শুক্রবার, ৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
গল্প

ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর

মাকিদ হায়দার

ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর

অলংকরণ : শাকীর

মনটা তখুনি খারাপ হয়, যখন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে আষাঢ়-শ্রাবণ মাস। মাস দুটি এলেই বৃষ্টির কান্নার ধ্বনি শোনা মাত্রই মনের ভিতরের দীর্ঘদিনের তাড়না ক্ষণিকের জন্য হলেও তখন তিনি, তার ভাড়া ঘরের ভিতরে নিজেকে আটকে রাখতে পারেন না। বৃষ্টির কান্নার সঙ্গে সঙ্গে মনটা একা একাই গোপনে গোপনে কাঁদতে থাকে। তার মনটাকে খুব বেশিক্ষণ কাঁদার সুযোগ না দিয়ে যেন নিজের মনের অজান্তেই এক পা, দুই পা করে ভাড়া বাড়ির তিন তলার খোলা ছাদে তাকে ভিজতে যেতে হয়। আষাঢ়-শ্রাবণের কখনো প্রবল বৃষ্টিপাতে, কখনো বা ইলশে গুঁড়ির হিম লাগা বাতাসে। আষাঢ়-শ্রাবণ এমনকি ভাদ্র-আশ্বিন মাসে বৃষ্টি এলেই তিনি কামনা করেন আসুক, প্লাবিত হোক, ডুবে যাক চিরতরে মালিবাগের ভাড়া বাসা, আসুক অজস্র বৃষ্টি ধারা। হোক বন্যা, হোক মহামারী, সেই মহামারীতে আমি যেন যেতে পারি চিরতরে।

পুনরায় সেই আষাঢ়-শ্রাবণের বৃষ্টি ধারার সঙ্গে গোপনে মিশিয়ে দিতে হয় তার চোখের ভিতরে জমানো অজস্র ব্যথা। অজস্র বেদনার উষ্ণ চোখের জল। যে জলেতে মিশে আছে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের এক সহপাঠীর-তারুণ্যের উজ্জ্বলতায় পরিপূর্ণ, বিভা মাখানো একটি মাত্র মুখ। যে মুখটা সে তার চোখ থেকে কিছুতেই নামাতে পারেন না। যেন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই একটি মাত্র মুখ। দ্বিতীয় মুখটি তার স্বামী গাজী আদনানের। তবু ছাদে দাঁড়িয়ে তাকে কাঁদতে হয় অজস্র জলধারার ভিতরে- যখন তিনি এক সময় অনুভব করেন, বৃষ্টি কিছুটা কমেছে, কিংবা ক্ষণকালের জন্য ছেড়ে যাবে, তখনি তিনি ভেজা শরীরের ভেজা শাড়ির দিকে তাকিয়েই লক্ষ্য করেন শাড়িটির আঁচল ছিঁড়ে গেছে কিয়ংকাল আগে। এক পা দুই পা করে তিনতলার ছাদ থেকে নিজের ভাড়া ফ্ল্যাটের জানালার কাছে গিয়ে আপন মনে তাকে বেশ কিছুক্ষণ ভাবতে হয়, ভুলটা কার হয়েছিল। প্রথম মুখটির (নাকি নিজের, আমার)।

প্রশ্নটি নিজেকেই বারবার করতে থাকেন মিসেস আদনান। আর তখনি তাকে ভাবতে হয় দ্বিতীয় মুখটি তার স্বামী গাজী আদনানের অবশ্যই নয় অথচ দ্বিতীয় মুখটির সঙ্গে প্রায় বছর দুই-তিনেক আছেন এবং থাকেন এক বিশাল শূন্যতার ভিতরে, নিস্তব্ধতার গভীরে। দুই রুমের এই ফ্ল্যাটে। আর নতুন কেউ নেই। থাকলে অন্তত আলনার শাড়ি, ড্রেসিং টেবিলের ওপর সাজানো-গোছানো, অথচ এক ধরনের অবহেলায়-অযন্তে মাসের পর মাস সাজসজ্জার পাউডার, ক্রিম, দামি পারফিউম থেকে শুরু করে চুলের রিবন, নেইলপলিশ, সুশ্রী চিরুনি, এমনকি আরও অব্যবহৃত প্রসাধনী যদি কেউ ফেলে ভেঙে দিলেও তার ভালো লাগতো, হোক সে ছেলে অথবা মেয়ে। অথচ সে সবের কিছুই নয় এই শূন্য ঘরটার ভিতরে।

ভেজা চুলের জল যখন চুইয়ে চুইয়ে শাড়ি ছেঁড়া আঁচল বেয়ে গড়িয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন তাকে বাথরুমের ছানি পড়া আয়নার সামনে দাঁড়াতেই হয়। কিছুটা সময় যেতে না যেতেই যেন তিনি মনের অজান্তেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেই সৌম্যকান্তির মুখমণ্ডলকে ছানি পড়া আয়নার কাচের ভিতরে ঝাপসা ঝাপসা দেখতে পান। আর তখুনি ভেজা চুলের ভেজা শাড়ির সেই মিসেস আদনান হক যেন শুনতে হয় তামিমা ভালো আছেন।

গত শনিবার বৃষ্টিতে যখন শান্তিনগর, মালিবাগ, এমনকি চারশ বছরের ঢাকা শহর ভেঙে যাওয়ার উপক্রম, সেদিন তিনি তিন তলার ছাদে না গিয়ে নিজের ঘরের বারান্দায় পিঠ ঠেকিয়ে অনেকক্ষণ ধরে নিজের পিঠের অংশটুকু ভিজিয়ে ছিলেন। শনিবারের সেই আধা ভেজা তার ভালো লাগেনি। তবে ঝড় বৃষ্টির কথা তাকে জানিয়েছিল। আবহাওয়া দপ্তরের মিথ্যে ঘোষণায় ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত, ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। ৬নং সিগন্যাল দেওয়া হয়েছে সমুদ্র বন্দরগুলোকে। অথচ ঢাকা শহরে কোনো সমুদ্র এমনকি বন্দরও নেই। তামিমা বেগম যাননি তিনতলার ছাদে। সেদিনও তাকে কাঁদতে হয়েছিল বারান্দায় দাঁড়িয়ে।

কান্নার সময় তিনি লক্ষ্য করেছিলেন তার ফ্ল্যাটের বিপরীতে আরেকটি তিন তলার ছাদে একটি লোক অকারণে ভিজছে, তিনি একা, হাতে ছাতা থাকা সত্ত্বেও  লোকটি কেন ওইভাবে ভিজছে আবার শ্রাবণের বৃষ্টিধারায়? তখন মিসেস আদনানের মনে হয়েছিল তার ফেলে আসা শিক্ষাজীবনের একটি প্রিয় মুখের মতো যে মুখটি তিনি তখন দেখতে পেয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি রুমে। মনে হয়েছিল মুখটি বোধহয় তার সেই সহপাঠীরই হবে। বৃষ্টি একসময় কমে এলেও অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন তামিমা বেগম এবং চোখ দুটি একটুও এদিক-সেদিক সরালেন না। অপেক্ষার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে যখন তিনি ক্লান্তি অনুভব করলেন তখনি তার মনে হলো ভুলভ্রান্তিতেই আমার জীবনটাকে কাটিয়ে দিতে হবে এবং একসময় দেখলেন বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তিনতলার ছাদে কেউ নেই। বাড়িওয়ালার অসমাপ্ত বাড়ির অনেকগুলো লোহার রড একদৃষ্টে যেন তাকিয়ে আছে তার দিকে। তখন তাকে আবার  কাঁদতে হলো নিঃসঙ্গ বারান্দায় দাঁড়িয়ে। একা একা যখন নিঃসঙ্গ একাকী, যখন সময় কিছুতেই কাটতে চায় না তামিমা বেগমের তখনি তার মনে হয়, সৃষ্টিকর্তা মানুষের মন নামক একটি সৃষ্টি ছাড়া এবং অসম্ভব চঞ্চল বস্তুকে কেন যে তিনি তারই সৃষ্টি মানুষের বুকের ভিতরে গেঁথে দিয়েছিলেন। সেই প্রশ্নের উত্তর অন্য কারও জানা থাকলেও অন্তত তার জানা নেই। শুধু জানা আছে তার দেহের ভিতরে, শরীরের ভিতরে এবং ব্যথিত হৃদয়ের মাঝখানে একটি ‘মন’ অসভ্য, ইতর এক লোকের বাড়ি আছে, এই মুহূর্তে সেই অসামাজিক ইতর, অসভ্য লোকটির বাড়িতেই তাকে বিনাভাড়ায় থাকতে হবে আমরণ।

বিনাভাড়ায় বাড়িওয়ালা কোনো দিনই এসে বাড়ির দরজার শেকল ঝাঁকিয়ে অথবা কলিংবেল টিপে ভাড়া চাইবে না, তবে মাঝেমধ্যে অদৃশ্য বাড়িওয়ালা কিছু কথা তামিমাকেই মনে কারিয়ে দেবে সেটি বছরের যে কোনো ঋতুতেই হোক না কেন, হতে পারে আষাঢ়-শ্রাবণ, হতে পারে চৈত্র-বৈশাখ।

বেশ কয়েক বছর আগে অনার্স পড়ার সময় থেকে একটি মুখ যেন দিনরাত তাকে কারণে-অকারণে অনুসরণ করে চলেছিল, তখন তামিমার নিজের বুকের ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই দুষ্টু প্রকৃতির সেই অসভ্য ইতর প্রকৃতির ‘মন’ একটি মাত্র মানুষের মুখ। তার পড়ালেখার খাতার পাতায় যেন বারবার ছবি হয়ে কারণে-অকারণে এসে দাঁড়িয়ে মৃদু হেসে জানতে চাইতো তামিমা, অনার্সে প্রথম শ্রেণি পেতে হলে আপনার বিভাগের দু-চারজন শিক্ষকের সঙ্গে যেন পরিচয় ঘনিষ্ঠ থাকে, তবেই না পাওয়া যেতে পারে। অনার্সে প্রথম শ্রেণি। নয়তো নয়।

আজ এই বৃষ্টি ঝরা, বিষণœ দিনে কালো মেঘের দুষ্টু আচরণে দিনটায় একবারও সূর্যের মুখ দেখতে না পেলেও তামিমা দুটি মুখ দেখলেন তার সেই মনের আয়নায়। একটি মুখ খুবই উজ্জ্বল, প্রতিনিয়তই যাকে দেখতে হয় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায়। সেই মুখ তার স্বামী ব্যাংকার গাজী আদনানের। অপর মুখটিও তিনি দেখতে পান তবে নিষ্প্রভ, খুবই অস্বচ্ছ, আবছা। বর্তমনে একটি মুখ নিয়েই তার যত ভাবনা-চিন্তা। ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত ব্যাংকার সেই সকাল ৮টায় ভাড়া বাসা থেকে বেরিয়ে সন্ধ্যা ৭-৮টায় বাসায় ফেরার আগে তামিমার মধ্যহৃদে লুকিয়ে থাকা সেই অসভ্য ইতর মনটি যেন সভ্য হয়ে গাজী আদনানের জন্য দীর্ঘক্ষণ আগে থেকেই অপেক্ষা করতে থাকে। কখন কলিংবেল বাজবে অপেক্ষা করতে হয় হয়তো কারও অদৃশ্য ইঙ্গিতে।

