শিরোনাম
শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

জিঘাংসা

জয়শ্রী দাস

জিঘাংসা

-আপনার নাম?

-ক্যামিলিয়া চৌধুরী নন্দিনী।

-এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত সবগুলো পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস। ভালো। আপনি লিখিত পরীক্ষা প্রথম হয়েছেন। ভাইভা বোর্ডের সব কর্মকর্তাদের সব প্রশ্নের উত্তরও যথাযথ ভাবে দিতে পেরেছেন। আপনাকে আমরা সিলেক্ট করলাম। ইচ্ছে করলে আজকেই কাজে যোগদান করতে পারেন। নন্দিনী ভেবেচিন্তে যোগদান করল। নন্দিনীর বয়স সাতাশ বছর। সে দেখতে সুন্দরী। মেধাবী এবং বুদ্ধিমান। বর্তমানে চাকরি যেখানে সোনার হরিণ সেখানে নন্দিনী একটার পর একটা চাকরি পেয়ে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত নন্দিনী এই আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে যোগদান করল। সে বিবাহিত ও দুই বছর বয়সী এক পুত্র সন্তানের মা। তার স্বামী তাকে তীব্রভাবে ভালোবাসে। তিনি পেশায় একজন চিকিৎসক। কর্মস্থলে নন্দিনী সব সময় সঠিক সময় উপস্থিত হয়। যতটুক মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায় ততটুকুই সে কাজের প্রতি মনোনিবেশ করে। ধীরে ধীরে অফিসের সবাই তার প্রশংসা করতে লাগল। এ প্রশংসা অনেকের ভালো লাগলো না। প্রতিষ্ঠানটি অনেক বৃহৎ, অনেক লোক এখানে কাজ করে। ছয় তলা করে ছয়টি বিল্ডিং রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। নন্দিনী প্রধান বিল্ডিংয়ের তৃতীয় তলায় বসে। ইতোমধ্যে চার বছর পেরিয়ে গেছে, নন্দিনী এখানে কাজ করছে। বর্তমানে সে সাত মাসের গর্ভবতী। ডাক্তার জানিয়েছেন তার জমজ সন্তান হবে। বর্তমানে নন্দিনীর পদোন্নতির সময়ও হয়েছে। সামনে প্রমোশন বোর্ড। তার এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই। শান্তশিষ্ট নন্দিনী কোনরকম তদবির বা কাউকে অনুরোধ কিছুই করেনি। অফিসের কোনো বিষয়ে তেমন করে সে বাড়ির কারো সাথে শেয়ার করে না।

আজ বৃহস্পতিবার নন্দিনী কাজ শেষে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় হোয়াটসঅ্যাপে একটা ফোন এল। ছেলে ফোন করেছে।

-মা তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমার জন্য কেক নিয়ে আসবে। খেলনা নিয়ে আসবে।

-ঠিক আছে বাবা। আমি আসছি।

-মা ফোন রেখো না। বাবা আর দাদি কথা বলবেন।

সবাইকে একসাথে ভিডিও কলে দেখে খুব ভালো লাগলো নন্দিনীর। সে চুপচাপ মানুষ হলেও হাসিতে তার সব আনন্দ প্রকাশ পায়। নন্দিনী সবাইকে একসাথে বিদায় জানিয়ে ব্যাগটা গুছিয়ে নিচে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অফিস থেকে বাসা মাত্র আধাঘণ্টার পথ। নন্দিনী ড্রাইভারকে ফোন দিল।  ড্রাইভার মনোয়ার প্রায় বার বছর ধরে তাদের সাথে আছে।

-মনোয়ার তুমি নিচে আছো তো?

-আপা দশটা মিনিট অপেক্ষা করেন। আপনার অফিসের এক ড্রাইভার  আমাকে ডেকে নিয়ে আসছে চা খেতে। এখানে একটা গ্যাঞ্জাম লাগছে। আমি আসছি আপা।

শীতকাল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা বেজে গেছে। এমনিতেই একটা মিটিং ছিল অনর্থক সেখানে কয়েকজন মিলে বিকেলে খাবার খেয়ে, হাসি-ঠাট্টা করে অনেকটা সময় নষ্ট করেছে। তার উপর এখন আবার ড্রাইভার আসতে দেরি করছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। নন্দিনী যে তলায় বসে সেটি সম্পূর্ণ খালি সেখানে কেউ নেই।

ড্রাইভার মনোয়ার নন্দিনীর স্বামী ডা. ফারুক চৌধুরীকে ফোন করল তখন প্রায় রাত নয়টা।

-স্যার আপা কোথায়?

