্ব পাকিস্তান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর