শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

শামসুর রাহমানের অপ্রকাশিত কবিতা

শামসুর রাহমানের অপ্রকাশিত কবিতা

হৃদয়ে হাহাকার

আচ্ছা যদি আজ এখানে বসে পড়ি,

ঝিমোই কিছুকাল, তবে কি ক্ষতি হবে?

একটু বিশ্রাম এখানে বটমূলে,

কেই বা আপত্তি করবে এই ভবে?

 

রুক্ষ পথে ঘাটে ঘুরেছি বিস্তর

জুটেছে কাদাবালি এবং কিছু ছাই।

এখন অন্তত মুক্ত হাওয়া আর

মাঠের মনোরম সবুজ ঢেউ চাই।

 

আমার কোথাও কি হবেই পৌঁছুতে?

কোথায় সে ঠিকানা, অজানা আজও রয়।

তাহলে মাথা পেতে ছায়ায় শুনি বাঁশি

অজানা সেই পথে, যেতেই যদি হয়।

 

 

 

 

আমার বাবার ঘর

কালেভদ্রে ভাবতে ভালোই লাগে, আজও কোনওখানে

বাবার একটি ঘর আছে; কিন্তু জানি না কোথায়

কোন্ সীমা-সরহদে। সেই ঘরে তাঁর আচকান,

রুমি কিংবা মখমলী গোল টুপি, কোরান শরিফ

অথবা জায়নামাজ, তসবিহ, হলুদ পঞ্জিকা-

বস্তুত কিছুই নেই, আছে শুধু শূন্যতার ধু ধু মৃগতৃষা।

 

সে ঘরের আশপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও

পাড়াতলী গাঁয়ের সবুজ, বাঁশঝাড়, মসজিদ,

প্রসন্ন পুকুর, কিছুই তো পাবেন না সব’চে ধীমান

পর্যটক। ঢাকা শহরের হাই-রাইজ দালান,

সুপার মার্কেট কিংবা বুড়িগঙ্গা নদীও নজরে

তার পড়বে না আর প্রিন্টিং প্রেসের অনস্তিত্ব

অকূল শূন্যতাকেই অধিক প্রখর

করে তুলে পরাবাস্তবের ঘোরময় বিভ্রমের দিকে নেবে।

 

বাবার সে-ঘরে নেই জননী আমার,

জনক নিজেও নেই কোনও রূপে; অনুরূপ ঘর

একদিন নিশ্চিত আমারও হবে, কিন্তু কেউ কারও

পড়শি হব না কোনওকালে, হবে না কখনও দেখা।

স্বপ্ন কি দুঃস্বপ্ন নেই, নাস্তির ভুবনে

ধূলিকণা, শুধু ধূলিকণা।

২১-০৪-৯৮

সর্বশেষ খবর