-মানে কি?

ফারুক সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় নন্দিনীর সাথে কথা বলার পর বাসায় সাড়ে সাতটা পর্যন্ত তার জন্য অপেক্ষা করে জরুরি একটা ফোন পেয়ে হাসপাতালে চলে আসে। হাসপাতালে ক্রিটিক্যাল রোগী দেখার সময় সে মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখে। যার ফলে দেড় ঘণ্টা সে খেয়ালই করেনি যে বাসা থেকে প্রায় দশ বারের বেশি এবং ড্রাইভার তাকে অসংখ্য বার ফোন দিয়েছে।

-স্যার আপা বললেন আমি নিচে নামছি, আমি অন্য ড্রাইভারের সাথে একটু চা খেতে গিয়েছিলাম। দশ মিনিটের মধ্যে এসে দেখি আপা নাই। আমি তার রুমে যাইয়া দেখি রুম তালা দেওয়া।

ফারুক হতবাক হয়ে গেলেন। কোথায় নন্দিনী? সে চিৎকার করে আশপাশের সবাইকে ডাকল। সে হাসপাতাল থেকে দুই-তিনজনকে নিয়ে প্রথমে নন্দিনীর অফিসে গেল। অফিসের গেটে চারজন দারোয়ান দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যে থেকে একজন বলল, ‘আপাকে তো বাইরে যেতে দেখি নাই।’ মিটিং শেষে অফিসের শেষ মাইক্রোবাসটি বের হয়ে যায়। এরপর কোনো গাড়ি বাইরে যায়নি।

-ঠিক আছে উপরে চলেন।

সবাইকে নিয়ে উপরে গিয়ে ফারুক চৌধুরী দেখল নন্দিনীর রুমে তালা দেওয়া। গেট থেকে চাবি নিয়ে রুমের তালা খোলা হল। রুমের ভেতরে সবকিছু গোছানো পরিপাটি মানুষটা নেই। বারবার নন্দিনীর ফোনে ফোন  করা হচ্ছে। ফোন বন্ধ। সবাইকে নিয়ে বাড়িতে গেল ডা: ফারুক। বাচ্চাটা কাঁদছে।

-বাবা, মা কোথায়?

সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে ফোন করা হলো। কোথাও নেই নন্দিনী। রাত দশটা বাজে। অফিসের দু-একজন বাসায় উপস্থিত হয়েছে। সেই দুই-একজনার মধ্যে একজন বলল, ‘সন্ধ্যায় নন্দিনীর সাথে আমি মিটিং করেছি।’

নন্দিনীর ছেলেটি ঘুমিয়ে পড়েছে। ডা. ফারুকের মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে ‘আমার বউমা কোথায়? পোয়াতি মানুষটা কতক্ষণ কিছু খায় নাই। আমার মা আমার মা।’

সব সম্ভাব্য জায়গায় খোঁজা  শেষে রাত বার টায় থানায় জিডি করা হলো। পুলিশ নিয়ে আবার অফিসে যাওয়া হল। সব অফিস তন্নতন্ন করে খুঁজেও নন্দিনীর কোন অস্তিত্ব পাওয়া গেল না।

রাত চারটায় ডা. ফারুক বাসায় ফিরলেন। বাড়ির সব বাতি জ্বলছে তার মা সোফার উপর কাত হয়ে পড়ে আছেন। তার বোন মায়ের পায়ের কাছে বসে আছে। সাজানো গোছানো সংসারটি ঘণ্টার ব্যবধানে এলোমেলো হয়ে গেল। ড্রাইভার মনোয়ারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। তার কথার মধ্যে অসঙ্গতি পাওয়া যাচ্ছে। দশ থেকে পনেরো মিনিটের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে মনোয়ার বলল, ‘স্যার আমাকে আপা যখন ডাকলেন তার আগে অফিসের একটা ড্রাইভার আমাকে বলল -চল আমরা একটু বাইরে নাস্তা করে আসি। আমরা দুজন সামনের হোটেলে নাস্তা করতে গেলাম। ওই ড্রাইভার এর ডিউটি শেষ, সে খুব হালকা মেজাজে ছিল। আমাকে অনেক কিছু খাওয়ালো। খাওয়ার মাঝখানে আপা ফোন করলেন আমি বললাম দশ মিনিটের মধ্যে আসছি। সবশেষে চা খাওয়ার পর ওই ছেলে বিল দিতে গিয়ে দেখে তার মানিব্যাগ নেই। ওই ড্রাইভারের নাম ছিল মোতালেব। সে উঠে গিয়ে ওই দোকানের ম্যানেজারকে চিৎকার করে বলল, আমার মানিব্যাগ কোথায়?

ম্যানেজার বললেন- আমি কি করে জানবো কোথায়? তখন মোতালেব বলে দুই দিন আগে আমাদের অফিসের আরও এক জন ড্রাইভারের মানিব্যাগ তোদের এখান থেকে হারিয়েছে। তোরা চোর। এইটা বলে ম্যানেজারের জামার কলার ধরে মারতে গেল। এভাবে ঝগড়ায় প্রায় আধাঘণ্টা চলে যায়। এরপর আমার কাছে যা টাকা ছিল তাই দিয়ে খাবারের বিল দেই এবং আমি অফিসে চলে আসি । আর ওই ড্রাইভার বাসায় চলে যায়। অফিসে এসে দেখি অফিসের যে মাইক্রোবাসটি আমি দেখে গিয়েছিলাম সেটিও নেই। আপার ফোনে ফোন দিই কিন্তু সে ফোন ধরে না। এরপর আপনারা সব জানেন।’

তিন দিন হয়ে গেল নন্দিনীর কোন খোঁজ নেই। ডা. ফারুক পাগল প্রায়। সব সংবাদ পত্রে ফলাও করে নন্দিনীর নিখোঁজ সংবাদ ছাপা হয়েছে। টেলিভিশনে বারবার দেখাচ্ছে নিখোঁজ নন্দিনীর ছবি। পুলিশ আজ আবার নন্দিনীর অফিসে গেল। হঠাৎ এক পুলিশ অফিসারের নন্দিনীর টেবিলের নিচে রাখা ছোট্ট একটি ময়লার ঝুড়ির দিকে চোখ গেল। তিনি খুব অবহেলা করে সেটির দিকে তাকালেন অল্প কয়েক টুকরো কাগজ পড়ে আছে সেটিতে।

 টুকরো কাগজগুলো নিয়ে পুলিশ অফিসার জোড়া লাগালেন। সেখানে নন্দিনী লিখেছে, ‘তিনজন সিনিয়র আমার সাথে এত খারাপ আচরণ করলো যা আমার বুকের বাম পাশে তীব্র যন্ত্রণার তৈরি করেছে, তাদের এক কথা তুমি আমাদের বয়সে ছোট আমাদের বাদ দিয়ে তোমার কেন প্রমোশন হবে আমি যখনই বললাম, এটা তো আমার ডিপার্টমেন্টাল প্রমোশন। আপনাদের ডিপার্টমেন্টের তো না। তারা তখন আমাকে মারতে এল। এতটা হিংস্র তাদের চেহারা।’

এটা লিখে নন্দিনী এই কাগজ আবার টুকরো করে ফেললো তার মানে সে কাউকে এ বিষয়ে জানাতে চায়নি।

পুলিশ অফিসার এরপর গেটের দারোয়ানকে ডাকলেন। সে বলল, ‘স্যার সেদিন হঠাৎ ভোল্টেজ আপডাউন করার জন্য হয়তো সার্কিট ব্রেকার পড়ে যায়, প্রথমে মনে হয়েছে সাধারণভাবে বিদ্যুৎ চলে গেছে। আমরা তখন এই বিল্ডিংয়ের থেকে বেশ খানিকটা দূরে আমাদের অফিসের মেইন গেটে অন্ধকারের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। সেই অন্ধকারের মধ্যেই অফিসে থাকা   মাইক্রোবাসটি চলে যায় । আমি কিছুক্ষণ পর যখন দেখি বিদ্যুৎ আসে না। তখন উপরে এসে দেখি বৈদ্যুৎতিক সার্কিট ব্রেকার পড়ে গেছে। স্যার আপাকে খুঁজে বের করেন। তিনি খুব ভালো মানুষ।’

