শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
বই পরিচিতি

রবীন্দ্রনাথ

রবীন্দ্রনাথ

তুমিই আমার আকাশ তুমিই আমার নীড়

ড. মনিরুজ্জামান

 

ঢাকার ‘সাম্প্রতিক প্রকাশনী’ সম্প্রতি আমিনুল ইসলাম বেদুর ‘রবীন্দ্রনাথ : তুমিই আমার আকাশ তুমিই আমার নীড়’ শিরোনামে রবীন্দ্রসংগীত ও সাহিত্য সাধনার বিষয়ে একখানি চমৎকার ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বই প্রকাশ করেছে। প্রচ্ছদ এঁকেছেন মোস্তাফিজ কারিগর। বইটিতে আলোচনা অধ্যায় ১২টি ও পরিশিষ্টে দুই বিদেশি রবীন্দ্র ভক্তের কথা আছে। মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩৭৫ এবং চিত্র। মূল্য ছয়শ টাকা মাত্র। গ্রন্থটিতে রয়েছে রবীন্দ্র একাডেমির সহযোগিতারও উল্লেখ। এখানে ব্যবহৃত ভাষা যেমন সহজ, তেমনই নিখাঁজ নিপাট, রবীন্দ্র বিশ্লেষণেরই উপযোগী। তার আলোচনা ভঙ্গিটি তাই নান্দনিক। তথ্য উপস্থাপন রীতিটিও স্বচ্ছন্দ ও স্বচ্ছ হলেও নীহার রঞ্জন, বুদ্ধদেব, অরবিন্দ পোদ্দার যেমন তিনটি দৃষ্টিভঙ্গি স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন, যা ঐতিহাসিক পুনর্মূল্যায়ন, সাহিত্যের আধুনিকতা স্পর্শী প্রতিমূল্যায়ন ও মার্ক্সীয় ধারার বিশ্লেষণ ঘেঁষা, তিনি সেই অভিলাষ পোষণ করেন না।

এই আলোচনায় ঘটনাগুলো পরম্পরাগতভাবে সুবিন্যস্ত, বিষয়-সত্যগুলো যথার্থ, তবে আহরিত, অনুসন্ধেয় নয়। কোথাও

কোথাও দ্রুত উল্লেখের কারণে তা পুনর্বিচারযোগ্য কিংবা তা বিস্তৃত বিশ্লেষণ দাবি রাখে। তিনি উল্লেখ করেছেন কবি পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বা পশ্চিমবঙ্গের লোকসংগীতের ধারাগুলোর সঙ্গে অপরিচিত থাকলেও বাউল ধারা ছাড়া অন্য কোনো ধারার সংগীত দ্বারা প্রভাবিত হননি বা ওই ধারায় গান রচনা করেননি। কিন্তু পরে পশ্চিমবঙ্গের তরজা প্রসঙ্গে ভিন্ন কথাও বলেছেন। রবীন্দ্রনাথ কোনো লোকতত্ত্বের গভীরে যাননি, কিন্তু সহমর্মিতা অনুভব করেছেন এবং ‘চকিত বাণী’ রচনা করেছেন এবং তার সুরভঙ্গিও গ্রহণ করেছেন। তার এই আলোচনাগুলো মনে দাগ কাটে বটে, কিন্তু প্রশ্নও সৃষ্টি করে।

এ গ্রন্থের প্রতিটি পর্ব বা অধ্যায়ই সুখপাঠ্য, তবে গানের আলোচনায় তিনি হয়তো জোর দিতে চেয়েছেন। তা চাইলেও আমার বিবেচনায় একাদশতম আলোচনাটি (গৌতম বুদ্ধের প্রতি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের শ্রদ্ধা) যেখানে বুদ্ধের প্রতি কবির অনুরাগের প্রসঙ্গটি এসেছে, সেটিই সর্বশ্রেষ্ঠ এবং পূর্ণাঙ্গ। কবি ব্রাহ্মধর্ম ও রামমোহন রায় এবং খ্রিস্টকে নিয়েও লিখেছেন। কিন্তু বুদ্ধ প্রসঙ্গটি তৌলন বিচারে অধিক গুরুত্ব ও অনুরাগী আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে। লেখকও অধিক মনোযোগ এবং শ্রম ব্যয় করেছেন এই অধ্যায়টিতে। আবার অন্যদিক থেকে ধরলে এ গ্রন্থের দীর্ঘতম আলোচনাটি কিন্তু বিজয়াকে নিয়ে লেখা। বাংলাদেশের রবীন্দ্রভক্ত হিসেবে আমিনুল ইসলাম বেদুর আলোচনাটির ঐতিহাসিক ও মানগত মূল্যও যথেষ্ট বলেই গণ্য। রবীন্দ্র বিষয়ক গ্রন্থে সাধারণত তার চিত্রকলা, উন্নয়ন ভাবনা, শিক্ষা ও স্বদেশ ভাবনা লোককলাপ্রীতি, ছিন্নপত্র এবং কখনো কখনো বিজ্ঞান-চিন্তাকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়। জাতির জনকের প্রসঙ্গটিও এসেছে সেই সূত্রে। এসেছে জন ট্রপ এবং রিগনের প্রসঙ্গটিও। গ্রন্থটিতে এভাবে বিষয় নির্বাচন ও নিবেদনগত একটা কোমলতার স্পর্শ পাওয়া যায়। আমিনুল ইসলাম বেদু রবীন্দ্রপ্রীতিকে আমাদের মধ্যে আবার জাগিয়ে দিলেন। তাকে শ্রদ্ধা জানাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর