শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মস্মরণ

ছিন্নপত্রাবলীতে নদীবন্দনা

তুহিন ওয়াদুদ

ছিন্নপত্রাবলীতে নদীবন্দনা

রবীন্দ্রশিল্পজগৎ সুদূর বিস্তৃত। এই বিস্তৃতি নির্মাণের কালে রয়েছে পূর্ববঙ্গে তার যাপিত জীবনের অমোঘ প্রভাব। পূর্ববঙ্গে আসার পূর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবন অনেকটাই ছিল তার বাসাকেন্দ্রিক। ডেঙ্গু জ্বরের প্রবল সংক্রমণ শুরু হলে তারা কলকাতায় গঙ্গার ধারে পেনেটির বাগানবাড়িতে কিছুদিনের জন্য ছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে তখন কিছুটা বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় ঘটে। পূর্ববঙ্গে জমিদারি দেখতে আসার আগেও তিনি কয়েকবার বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন বটে, সেগুলো তার জীবনব্যাপী প্রভাবক হয়ে উঠতে পারেনি। পূর্ববঙ্গের সঞ্চিত অভিজ্ঞতার মধ্যে নদী অনেকখানি স্থানজুড়ে আছে। পূর্ববঙ্গে তার জীবন এবং নদী ভিন্ন সুরে গাঁথা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে নদীর প্রভাব অন্তহীন। নিজের লেখায় বারবার করে তিনি নদীর কথা বলেছেন। নদীপারের জীবন বিচিত্রভাবে উঠে এসেছে তার লেখনীতে। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জমিদারি দেখার জন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, রাজশাহীর পতিসর এবং সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে আসেন। তিনি কয়েক বছর এখানে ছিলেন। তৎকালীন পূর্ববঙ্গে তার নিত্যদিনের সঙ্গে নদী জড়িয়ে ছিল। শিলাইদহ, পতিসর, শাহাজাদপুর তিনটি স্থানের আবাস ছিল নদীর কাছেই। এসব স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল নদীভিত্তিক। ছিন্নপত্রাবলীতে লিখিত তার দিনলিপির যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে অবাক হতে হয় নদীর প্রতি তার গভীর সম্পর্ক দেখে। ছিন্নপত্রাবলীতে তার প্রায় সব লেখায় তাই নদী প্রসঙ্গ এসেছে অনিবার্যভাবে।

নদীকে যে কতভাবে দেখছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তা ছিন্নপত্রাবলীর লেখাগুলো একেকটি প্রমাণপত্র। নদী, নদীকেন্দ্রিক জীবন, নদীকেন্দ্রিক সংস্কৃতি তার লেখায় দৃশ্যমান হয়ে আছে। ভোরের নদী, দুপুরের নদী, বিকেলের নদী, সন্ধ্যার নদী, অন্ধকার রাতের নদী, জোছনার নদী সবটাই তিনি দেখেছেন নিখুঁত শিল্পীর চোখে। ষড়ঋতুতে নদী কত বিচিত্র হয়ে উঠে তার ঋতুভেদে বর্ণনা দেওয়া আছে। নদীর রূপ বারো মাস অভিন্ন থাকে না। ঋতুভেদে আসে পরিবর্তন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেহেতু নদীর প্রতিদিনের রূপ দেখেছেন তাই সেসব তুলেও এনেছেন। একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো- তিনি যে নদীর রূপ বর্ণনা করার জন্য ছিন্নপত্রাবলীতে পূর্ববঙ্গের স্মৃতিমালা লিপিবদ্ধ করেছেন তা নয়। তারপরও সেই লেখার প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে নদী। নিজের উপলব্ধির সঙ্গেই মিশেছিল নদীবোধ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে পূর্ববঙ্গের প্রভাব তীব্রতর। তার লেখায় সেই প্রভাব স্পষ্ট। তার লেখায় পূর্ববঙ্গের জীবন বারংবার উঠে এসেছে। তার কথাশিল্পে, গানে, কবিতায় রূপায়িত হয়েছে পূর্ববঙ্গের জীবন। তার প্রত্যক্ষ করা জীবন মানেই নদীবিধৌত জনপদ। ফলে সেসব লেখায় কখনো নদী প্রত্যক্ষভাবে কখনো দৃশ্যের আড়ালে থেকে উঠে এসেছে নদী।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নৌপথে শিলাইদহ, শাহাজাদপুর, পতিসর যাওয়া-আসা করেছেন। পথে পথে অনেক দিন নৌকা নোঙর করে রাত্রযাপন করতে হয়েছে। কখনো কখনো দিনের পর দিন নৌকায় থেকেছেন। নৌকা থেকে দেখেছেন নদীপারের মানুষের জীবন। সেই জীবনের বিশদ বর্ণনা আছে ছিন্নপত্রে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে নদী কতটা প্রভাব ফেলেছিল যে তিনি শেষ জীবনে জন্মদিনে কাব্যগ্রন্থের ২৮ সংখ্যক কবিতায় লিখেছেন- ‘নদীর পালিত এ জীবন আমার।’

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের সঙ্গে নদী একাকার হয়ে ছিল। একদিন তিনি ইছামতী নদী হয়ে পদ্মা দিয়ে নৌপথে ফিরছিলেন। পথে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল। আকাশের অবস্থাও ভালো ছিল না। এমন দিনের বর্ণনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যা বলেছেন তাতে রবীন্দ্রনাথের নদীর প্রতি গভীর টান উপলব্ধি করা যায়। তিনি লিখেছেন- “মাঝি জিজ্ঞাসা করলে বোট চরের কাচারীঘাটে রাখব কি? আমি বল্লুম না, পদ্মা পেরিয়ে চল্।- মাঝি পাড়ি দিলে, -বাতাস বেগে বইতে লাগ্ল, পদ্মা নৃত্য করতে লাগ্ল, পাল ফুলে উঠ্ল, দিনের আলো মিলিয়ে এল, আকাশের ধারের মেঘগুলি, ক্রমে আকাশের মাঝখানে ঘনঘটা করে জমে গেল, চারদিকে পদ্মার উদ্দামচঞ্চল জল করতালি দিচ্চে- সম্মুখে তীরে নীল মেঘস্তূপের নীচে পদ্মাতটের নীল বনরেখা দেখা যাচ্ছে- নদীর মাঝখানে আমাদের বোট ছাড়া আর একটিও নৌকো নেই- তীরের কাছে দুই একটি জেলে ডিঙি ছোট ছোট পাল উড়িয়ে গৃহমুখে চলেছে,- আমি যেন প্রকৃতির রাজার মত বসে আছি আর আমাকে তার দুরন্ত ফেনিলমুখ রাজ-অশ^ সনৃত্যগতিতে বহন করে নিয়ে চলেছে।”

প্রচ- প্রতিকূলতাতেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নদীযাত্রা যেন উপভোগই করতেন। নয়তো কোনো উৎকণ্ঠা ছাড়াই নিজেকে এমন মুহূর্তে প্রকৃতির রাজা ভাবা অসম্ভব। প্রকৃতির কতটা গভীরে পৌঁছলে নিজেকে প্রকৃতির ওপর নিজের আধিপত্য বিস্তারের কথা চিন্তা করা যায়। প্রকৃতি যেন তার অধীন হয়ে গেছে। আর তার এই ভাবনার মূলে প্রকৃতির অন্যতম অনুষঙ্গ নদী। ছিন্নপত্রাবলী সূত্রেই জানা যায়, নদী তাকে কেন এত টানে। নদী যে বয়ে চলে এই বয়ে চলার সৌন্দর্যই তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনো কখনো নদীকে চরিত্র হিসেবে কল্পনা করেছেন। নদীর কথা এমনভাবে লিখেছেন যে নদীও একটি জীবন্ত সত্তা। নদীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার নিরিখে সেই নদীর ভাবকে তিনি ভাষায় রূপ দিয়েছেন। একটি ছোট্ট নদীর কথা তিনি লিখেছেন এভাবে- “একটা ছোট্ট নদী আছে বটে কিন্তু তাতে কানাকড়ির স্রোত নেই সে যেন আপন শৈবালদামের মধ্যে জড়ীভূত হয়ে অঙ্গবিস্তার করে দিয়ে পড়ে পড়ে ভাব্ছে যে যদি না চল্লেও চলে তবে আর চলবার দরকার কি?”

কখনো কখনো কল্পনায় নদী-বৃক্ষ-আকাশ-বাতাস-আলো মিলে গড়ে ওঠা পৃথিবীকেই একটি মানুষের মতো জ্ঞান করেছেন। রবীন্দ্রভাষ্যে- “এই ভরা নদীর ধারে বর্ষার জলে প্রফুল্ল নবীন পৃথিবীর উপর শরতের সোনালি আলো দেখে মনে হয় যেন আমাদের এই নবযৌবনা ধরণীসুন্দরীর সঙ্গে কোন্ এক জ্যোতির্ম্ময় দেবতার ভালবাসা চল্চে- তাই এই আলো এবং বাতাস, এই অর্দ্ধ উদাস অর্দ্ধ সুখের ভাব, গাছের পাতা এবং ধারে ক্ষেতের মধ্যে এই অবিশ্রাম স্পন্দন, জলের মধ্যে এমন অগাধ পরিপূর্ণতা, স্থলের মধ্যে এমন শ্যামশ্রী, আকালে এমন নির্মল নীলিমা।” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই বর্ণনার পরেই কলকাতার সৌন্দর্যকে তুচ্ছ বলে জ্ঞান করেছেন। নদীতীরের শরৎসৌন্দর্য কবির জীবনে নতুন রঙ লাগিয়ে দিচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে ধীরে ধীরে পূর্ববঙ্গের গভীর সৌন্দর্যে অবগাহন করেছেন, তিনি যে নগরসৌন্দর্যের পরিবর্তে নদীবিধৌত গ্রামীণ সৌন্দর্যের প্রেমে পড়েছেন তারই প্রকাশ এখানে লক্ষ করা যায়।

বর্ষায় গড়াই নদীকে কবির কাছে মনে হয় ‘লেজ-দোলানো কেশর-ফোলানো বুনো ঘোড়া’। পদ্মাকে মনে হয়- “সে মেয়ে বোধ হয় একেবারে উন্মাদ হয়ে ক্ষেপে নেচে বেরিয়ে চলেছে, সে আর কিছুর মধ্যেই থাকতে চায় না। তাকে মনে করলে আমার কালির মূর্ত্তি মনে হয়-নৃত্য করচে, ভাঙচে, এবং চুল এলিয়ে দিয়ে ছুটে চলেছে।” নদীকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিবিড়ভাবে পাঠ করেছেন। তার বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে মিলিয়ে বিভিন্ন চরিত্রকে এক করে দেখেছেন।

পদ্মাকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিশেষভাবে ভালোবাসতেন। পদ্মার বুকে ভাসতে ভাসতে, পদ্মাকে অবলম্বন করে প্রকৃতির রূপ আস্বাদন করতে করতেই পদ্মার প্রতি গভীরভাব অনুরক্ত ছিলেন তিনি। পদ্মাকে নিয়ে তার ভয় হতো পদ্মা তার কাছে পুরনো হয়ে ওঠে কি-না। পদ্মাকে কবি সবসময় নতুন করে পেতে চেয়েছেন। পদ্মার ভয়াল থাবায় তার ভীতি নয়, পদ্মা নতুনত্ব হারায় কিনা সেই ভীতি। ছিন্নপত্রাবলীতেই পাই-“প্রতিবার এই পদ্মার উপর আস্বার আগে ভয় হয় আমার পদ্মা বোধ হয় পুরোণো হয়ে গেছে- কিন্তু যখনি বোট ভাসিয়ে দিই চারিদিকে জল কুলকুল করে ওঠে- চারিদিকে একটা স্পন্দন কল্পন আলোক আকাশ মৃদু কলধ্বনি, একটা সুকোমল নীল বিস্তার, একটি সুনবীন শ্যামল রেখা বর্ণ এবং নৃত্য এবং সঙ্গীত এবং সৌন্দর্য্যরে একটি নিত্য উৎসব উদ্ঘাটিত হয়ে যায় তখন আবার নতুন করে আমার হৃদয় যেন অভিভূত হয়ে যায়। এই পৃথিবীটি আমার অনেকদিনকার এবং অনেক জন্মকার ভালোবাসার লোকের মত আমার কাছে চিরকাল নতুন; আমাদের দুজনকার মধ্যে একটা গভীর এবং সুদূরব্যাপী চেনাশোনা আছে।”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নদী নিয়ে অসংখ্যা চিত্রকল্প ছিন্নপত্রাবলীতে এভাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে যে অনেকেই পড়তে পড়তে সেসব দৃশ্যও দেখে নিতে পারবেন অনায়াসে। প্রতিদিন নদীপাড়ে যেমনটি তিনি দেখেছেন তেমনটি তিনি লিখেছেন। নৌকার গতি, নদীপারের মানুষের জীবন, নদীর জলের রঙ, জলের গভীরতা, আকাশের বর্ণনা, নদীর বাঁক এমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে যে সেব যেন একেকটি ছবি। নদী চলতে কখন কেমন শব্দ হয় তার বর্ণনাও বাদ পড়েনি। এগুলোর মধ্যে নদীপাড়ে যে জীবন তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন তার বর্ণনাও বিস্তারিত। নদীর পাড়ের মানুষের কর্মব্যস্ততা, তাদের পোশাক, শরীরের গড়ন, শিশুদের অবস্থা, কিশোর-কিশোরীদের চাঞ্চল্য, নদীতে ¯œান, খেয়া পারাপার, গবাদিপশুর বিচরণ উঠে এসেছে ছিন্নপত্রে। আর এই জনজীবন মূলত নদী পাড়ের জীবন। পূর্ববঙ্গে বসবাসের পর তাই তার সাহিত্যে পূর্ববঙ্গের জীবনের আলেখ্য নির্ভর হয়ে উঠেছে। কবিতায় আমরা দেখি যে প্রকৃতি তা মূলত পূর্ববঙ্গের। তার ছোটগল্পের প্রাণ তার অভিজ্ঞতালব্ধ নদীজীবন।

নদী কখনো সর্বগ্রাসী রূপে এসেছে। সেই বর্ণনাও যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তুলে ধরেছেন তেমনি নদীকে ‘¯েœহশালিনী’ (৫২) হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। ছোট নদীর শান্ত-¯িœগ্ধ প্রবাহ, আবার বড় নদীর পাড় ভাঙার রূপও উঠে এসেছে। ছিন্নপত্রাবলী থেকে নদীবিষয়ক রবীন্দ্রকথন আলাদা করলে সেখানে নদীর যে বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ ধরা পড়ে তাতে নদীর সামগ্রিক চেহারাই দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। নদীতে নৌকায় চলতে চলতে সন্ধ্যায় যখন সব কিছু ছায়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, ক্রমে ক্রমে অন্ধকার নামতে থাকে তখন রবীন্দ্রনাথের নিজেকে রূপকথার রাজপুত্র মনে হয়। যেন সাতসমুদ্র তেরোনদী পাড়ি দিতে হবে এক অজানার উদ্দেশে। ‘অম্ভববের প্রত্যাশায় সন্ধ্যারাজ্যে’ ঘুরে বেড়ানো রাজপুত্র। তারই কেবল একটি নদী তিনি পাড়ি দিয়েছেন।

কখনো কখনো নদীর সঙ্গে মানুষের জীবনগতিকে অভিন্ন সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন। নদী যেমন বিভিন্ন দেশ দিয়ে বয়ে চলেছে মানুষও নদীর মতোই বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় বিন্যস্ত হয়ে চলেছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়- ‘মানুষও নানা শাখা-প্রশাখা নিয়ে নদীর মতই চলছে- তার এক প্রান্ত জন্মশিখরে আর এক প্রান্ত মরণসাগরে, দুদিকে দুই অন্ধকার রহস্য, মাঝখানে বিচিত্র লীলা এবং কর্ম্ম এবং কলধ্বনি- কোনকালে এর আর শেষ নেই।’

রবীন্দ্রসাহিত্য বলয়ে পূর্ববঙ্গের জীবন অবারিতভাবে বারবার এসেছে। কেন এসেছে সেই সত্য আবিষ্কার করতে হলে তারই ছিন্নপত্রে দৃষ্টি দিতে হবে। কেন তার সৃষ্টিতে বারবার করে এই জীবনের ব্যাপ্তি ঘটেছে তা তার দিনলিপিতে উঠে এসেছে। পূর্ববঙ্গে বাসকালে সারা দিন তিনি কী করেছেন সেই কথা বলতে গিয়ে তিনি কোনো দিন নদীকে বাদ রাখেননি। প্রায় প্রতিটি পত্রে নদী প্রাণ পেয়েছে। সেখানেই উপলব্ধি করা যায় এক নদীকে কত বিচিত্রভাবে তিনি আবিষ্কার করেছেন। নদীকে রূপ-সৌন্দর্যের আধার হিসেবে বুঝতে হলে রবীন্দ্র চোখেই নদীকে বুঝতে হবে। এমনকি রবীন্দ্র জীবন এবং সাহিত্যকে বস্তুনিষ্ঠভাবে বুঝতে হলেও ছিন্নপত্রাবলীর বিকল্প নেই। একবার তো তিনি নৌদুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। হতে পারত তার সলিল সমাধি। তবুও নদীর প্রতি আক্ষেপ নেই, ক্ষোভ নেই। আছে কেবল অপার ভালোবাসা। কখনো সরাসরি সেই ভালোবাসার কথা বলেছেন কখনো সেই ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে রেখে ছিন্নপত্রাবলীর পাতায় পাতায়।

সর্বশেষ খবর