পুলিশ একটা বিষয় নিশ্চিত যে, পরিবার, অফিস, ড্রাইভার, দারোয়ান সবার কাছে অত্যন্ত ভালো ও প্রিয় একজন মানুষ ছিল নন্দিনী। পরিবার থেকে জানানো হয় নন্দিনী কোনদিন দেরি করে অফিস থেকে ফেরেনি কিংবা অফিসের পর সে কোনো দিনই বাসায় না বলে কোথাও যায়নি।

দু-তিনদিন পর পুলিশের কাছে ফোনে এলো নন্দিনীর অফিসের পাশে একটা পরিত্যক্ত  নির্মাণাধীন ভবনের জায়গা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পুলিশ সেখান থেকে বস্তাবন্দি অবস্থায় গলিত ও মৃত নন্দিনীকে উদ্ধার করে। এখানে শুধুমাত্র নন্দিনীর লাশ নয় তার গর্ভে সাত মাস বয়সী সন্তান ছিল সেও আজ লাশে পরিণত হয়েছে। হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হলো যখন নন্দিনীর লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলো। কাঁদছে সম্পূর্ণ অফিস, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, কাঁদছে প্রিয়তম স্বামী।

এবার যারা তিনজন নন্দিনীর সাথে শেষ পর্যন্ত ছিল তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হল ?। একজন সিনিয়র অফিসার নম্র-ভদ্র নামাজী, অন্য দুই জন মাঝবয়সী দেখতে শুনতে ভাল ও স্বাস্থ্যবান। তিনজনার নাম যথাক্রমে মো. মাহাবুবুর রহমান, দেবব্রত সূত্রধর এবং মো. করিম মিয়া । পুলিশ নন্দিনীর এক নারী সহকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করে , ‘তিনি বলেন অনেকদিন যাবত এই তিনজন নন্দিনীকে বিরক্ত করে আসছে। এমন কি দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনে এরা তিনজন বিভিন্নভাবে কুপ্রস্থাব দেয় নন্দিনীকে । নন্দিনী ছিল সৎ, আর্দশবান একজন মানুষ । তার বাহ্যিক সৌন্দর্যও ছিল খুবই ভাল। সেবার বিদেশে প্রশিক্ষনে গিয়ে করিম মিয়া নেশায় টালমাটায় হয়ে নন্দিনীর রুমে ঢোকার চেষ্টা করে। নন্দিনী এমডিকে জানিয়ে দেবে বলে হুমকি দেয়। এরপর অনেকবার আমার ও নন্দিনীর সামনে এই লোক মাফ চায়। শেষের দিন মিটিং এ আমি ছিলাম। ওরা তিনজন কেন জানিনা নন্দিনীর কাছে মাফ চাচ্ছিলো । ওরা চারজন বাদে আমিসহ সবাই ছয়টায় অফিসের গাড়িতে বাড়ি চলে আসি।’

অনেকদিন যাবত পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে কিন্তু কোন কিছু স্বীকার করে না ওই তিনজন। এরপর তিনজনকে আদালতে উপস্থিত করে রিমান্ডে নিয়ে আসা হয়। রিমান্ডে নিয়ে আসা পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনার মধ্য প্রথমেই করিম মিয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়া শুরু করে, ‘আমরা তিনজন নন্দিনীর চেয়ে বয়সে বড় এবং উচ্চ শিক্ষিত কিন্তু সবাই পছন্দ করে নন্দিনীকে । তার নাকি অনেক গুণ। সে যে ডিপার্টমেন্টে কাজ করে সেখানে প্রমোশন যোগ্যপদ আসে। তখন আমাদের ভীষণ রাগ হয় আমরা তিনজন মিলে অফিসের সবার কাছে তার সম্পর্কে বাজে কথা বলতে থাকি কিন্তু কেউ আমাদের সমর্থন করে না। আমরা তাকে ডেকে নেই এবং বলি যে তোমার ডিপার্টমেন্টের পদ হলেও আমরাও ওই পদগুলোতে আমাদের পদোন্নতি নেবো। তুমি শুধু চুপ করে থাকবে তোমার পদ তো ছাড়বেই আর অন্য পদগুলোর বিষয় মুখ খুলবে না। কিন্তু নন্দিনী শক্তভাবে বলে আমি কোনো অনিয়ম সমর্থন করব না। আমার ভীষণ রাগ হয়। রাগে আমি তাকে মারতে যাই। প্রথম থেকেই সবাই এই মেয়েটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। সব কাজেই এ মেয়ে। আবার সে গর্ভবতী। আমি কোন গর্ভবতী মহিলাকে সহ্য করতে পারি না। আমার স্ত্রীর বেলায় তাকে বাবার বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম। নন্দিনী রাগী মুখ আর তার পেট দুটোই আমার এবং আমাদের তিনজনের ঘৃণার কারণ। আমরা সুযোগ খুঁজি এবং পরিকল্পনা করি। সিসি ক্যামেরা অফিসের গেট বা অন্য স্থানে থাকলেও নন্দিনী মেইন অফিসের যে বিল্ডিং বসে সেটির গেটে কিংবা এর ভেতর কোন সিসি ক্যামেরা নেই। আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী আমরা তিনজন নন্দিনীর কাছে মাফ চাইলাম এবং বললাম দয়া করে আমাদের সঙ্গে একটু বিকেলের খাবার খাওয়ার জন্য। এমন সময় খাবার আয়োজন করলাম যখন অফিসের সব মানুষ চলে যায়। খাবার-দাবার হলো হাসি-ঠাট্টা হলো। একটা ড্রাইভারকে দিয়ে নন্দিনীর ড্রাইভারকে পাঠিয়ে দিলাম নাস্তা করার জন্য। সেই ড্রাইভারকে আগেই বুঝিয়ে দিলাম অন্ততপক্ষে তিরিশ চল্লিশ মিনিট যেন তাকে ওই দোকানে আটকে রাখে এবং আমরা সংকেত দেয়ার পরে যেন চলে আসে। খাবার শেষে নন্দিনী তার রুমে গেল ব্যাগ আনতে। আমরা খুব আস্তে ধীরে তার পেছনে পেছনে গিয়ে তার ঠিক পেছনে একটু দূরে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে রইলাম। সে মোবাইলে কথা বলছিলো। কথা শেষ হবার সাথে সাথেই আমি একটি গামছা দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে দিলাম এবং মৃত্যু নিশ্চত করলাম। অন্য দুইজন তাকে বস্তা বন্দী করল। এরপর সার্কিট বন্ধ করে দিলাম। আমরা তিনজন মিলে অন্ধকারের মধ্যে নন্দিনীর দেহটি নিচে নামিয়ে নিয়ে আসলাম। অফিসের একটি গাড়ি আগেই তৈরি ছিল। আমরা তিনজন মিলে লাশটি গাড়িতে উঠালাম। আমরা গিয়ে লাশটি আগে যে জায়গা নির্দিষ্ট করাছিলো সেখানে ফেলে দিয়ে আসলাম। এরপর অফিসের সবাই যখন  নন্দিনীকে খুঁজতে লাগল তখন তার বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে আসলাম। আমাদের অফিসের গাড়ি ড্রাইভার এবং যে ড্রাইভার মনোয়ারকে নিয়ে গেল প্রত্যেকে তিরিশ  হাজার টাকা করে দিলাম। স্যার নন্দিনী খুব ভালো মেয়ে ছিল অসম্ভব মায়াবতী। আমরা ভয়ঙ্কর অন্যায় করেছি।’

এই ঘৃন্য অপরাধের প্রায় এক বছর ছয় মাস পর বিচারকের রায় তিনজন অফিসারের ফাঁসি হলো এবং ড্রাইভারদের যাবজ্জীবন কারাদন্ড। কিন্তু নন্দিনীর পরিবারের কান্না এক মুর্হূতের জন্য থামনি, হয়তো থামবে না কখনো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর