শুক্রবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

একটি কবিতা লেখা বা ঘুমিয়ে পড়ার গল্প

শাহ্নাজ মুন্নী

একটি কবিতা লেখা বা ঘুমিয়ে পড়ার গল্প

‘মানুষের পচা গন্ধে আর ভালো লাগে না

প্রস্রাব পাইখানার চেয়েও বেশি...’

 

খুবই ত্যক্ত-বিরক্ত, বিধ্বস্ত-বিপর্যস্ত, আহত-দুঃখিত, অপমানিত, ভারাক্রান্ত, অসহায়-বিষণœ মন নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে কাজী নজরুল নিউজ প্রিন্টের মলিন খাতায় কালি প্রায় ফুরিয়ে যাওয়া বলপেন ঘঁষে ঘঁষে অনেকক্ষণ লাগিয়ে লাইন দুটো লিখলেন। তিনি চোখ মুখ কুঁচকে রেখেছেন, যেন সত্যিই তার নাকে এসে ধাক্কা দিচ্ছে মানুষ পচা দুর্গন্ধ। এই দুর্গন্ধ জীবিত ও দূষিত মানুষের, মরা মানুষের নয়। দূরে জহির মেম্বারের বাড়ির ওদিক থেকে তখন ভেসে আসছে মাইকে হিন্দি গানের উত্তাল সুর আর তুমুল হৈ চৈ। বিয়ের অনুষ্ঠানের হৈ হল্লা স্বভাবত যেমন হয় এটি তেমনই হৈ-হুল্লোড়। বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্রভাবশালী সদস্য জহির মেম্বারের বাড়িতে আজ বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়, বিয়ে দুটো ছাগলের। খুব ঘটা করে একটা কালো পাঁঠার সঙ্গে একটা সাদা ছাগীর বিয়ে দিচ্ছে জহির মেম্বার। লাল নীল কাগজ কেটে বাড়ি সাজিয়েছে। দুই ছাগলের গলায় সোনালি রুপালি জরির মালা পরানো হয়েছে। অবলা প্রাণী দুটি এসবের কিছু বুঝতে না পেরে তার স্বরে ব্যাঁ ব্যাঁ চিৎকারে আকাশ-বাতাস বিদীর্ণ করে তুলছে। সারা গ্রামের লোক তামাশা দেখতে জড়ো হয়েছে জহির মেম্বারের বাড়িতে, অবশ্য তারা সবাই এই বিশেষ বিয়েতে খাওয়ার দাওয়াতও পেয়েছে। দুপুর বেলা এক পেট মাংস-ভাত খাওয়ার দাওয়াত। যে কারণে গ্রামের অনেকেই সকাল থেকে কিছু না খেয়ে উপোস দিয়ে আছে। বিয়ে উপলক্ষে ২৫ হাজার ৩৮৪ টাকা দামের একটা বড়সড়ো গরু জবাই দিয়েছে জহির মেম্বার। মাটির চুলা জ¦ালিয়ে বড় হাঁড়িতে সেই গরুর মাংসের সঙ্গে গোল আলু দিয়ে লম্বা ঝোল তৈরি করা হচ্ছে। গ্রামের রুক্ষ ধূলিময় বাতাস মাংসের মসলার মুখরোচক সুগন্ধে মৌ মৌ করছে। 

দাওয়াত অবশ্য কাজী নজরুলকেও করা হয়েছে। সেই দাওয়াতের কথা শুনে নজরুলের বিধবা মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলছেন, ‘এইটা তো দাওয়াত না, দাওয়াতের নামে জহির মেম্বার তোর মুখে, তোর বংশের মুখে, চৌদ্দগুষ্টির মুখে জুতার বাড়ি দিয়া গেছে।’

তার এটা বলার কারণ আছে। গত শুক্রবার কাজী নজরুলের একমাত্র ছোট বোন কাজী বুলবুলের বিয়ে হয়েছে এবং সেই বিয়েতে জহির মেম্বার আর তার সাঙ্গোপাঙ্গরা দাওয়াত পায় নাই। তারা দাওয়াত না পাওয়ার বিবিধ কারণ আছে, প্রথম এবং প্রধান কারণ, খুব বড় অনুষ্ঠান করে সারা গ্রামের লোককে দাওয়াত করে খাওয়ানোর আর্থিক সঙ্গতি কাজী নজরুলের নেই, দ্বিতীয়ত, জহির মেম্বার ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের কাজ-কর্মে নজরুল খুবই বিরক্ত, লোকের উপকার তো দূরের কথা কিভাবে লুটপাট করে গরিব মানুষের রক্ত চুষে খাওয়া যাবে, কিভাবে তাদের এলাকা ছাড়া করা যাবে জহির মেম্বারের লোকজন সবসময় সেই মতলবে থাকে। 

তৃতীয়ত, এই গ্রামে কাজীদের খুবই উচ্চ বংশের বলে বিবেচনা করা হয়, এই জহির মেম্বারের বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্টি একসময় কাজী বাড়িতে কামলা খেটেছে, সেই ধারাবাহিকতাকে টেনে না নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার হয়ে সে এখন জাতে উঠলেও কাজী বাড়িতে দাওয়াত পাওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন করতে পারে নাই। তার অনেক টাকা হয়েছে, ক্ষমতাও হয়েছে কিন্তু সেই অর্থবিত্ত ও ক্ষমতাকে কাজী নজরুল যেন পাত্তাই দিতে চায় না। মূলত এটাই ধূর্ত জহির মেম্বারের খুব গায়ে লাগছে। সে তার পোষা লোক পাঠিয়ে বুলবুলের বিয়ের দাওয়াতে খরচের জন্য গোপনে টাকা দেওয়ারও প্রস্তাব পাঠিয়েছিল, কিন্তু কাজী নজরুল সেই টাকা নিতে রাজি হয়নি। বরং এই প্রস্তাবে তার মর্যাদা বোধে আঘাত লেগেছে।   

কাজী নজরুল এই গ্রামের প্রতাপশালী কাজী বংশের সর্বশেষ বাতি, যদিও এই বাতি জন্মের পর থেকে তার খান্দানের নাম-যশ-প্রতিপত্তি আর খ্যাতির গল্প শুধু কানেই শুনেছে, বসবাসের জন্য একটি জীর্ণ মলিন প্রায় ভেঙেপড়া ইটের দালান ছাড়া কথিত অর্থ, প্রতাপ-প্রতিপত্তি কোনোটিই সে নিজের চোখে দেখেনি। তার সুন্দর চেহারার নরম-সরম বাবা কাজী আজমল অর্থনৈতিকভাবে সফল না হলেও কাব্য ও সংগীত পিপাসু ছিলেন পুত্র ভবিষ্যতে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের মতো কবিতা ও গান রচনা করে বিপুল খ্যাতি অর্জন করবে এই বিশ্বাসে প্রিয় কবির নামে.

এই স্বাপ্নিক ভদ্রলোক তার একমাত্র পুত্রের নাম রেখেছিলেন কাজী নজরুল। ছেলের সংগীত প্রতিভা না থাকলেও কিঞ্চিত কাব্য প্রতিভা ঠিকই দিনে দিনে বিকশিত হয়ে উঠেছিল যদিও আর্থিক টানাপড়েন আর প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তা পত্র পুষ্পে পল্লবিত হয়ে উঠতে পারেনি বলে কাজী নজরুলের নিজের ধারণা। সে অল্প বিস্তর হোমিওপ্যাথি শিখে বসতবাড়ির বৈঠকখানায় যতসামান্য প্র্যাকটিসের পাশাপাশি যতটুকু সম্ভব নীরবে নিভৃতে কাব্যচর্চা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। যখনই মনে কোনো বিশেষ ভাবের উদয় হয় তখনই তিনি তা খাতায় লিখে রাখেন। না, বংশ নিয়ে অহংকার করে না কাজী নজরুল। বরং তার বিধবা মাকে সে সময় পেলে কবিতার লাইন দিয়ে বোঝায়, ‘জন্ম হোক যথা তথা, কর্ম হোক ভালো। মানুষকে তার কর্ম দিয়া বিবেচনা করবেন মা, জন্ম দিয়া না।’

 

কাজী নজরুল সব সময় নিজের ভাবের জগতেই ডুবে থাকে, গ্রামের কারও সাতে পাঁচে থাকে না আর এই না থাকাটাকেই জহির মেম্বার অনুবাদ করেছে অবজ্ঞা হিসেবে, মেম্বারের ধারণা কাজীবাড়ির শেষ কাজী বংশের ফাঁপা গরিমা আর অন্যায্য অহংকারে কাউকেই মানুষ মনে করে না।

 

মূলত কাজী নজরুল সব সময় নিজের ভাবের জগতেই ডুবে থাকে, গ্রামের কারও সাতে পাঁচে থাকে না আর এই না থাকাটাকেই জহির মেম্বার অনুবাদ করেছে অবজ্ঞা হিসেবে, মেম্বারের ধারণা কাজীবাড়ির শেষ কাজী বংশের ফাঁপা গরিমা আর অন্যায্য অহংকারে কাউকেই মানুষ মনে করে না। সমাজ মানে না, জহির মেম্বারকে ইজ্জত সম্মান দেয় না, সালাম আদাব জানায় না বরং দৃষ্টিগ্রাহ্যভাবে উপেক্ষা করে যেন প্রকৃতপক্ষে বুঝিয়ে দিতে চায়, নিজের বংশের গৌরবের কাছে বাকি সবাই অতি তুচ্ছ, কীট। চেয়ারম্যান তাই ছাগলের বিয়ের আয়োজন করে কাজীর বেটার দম্ভ চুর্ণ করার পরিকল্পনা করেছে।  

অথচ আপনারা তো জানেন, বেচারা কাজী নজরুল কতখানি নিরীহ, অসহায় আর গোবেচারা ভদ্রলোক। সঙ্গোপনে কাব্য চর্চা আর মানুষের মধ্যকার ক্ষুদ্রতা, হীনতা ও দীনতাকে নীরবে ঘৃণা কিংবা করুণা করা ছাড়া অন্য কিছু তার সামর্থ্যে কুলাবেই না। তার মা মাঝে মাঝে অভাবের সংসারে নিত্য টানাটানির কথা বলে ছেলেকে অর্থ উপার্জনের জন্য তাগাদা করেন। কাজী নজরুল উত্তর দেন, ‘অর্থ অনেকের হয় মা, কিন্তু মানসিক প্রাচুর্য সবার থাকে না। আমি মানসিক সম্পদ অর্জনের চেষ্টা করছি। অর্থের অভাব দূর করা যায় কিন্তু মানসিক দৈন্য দূর করা যায় না।’

এ মুহূর্তে সদ্য লিখিত কবিতার দুটি লাইন কাজী নজরুল মন দিয়ে পড়ছে, শব্দ করে জোরে জোরে পড়ছে, কারণ দুঃখ ও অপমানে কণ্টকায়িত এই জীবনে বেঁচে থাকার জন্য তাকে এখন এই বৈরি পারিপাশির্^কতা ভুলে থাকতে হবে, ডুব দিতে হবে সৃজনশীলতার অচীন গহ্বরে আর সেজন্য তাকে সমস্ত মনোযোগ একসঙ্গে করে এই কবিতার পরবর্তী লাইনগুলোও লিখতে হবে, লেখার জন্য ভাবতে হবে, মনের গহীনে ডুবে যেতে হবে। ‘...প্রস্রাব পাইখানার চেয়েও বেশি ...’ কাজী নজরুল তার মন বাস্তবতা থেকে সরিয়ে কবিতায় নিয়ে আসে, তারপর কালি প্রায় ফুরিয়ে যাওয়া বলপেন ঘষে, খাতায় আরও দুটি লাইন লিখে ফেলে, ফলে কবিতাটি দাঁড়ায় এই রকম,

‘মানুষের পচা গন্ধে আর ভালো লাগে না

প্রস্রাব পাইখানার চেয়েও বেশি

একবার মনে হয়, তেজস্বী সিংহের মতো গর্জে উঠি

আবার মনে হয় ...’

কাজী নজরুল কোনো দিনও বনের রাজা সিংহকে বাস্তবে দেখে নাই, এমনকি ঢাকার চিড়িয়াখানাতে গিয়েও সে সিংহের দেখা পায় নাই কেননা সিংহটি সে যাওয়ার তিন দিন আগে পেটের অসুখে ভুগে মারা গিয়েছিল, তথাপি সিংহ সম্বন্ধে কাজী নজরুল অতিশয় উচ্চ ধারণা পোষণ করে। সিংহকে তার শুধু বলবানই মনে হয় না, মনে হয় সে অত্যন্ত ন্যায় পরায়ণ, পরাক্রমশালী, ক্যারিশমেটিক। সিংহের গর্জন সম্বন্ধেও বাস্তব কোনো অভিজ্ঞতা কাজী নজরুলের নেই, অবশ্য কবিতার সমস্ত বিষয়ে যে কবির বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকতেই হবে এমন কথা কোথায়ও কোনো মহাপুরুষ বলে দেয় নেই। কাজী নজরুল দিব্যি তার কল্পনার চক্ষুতে দেখতে পায়, জহির মেম্বারের বাড়িতে তার ছাগলের তথাকথিত বিয়ের অনুষ্ঠানে হঠাৎ কেশর দুলিয়ে এক অসম্ভব সুন্দর রূপবান তেজোদীপ্ত সিংহ তার রাজকীয় ব্যক্তিত্বের আলোকচ্ছটা নিয়ে ধীর গম্ভীর পদক্ষেপে প্রবেশ করল। সিংহের দৃষ্টি জ¦লন্ত অগ্নির মতো স্থির, জমাট বরফের মতো শীতল... বিয়ে বাড়ির নির্বোধ বাকোয়াজ হঠাৎ পশুরাজের সেই ব্যক্তিত্বের সামনে যেন শুকনো পাতার মতো ক্রমশ নেতিয়ে পড়ে। এতক্ষণের অবিরাম হট্টগোলের বদলে চারপাশে সহসাই নেমে আসে সুনসান নীরবতা, সবাই যেন নিজ নিজ জায়গায় ভয়ে আতঙ্কে পাথরের মূর্তির মতো থমকে গেছে। আর তখনই তিনি সিংহরাজ, রক্ত হিম করা শব্দে ভয়ঙ্কর গর্জন করে ওঠেন, তার সেই শক্তিময় গর্জনে কেঁপে উঠে চারদিক, যেন অকস্মাৎ বজ্রপাত হয় জহির মেম্বারের বাড়ির বিশৃঙ্খল উঠানে, বেচারা ছাগল দুটি ভয়ে দ্বিগি¦দিক শূন্য হয়ে চেঁচাতে থাকে আর চোখের নিমিষে খালি হয়ে যাওয়া শূন্য উঠানটা নিতান্ত অবজ্ঞার সঙ্গে ঘাড় ঘুরিয়ে শান্ত দৃষ্টিতে এক পলক দেখে নেন সিংহ মহাশয়। তারপর উদাসী ভঙ্গিতে ঘাড় উঁচু করে কি ভেবে কে জানে আকাশের দিকে তাকান একটুখানি, তার দীঘল বাদামি কেশরে বাতাস এসে ঢেউ দিয়ে যায় ... বনের রাজা তখন শরীরটা সামান্য বাঁকিয়ে, যেন কিছুই হয়নি কিংবা যেন লোকালয়ে তার নির্ধারিত কাজ শেষ হয়ে গেছে, এমন একটা অনিশ্চিত ভাব নিয়ে যেখান থেকে এসেছিল সেই গভীর জঙ্গলের পথে রওনা দিতে চায়...

এরই মধ্যে কাপুরুষ জহির মেম্বার কোত্থেকে যেন একটা বড়সড়ো দোনলা বন্দুক নিয়ে আসে আর দেয়ালের আড়াল থেকে সেটা তাক করে মহান পশুরাজের দিকে ...পর পর কয়েকটা উত্তপ্ত বুলেট বাতাসে শিস কেটে বিদ্যুৎ চমকের মতো উড়ে যায় যেন কয়েকটি অগ্নিময় তীক্ষè শলাকা এসে বিঁধে মহামান্য সিংহের গায় ... কাজী নজরুল আর ভাবতে পারে না, সে কাগজে হুমড়ি খেয়ে পড়ে ইতোমধ্যে লেখা হয়ে যাওয়া লাইনগুলো দ্রুত আওড়ায়, ‘একবার মনে হয় তেজস্বী সিংহের মতো গর্জে উঠি, আবার মনে হয় ...’ আর কি মনে হতে পারে? কাজী নজরুলের অস্থির লাগে, বাইরের ধূম ধারাক্কা কোলাহল উত্তরোত্তর বাড়ছে, বেয়াদব মাইকটাকে ওরা সম্ভবত ইচ্ছা করেই কাজী নজরুলের বাড়ির দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে, কেউ একজন বেসুরো গলায় তাতে ব্যঙ্গ করে গাইছে, ‘ছাগলা ছাগলির বিয়ারে, বিয়ার বাদ্যআলা বাজেরে,’

বোঝাই যাচ্ছে অপমান-অপদস্তের চূড়ান্ত না করে ছাড়বে না ওরা, যতভাবে পারে, যতক্ষণ পারে খোঁচাবে, রক্তাক্ত করবে, মনের ঝাল মেটাবে। কাজী নজরুল খাতার ওপর মুখ গুজে বেশ খানিকটা ভেবে চিন্তে আরও একটা লাইন লিখে ফেলে। বাহ্ বেশ, এতক্ষণে মনে হয় কবিতাটি পূর্ণাঙ্গ হয়েছে। আশপাশের হৈ-হল্লা উপেক্ষা করে খুবই আবেগভরে উচ্চস্বরে সদ্য লেখা সম্পূর্ণ কবিতাটি পাঠ করে কাজী নজরুল।

‘‘মানুষের পচা গন্ধে আর ভালো লাগে না

 প্রস্রাব পাইখানার চেয়েও বেশি

একবার মনে হয় তেজস্বী সিংহের মতো গর্জে উঠি

আবার মনে হয়, কি হবে তাতে?

দুর্বৃত্তের হাতে যে মত্ত উল্লাসে নাচে অস্ত্র

তার চাইতে ভালো

ঘরের বাতিটা নিভায়ে কানে তুলা গুজে

নিজের ভেতর নিজে চুপচাপ ঘুমায়ে থাকি।’

কাজী নজরুলের এতক্ষণে নিজেকে বেশ নির্ভার লাগে। একটা কবিতা লিখে শেষ করতে পারার অপরিসীম আনন্দ, তৃপ্তি ও ক্লান্তিতে একটা চাদর মুড়ি দিয়ে চুপচাপ নিজের শক্ত বিছানায় শুয়ে পড়ে সে। পাকস্থলীতে ডায়াজিপাম ধীরে ধীরে গলতে থাকে, মিশে যেতে থাকে রক্তে, স্নায়ুতে, চেতনায়... । 

ফলে কবি কাজী নজরুলের কানে বাইরের কোনো বিদ্রƒপ, কোনো কোলাহল আর পৌঁছায় না। কদর্য পৃথিবীর ক্লেদ, হিংসা, বিদ্বেষ, বিষাদ, আবর্জনা-কিছুই আর তাকে স্পর্শ করে না। তিনি সম্ভবত নিজের ভেতর ঘুমিয়ে যাচ্ছেন।*

সর্বশেষ খবর