গাজীর যেদিন বাসায় ফিরতে দেরি হয় সেদিন তামিমাকে ঘর বারান্দা করতে করতে মনে হয় কোথাও কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি তো। নাকি ঢাকা শহরের দীর্ঘ জ্যামজটের ভিতরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছে তাদেরই ব্যাংকের ভাড়া করা গাড়িটি। এই আষাঢ়-শ্রাবণের ক্লান্তিহীন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির ভিতরে গাজীকেও কি কাঁদতে হয় আমরাই মতো। সেই প্রশ্নের উত্তর মধ্যহৃদ থেকে ফিরে আসতে না আসতেই দরজার কলিংবেল কাঁদতে কাঁদতে জানিয়ে দেয় গাজী আদনানের উপস্থিতির কথা। কলিংবেলের কান্নার ধ্বনিকে উপেক্ষা না করে দরজা খুলতেই সামনে এসে দাঁড়ায় পাশের ফ্ল্যাটের নতুন ভাড়াটে।

নতুন ভাড়াটেকে দেখে তামিমা মনেপ্রাণে বিরক্ত হলেও ভদ্রতার প্রশ্নেই তাকে বলতে হলো, দিদি ভিতরে আসুন, দিদি ভিতরে না এসে খুবই নিচুলয়ে কথায় অনুনয় বিনয় মাখিয়ে বললেন গোটা কয়েক কাঁচালঙ্কা দিতে হবে ও বাসায় এলেই বাজার থেকে আনিয়ে ফেরত দেবো আপনাকে। কোনো কথা না বলে দরজার উপরে দাঁড় করিয়ে রেখে গোটা কয়েক কাঁচালঙ্কা মিসেস ঘোষালের হাতে তুলে দিতেই চোখ পড়লো, কাকভেজা হয়ে উপরের দিকে উঠছে গাজী আদনান।

হাতে এক গোছা রজনীগন্ধা। দুটি বকুলের মালা নিয়ে তামিমার হাতে এবং গলায় পরিয়ে দিয়েই গাজী আদনান ক্ষান্ত হয় না। সেই সঙ্গে একটি মিষ্টি চুম্বন উপহার দিতেও ভুল করেন না তরুণ ব্যাংকার। আর তখুনি মনে হয় প্রথম মুখটির কথা তামিমার। যে মুখ থেকে একদিন তামিমা শুনেছিল রবিঠাকুরের একটি গানের চরণ-‘যায় দিন শ্রাবণ দিন যায়’। বেশ কয়েক মাস পরে পাবলিক লাইব্রেরির খোলা বারান্দায়, অনেকের মতো পাশাপাশি বসে, সেই সদা উজ্জ্বল মুখটি বসন্তের মাঝামাঝি সময় একদিন জানতে চেয়েছিল, শেষের কবিতার অমিত চরিত, কেমন লাগে আপনার কাছে। লোকটিকে কেমন মনে হয়। সেই প্রশ্নের উত্তর বাংলা বিভাগের অনার্সের ছাত্রী তামিমা বেগম জানলেও উত্তরটা না দিয়ে, নিশ্চুপ থেকে বসিয়ে দিয়েছিলেন, অমিত লোকটি কথার সাগর, লোকটি লাবণ্যের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। লোকটি ভালো নয়। আপনিও কি একদিন অমিতের মতো...। পরের কথাটুকু আর না ভেবে পা বাড়িয়ে দিয়েছি রোকেয়া হলের গেটের দিকে। জয়নুল আবেদিন তার কথার কোনো সদুত্তর না পেয়ে তিনি সেদিন নিশ্চিত হয়েছিলেন, তামিমা বেগম অতি সাধারণ এক অনুজ্জ্বল মেয়ে অহংকার তাকে মানায় না। তবে গুণবতী তিনি।

কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটমগুল থিয়েটার হলে মাইকেল দত্তের নির্ভুল উচ্চারণে কবিতা পাঠ করে বাচিক শিল্পীর প্রথম পুরস্কারটি গ্রহণ করেছিলেন ভিসি মহোদয়ের হাত থেকে। ভাষণে ভিসি স্যার বলেছিলেন, বাচিক শিল্পীর উচ্চারণ, বাচনভঙ্গি এবং যুক্তশব্দের ব্যবহার কবিতা পাঠের কোন স্তরে কোথায় চড়ায় উঠতে হবে নামতে এবং থামতে হবে কোথায় সেটি খুবই সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে তামিমা বেগম। তাকে অভিনন্দন।

দ্বিতীয় অভিনন্দনটি দিয়েছিলেন বিভাগের প্রধান। জয়নুল আবেদীনের রবীন্দ্র সংগীতানুষ্ঠানে। ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’ অনুষ্ঠান শেষে নাটমগুলের মঞ্চ থেকে নেমে কয়েকশ গজ এগিয়ে লাইব্রেরির কাছাকাছি আসতেই যেন দ্রুত পায়ে হেঁটে এসে আবেদীন কোনো কথা না বলে এক জোড়া বকুল ফুলের ভেজা মালা তামিমার হাতে তুলে দিয়ে যে লয়ে এসেছিল তার চেয়ে প্রলয় লয়ে মুহূর্তের ভেতরেই যেন হারিয়ে গেল। তামিমা কিছুতেই বুঝত পারল না আবেদীন কোনদিকে পালালো। আজ দীর্ঘদিন পরে ভেজা বকুলের মালা দেখে, তাকে ফিরে যেতে হয়েছিল। সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কোনো আবৃত্তি ভেজা শ্রাবণের সন্ধ্যার ওপারে।

গাজী আদনানের জীবনে একটি মাত্র নতুন মুখ একবারই তার চোখে ঠাঁই পেয়েছিল, সেটিও ক্ষণস্থায়ী। সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ কলেজে বিকম পড়ার সময়, মেয়েটির নাম মনে না থাকলেও অল্প কিছুদিন পরেই গাজী জানতে পেরেছিল মেয়েটির বিয়ে হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে গেছে। সেই তার জীবনে প্রথম এবং সর্বশেষ একটি প্রিয় মুখ। আর দ্বিতীয় মুখটি তারই স্ত্রী তামিমা বেগমের। তামিমা যদিও এমএ পাস। গাজী আদনানের সে সৌভাগ্য হওয়ার আগেই চাকরি জুটেছিল ব্যাংকের উচ্চ করণিক পদে।

যেদিন সন্ধ্যায় রজনীগন্ধা আর বকুলের মালা হাতে গাজী খুব খুশি মনে বাসায় এসেই একটি সুসংবাদ দিয়েছিল। তার প্রমোশন হয়েছে। সঙ্গে মতিঝিলের হেড অফিসে বদলি।

সেই হেড অফিসেই একদিন গাজী আদনান তার স্ত্রীকে নিয়ে গিয়েছিল। পরে শান্তিনগরে গাইনির ডাক্তারের কাছে যাবেন। মুখে মুখে ঘণ্টাচারেকের জন্য ছুটি চাইতে যে বড় অফিসারটির কাছে সস্ত্রীক গিয়েছিলেন তিনি শুধু একবার তামিমার মুখের দিকে তাকিয়ে আর দ্বিতীয়বার না তাকিয়ে শুধু বলেছিলেন, আজ আর গাজী আদনান, আপনাকে অফিসে আসতে হবে না।

বাচিক শিল্পী বাসায় ফিরে এসে নিজের অজান্তেই ভিজিয়েছিল দু’চোখ। আর ঠিক তখনি পাশের ফ্ল্যাটের মিসেস ঘোষালের ড্রয়িংরুম থেকে রবিঠাকুরের গানের চরণ ভেসে এলো ‘ভালোবাসিবারে দে আমারে অবসর’।

সর্বশেষ খবর