শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
গল্প

খুনি

সাঈদ আজাদ

খুনি

নারাণদিয়া কলিমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজী রফিকউদ্দীন। গ্রামের সবাই অবশ্য তাকে রফিক মাস্টার বলেই ডাকে। বিদ্যালয়ে তিনি সবার আগে আসেন, যান সবার শেষে। যোগদান করেছিলেন এ বিদ্যালয়েই, সহকারী শিক্ষক হিসেবে। মাঝে অবশ্য বছরখানেকের জন্য প্রধান শিক্ষক হিসেবে ফরিদপুরে চাকরি করেছেন। তারপর আবার এ বিদ্যালয়। প্রধান শিক্ষক হিসেবে তার ক্লাস নেওয়ার কথা না, তা হলেও তিনি প্রতিদিন দু’তিনটা ক্লাস নেন।

অন্য শিক্ষকরা সব চলে গেছে কখন! দফতরি কালিপদকে রেখে রফিক মাস্টার স্কুল থেকে বের হওয়া মাত্র শুরু হলো অঝর বর্ষণ। বৃষ্টির ঝাপটায় অনেকটা ভিজে গেলেন তিনি। ক্লাসে যখন পড়াচ্ছিলেন ভিতরটা কেমন অন্ধকার অন্ধকার লাগছিল বটে, কিন্তু আকাশে যে এত মেঘ জমেছিল কে জানত! কী বৃষ্টি! কী বৃষ্টি! সামনে তাকালে দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। বৈশাখের শেষ চলছে। এখনই এমন বৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। তা হচ্ছে বলে ভালোই লাগছে। তৃষিত মাটি দ্রুত শুষে নিচ্ছে পানি। কলকল শব্দে নামছে পানি শুকনা খালে। খড় কুটা পাতা ভেসে যাচ্ছে পানির তোড়ে। কেমন শীতল একটা হাওয়া বইছে। শরীর জুড়িয়ে যায়।

রফিক মাস্টার দুলালের চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলেন বৃষ্টি থেকে বাঁচতে। ঝরঝর...ঝরঝর ঝরছেই ধারা। গাছের পাতায় টিনের চালে। কেমন ছন্দময় একটা আওয়াজ হচ্ছে। দল বেঁধে ছেলেরা ভিজতে নেমেছে বৃষ্টিতে। কাকেরা গাছের ডালে ভিজে ভিজে গোছল করেছে। হাঁসের দল বের হয়েছে। যেন সবাই অপেক্ষা করছিল বৃষ্টির।

তা অপেক্ষা করবে না-ই বা কেন! কী গরমটাই না পড়েছে ক’দিন ধরে। গ্রীষ্মের রোদে জমিজমা ফেটে হয়েছে শতচির। চারদিকে হাঁসফাঁস গরম। হাওয়া নেই। গাছের পাতাও নড়ে না। খালের পানি শুকিয়ে কাদা। এখন বৃষ্টিতে কী স্বস্তি!

স্যার বসেন না। চায়ের দোকানদার বলে। চা দিমু নাকি এক কাপ?

রফিক বাইরে তাকিয়ে দেখছিলেন। ভালো লাগছিল দেখতে। এমন বৃষ্টি দেখেও চোখের আরাম। চোখ ফিরিয়ে বললেন, দাও। দেখেছো দুলাল, কেমন বৃষ্টি!

হ স্যার, আকাশ ভাইঙ্গা নামছে। বৃষ্টিটার দরকার ছিল খুব। এইবার যদি একটু শান্তি হয়। ধানের চারাত সব শুকাইয়াই গেছিল। যদি একটু পানি পায় এইবার।...ভালা কথা, স্যার সালামের কোনো খোঁজ পাইলেন?

না। আর খোঁজ পেলেই কী হবে। কত বছর হয়ে গেল। রফিক চায়ের কাপে চুমুক দেন। বেশ লাগছে বাদলার দিনে চাটা।

এইটা কী কন স্যার! এত বড় একটা অপরাধ করল আর তার বিচার হইব না!

অপরাধ যে সালামই করেছে তার তো কোনো প্রমাণ নাই।

বড় প্রমাণ হইল সে ঘটনার পরপর পালাইয়া গেছে। অপরাধী যদি না-ই হইব, তাইলে এত বছর পলাইয়্যা আছে কিয়ের লাইগ্যা কন।... স্যার যদি বেয়াদবি না মনে করেন, একটা কথা কই।

রফিক তাকান দুলালের দিকে। কথা বলেন না। জানা কথাই দুলাল কী বলবে। গ্রামের অনেকেই বহুবার বলেছে সে কথা। তার একা থাকাটা গ্রামের মানুষ কেন জানি মেনে নিতে পারে না।

এইবার একটা বিয়াশাদি করেন স্যার। সংসার করার দরকার আছে না। শেষ বয়সে কে দেখব আপনেরে?

বৃষ্টির যে ধরন দেখছি, মনে হয় না সহসা কমবে। আমি বরং যাই দুলাল। তাছাড়া অনেকদিন ভিজা হয় না বৃষ্টিতে। চা খেয়ে দাম মিটিয়ে রফিক মাস্টার পা বাড়ান। যেতে যেতে শোনেন, দুলাল কাকে যেন বলছে আহা, বউয়ের প্রতি বড় ভালোবাসা মানুষটার!

বৃষ্টি পড়ছেই। পানিটা একটু ঠান্ডা ঠান্ডা যেন! তা হলেও ভিজতে ভালো লাগছে। এমন বৃষ্টির বিকালে আয়না কতদিন মটর কী ছোলা ভাজত। চাল ভাজার সঙ্গে মটর বা ছোলা ভাজা খেতে বেশ লাগে। অনেক দিন খাওয়া হয় না। বৃষ্টির রাতে আয়নার রাঁধা খিচুড়িটাও ভালো। খিচুড়ির সঙ্গে শুকনো মরিচ আর রসুন পোড়া ভর্তা। ধনের গুঁড়া মিশিয়ে হাঁসের ডিম ভাজা। আজ খেতে ইচ্ছে করছে খুব।

বৃষ্টিতে পা টিপে টিপে হাঁটেন রফিক মাস্টার। পিছলানোর ভয় আছে। সড়ক ভিজে এখন কাদা কাদা।

রফিক মাস্টারের বাড়িটা বলতে গেলে ছাড়াবাড়ি। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে। কাছাকাছি বসতি নেই। বাড়ি পৌঁছতে পৌঁছতে প্রায় রাতই হয়ে গেল। বৃষ্টি ততক্ষণে ধরে এসেছে। তুমুল স্বরে ডাকছে ঝিঁঝিঁ। আকাশে মস্ত চাঁদ। জ্যোৎ¯œা ফুটফুট করছে উঠানজুড়ে। বাড়ির শেষে ফসলের মাঠ। মাঠজুড়েও জ্যোৎ¯œা হাসছে।

টিউবওয়েল চেপে গোসল করলেন রফিক মাস্টার। অনেকক্ষণ ধরে মাথায় পানি ঢাললেন। ঠান্ডা পানিতে কেমন শীত শীত করছে।...সকাল থেকেই আজ কেমন অশান্তি অশান্তি লাগছে। বুকের ভিতরটা শূন্য শূন্য। মাথাটাও একটু যেন ঝিমঝিম করছে। বয়স হয়েছে। হুট করে বৃষ্টিতে ভেজা বোধহয় ঠিক হয়নি। আবার জ্বরজারি না আসে।

রান্না করতে আলসেমি লাগছে। কিন্তু খাওয়া দরকার। সকালে কিছু মুড়ি খেয়েছিলেন। দুপুরেও তেমন খাওয়া হয়নি। এক কাপ চা আর দুটা টোস্ট বিস্কুট। আসলে আজকের দিনটায় কিছু খেতে ইচ্ছে করে না তার। কিন্তু ক্ষুধায় পেট চিনচিন করছে এখন।

বিদ্যুৎ নেই। কখন আসবে কে জানে! ক’দিন ধরে আজকাল সন্ধ্যার পর থেকে বিদ্যুৎ থাকেই না বলতে গেলে। স্টোভ জ্বেলে রান্না বসান রফিক মাস্টার। আতপ চাল মুসরি আর মাষকলাইয়ের ডাল মিশিয়ে পাতলা খিচুড়ি। রান্নার মাঝে আস্ত পেয়াজ কাঁচামরিচ রসুনের কোয়া দিতে হবে। রান্নাটা আয়নার কাছ থেকে শেখা। ঘরে হাঁসের ডিম আছে, ভেজে নিলেই হবে।

এসো আয়না। এই পিঁড়িটায় বস। বসে বসে আমার রান্না দেখ।

কী রাঁধো?

খিচুড়ি আর ডিম ভাজা। হাঁসের ডিম। খিচুড়ি রান্না তোমার কাছ থেকেই শেখা। বিকালে কেমন ধুম বৃষ্টি হয়ে গেল! গরমটা এখন কমেছে, না?

হু।

নীল শাড়িতে তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আয়না। মনে হচ্ছে জোছনা রাতে পরী নেমেছে আকাশ থেকে। নীল পরী।

তোমার খাওয়া দাওয়াতে খুব কষ্ট হয় না?

তা কষ্ট কিছুটা হয় অবশ্য।

গন্ধরাজ লেবু গাছটায় ফুল ফুটেছে মনে হয়। কেমন সুন্দর গন্ধ বাতাসে!

তাইতো! এতক্ষণ খেয়াল করিনি। তুমিইতো লাগিয়েছিলে গাছটা।...মনে হয় জ্বর আসছে আমার আয়না। শীতে কেমন গায়ে কাঁটা দিচ্ছে।

বৃষ্টিতে ভিজা ঠিক হয়নি।

ইচ্ছে করল যে।  

সারাদিন একা একা থাক। এত বড় বাড়ি, তোমার খারাপ লাগে না?

সারা দিনতো স্কুলেই কাটে। সমস্যা রাতে। তুমি ছাড়া কেউতো নেই কথা বলার।... রফিক মাস্টার আয়নার সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে খিচুড়ি রান্না শেষ করেন। ধনের গুঁড়া মিশিয়ে ডিম ভাজেন।... প্রতিদিন রাতে বাড়ি ফিরেই তিনি রান্না করতে করতে আয়নার সঙ্গে গল্পস্বল্প করেন। অনেক রাত পর্যন্ত। এমনভাবে কথা বলেন, আড়াল থেকে কেউ তার কথা শুনলে ভাববে আয়না বুঝি তার সামনে বসে আছে। অথচ তের বছর আগে মারা গেছে আয়না। আজকে আয়নার মৃত্যু দিবস।

বিয়ের চার বছরের মাথায় খুন হয় আয়না।...আয়নার মৃত্যুর মাসতিনেক আগে পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হয়েছিলেন তিনি। ফরিদপুরের মধুখালি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যেতে হবে। কুমিল্লা থেকে ফরিদপুরে যেতে চাননি রফিক। যেতে চাননি আয়নার কথা ভেবেই। আয়না একা একা থাকবে। দেখাশোনারতো কেউ নেই। কিন্তু আয়নাই জোর করল যেতে। বলল, হেড মাস্টার হিসেবে প্রমোশন পাওয়াতো সোজা কথা না। প্রমোশনটা না নিলে সারাজীবনই এই গ্রামে পড়ে থাকতে হবে। যাও না, বছরখানেক থেকে না হয় আশপাশে বদলির চেষ্টা করলে।

প্রধান শিক্ষকের পদে চাইলেই যখন তখন বদলি হওয়া যায় না। লোক থাকতে হয়।...একটা বাচ্চাকাচ্চাও নাই। একা বাড়িতে থাকবে তুমি?

তাই বলে যাবে না। হেড মাস্টারের পোস্টের মর্যাদাই আলাদা। আমার জন্য ভেব না। বাড়িঘরে লোকজনতো আছে। আর সারাজীবনই ফরিদপুরেই থাকেবে নাকি! ...সালাম ভাইতো আসে প্রায়ই। তাকে দিয়ে বাজার সদাই যা লাগে করিয়ে নিব।... আয়নার পীড়াপীড়িতে শেষে গেলেন।

খাওয়া শেষে হাঁটতে বের হলেন রফিক মাস্টার। তার বাড়ি থেকে নামলেই ফসলের খেত। খেতে এখন তেমন একটা ফসল নেই। রোদের তাপে পুড়ে গেছে সব। আল ধরে হাঁটেন রফিক মাস্টার। চরাচর কেমন নিঝুম। কেন জানি ইদানীং নিস্তব্ধতাই ভালো লাগে তার। জোছনা আরও জোরাল হয়েছে যেন! এতদূর থেকেও কবরস্থানটা স্পষ্ট দেখা যায়। কড়ই গাছের ডাল হাওয়ায় দুলছে। রফিকের মনে হয়, তাকে বুঝি হাতছানি দিয়ে ডাকছে ডালটা।...ফরিদপুরে গিয়ে মন একদম বসছিল না। মাস তিনেক যেতেই তিন দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি এলেন। বাড়ি যে আসছেন জানালেন না আয়নাকে। আসলে চমকে দিতে চান। কিন্তু কে জানত, চমকটা তার জন্যই ছিল!

বেশ রাত হয়ে গিয়েছিল। পৌষ মাস। প্রচন্ড শীত। বাস থেকে নেমে রিকশা বা ভ্যান কিছু পাওয়া গেল না। হাঁটা ছাড়া উপায় নেই। সেদিনও ছিল জ্যোৎ¯œা রাত। নদীর পাড় ধরে হাঁটছিলেন। পায়ের তলে কাদা শুকিয়ে ধুলা। গায়ে বেশ ভারী সোয়েটার, পায়ে মোজা পামসু, দু’হাতেও মোজা। তবুও শীতে কাঁপছিলেন ঠকঠক।

পুরো গ্রাম নিস্তব্ধ। গ্রাম ছাড়িয়ে বাড়ির উঠানে যখন পা দিলেন তখন মাঝরাত পার হয়ে গেছে। দরজা জানালা বন্ধ করে ঘুমাচ্ছিল আয়না। উঠানজুড়ে থই থই চাঁদের আলো। ঝিঁঝিঁ ডাকছে তুমুল স্বরে। শব্দ না করে পেছনদিকে চলে গেলেন রফিক। পেছনের একটা জানালার পাল্লা বাইরে থেকে খুলে ভিতরে ঢোকা যায়। রফিক জানালা খুলে একটু অপেক্ষা করলেন। ভিতরের অন্ধকার ফিকে হতে তাকালেন। আয়না সালামকে জড়িয়ে শুয়ে আছে! চোখের সামনে পুরো পৃথিবী দুলে উঠল তার।...জানালার পাল্লা লাগিয়ে উঠানে এসে দাঁড়িয়ে রইলেন রফিক। বোধহয় অসাবধানেই শব্দ করেছিলেন। দরজা খুলে আয়না বেরিয়ে এসেছিল। চাঁদের আলোয় কেমন মোহনীয় লাগছিল আয়নাকে!

রফিক মাস্টার আয়নার কবরের কাছে এসে বসেন। কবরের ওপর বেলি ফুলের গাছ লাগিয়েছিলেন। ফুল ফুটেছে শাদা শাদা। তীব্র গন্ধ ভাসছে বাতাসে। আহা আয়না বড় ভালোবাসত বেলি ফুলের গন্ধ।...কবরের ওপর হাত রাখেন রফিক। আর বিড়বিড় করেন।...আমি যে তোমাকে কত ভালোবাসতাম আয়না! টের পেতে না তুমি। এখনো বাসি। কবরে শুয়ে টের পাও না? কেউ ভালোবাসলে মানুষ বুঝতে পারে না বুঝি!

মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। গা কাঁপছে। জ্বরটা বোধহয় আসবেই। রাতজাগা কী একটা পাখি ডাকছে করুণ স্বরে। ডাকছে না যেন কাঁদছে। চার ধারে ঝিঁঝিঁ ডাকছে।...সেদিনও বাড়ির চারপাশে ঝিঁঝিঁ ডাকছিল।...শেষ রাতে হেঁটে হেঁটে ফিরে গিয়েছিলেন রফিক মাস্টার। এখন ভাবলে অবাক হন, যাওয়ার সময় শীতটা যেন টেরই পাননি। নাকি মাথা ঠিক ছিল না বলে টের পাননি শীত? হবে হয়তো।...ফজরের আজান হলে বাসে ওঠে পড়েছিলেন। সকাল বেলাই পৌঁছলেন গাবতলী।...সেখান থেকে বাসে ফরিদপুর। যথারীতি সকালে স্কুলে গেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নির্মল বাবু অবাক হয়ে বলেছিলেন, স্যার আপনি না ছুটি নিয়েছিলেন! যাননি বাড়ি।

যাব বলেই ঠিক করেছিলাম। সকালে জ্বর এল।...দেখি, জ্বরটা সেরে গেলে দু’দিন পর না হয় যাব।

জ্বর নিয়ে আবার স্কুলে আসলেন কেন স্যার। কাউকে দিয়ে খবর পাঠালেই পারতেন।

না, ভাবলাম...

স্যার, আপনি বাড়ি যান। আপনার শরীর বোধহয় বেশি খারাপ। আপনাকে কেমন যেন দেখাচ্ছে।

দিন তিনেক একরকম অচেতন হয়েই বিছানায় পড়েছিলেন রফিক মাস্টার। জ্বর কমলে ছুটে এসেছিলেন বাড়ি। কিন্তু আর দেখতে পাননি আয়নাকে। লাশ কি আর চার দিন ধরে কবর না দিয়ে রাখা যায়! তা গ্রামবাসীকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। তারা ঠিকই রফিক মাস্টারকে টেলিগ্রাম করেছিল। টেলিগ্রাম না পৌঁছলে তারা কী করবে!...এখন সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন। চাইলেই যেখানে ইচ্ছা যোগাযোগ করা যায়। তখন গ্রামের মানুষ মোবাইল ফোন চোখেই দেখেনি।...সকালে সবাই দেখেছে, উঠানে আয়নার মৃতদেহ। মাথাটা ফাঁক হয়ে আছে। মাথার কাছে মাটিতে জমাট বাঁধা রক্ত। কাছেই পড়েছিল শাবলটা।...ঘটনার পর থেকে সালাম নিরুদ্দেশ। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আয়নাকে কেন খুন করল সালাম, কেউ বুঝতে পারেনি। 

বেলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ হাওয়ায়। আহা আয়না বড় ভালোবাসত বেলি ফুল। কবর থেকে কি আয়না গন্ধ পায়! মৃতরাতো পৃথিবীর কোনো কিছু টের পায় না। টের পেলে আয়না ঠিকই বুঝত, রফিক ওকে এখনো কতটা ভালাবাসেন। চাঁদের আলো মরে এসেছে। রাত বোধহয় শেষ হয়ে এল। মাথার ভিতরে কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা। ঝিঁঝিঁর ডাক থামে ক্ষণিকের জন্য। রফিক ওঠে দাঁড়ান। ফুলের গন্ধ, চাঁদের আলো, ঝিঁঝিঁর ডাক- সব কেমন মিথ্যা মনে হয় তার কাছে।

আয়না নেই। আবার যেন আছেও তার মাথার ভিতরে! ঐতো আয়না, হাঁটছে খেতের আল ধরে। পরনে নীল শাড়ি। রফিক এগিয়ে যান। ধরতে পারেন না আয়নাকে। আয়না যেন হাওয়ায় ভেসে উড়ে উড়ে চলছে।...ভালোবাসায় বড় কষ্ট আয়না। বড় কষ্ট! তুমি কোনোদিন জানবে না কেমন সে কষ্ট। কোনোদিন ভালোবাসনিতো!

সবাই মনে করে সালামই মেরেছে আয়নাকে। কেউ জানে না, আয়নাকে নিজ হাতে শাবল দিয়ে খুন করেছেন রফিক মাস্টার।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর